সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের কিশোরীদের নেপাল জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশের কিশোরীদের নেপাল জয়

এমন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস তো হবেই। নেপালের মাটিতে নেপালকে হারিয়ে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ —এএফপি

২৫ এপ্রিল মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কৃষ্ণা, সানজিদারা। শুধু নির্দেশনার অপেক্ষা! ঠিক তখনই দুলে উঠে নেপাল আর্মি স্টেডিয়াম। মনে হলো কেউ যেন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চাচ্ছে! এরপর মাঠের এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণা, মৌসুমি, সানজিদারা দেখলেন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে সব কিছু। বিস্মিত না হয়ে ভয়ে কুঁকড়ে পড়েন সবাই। ভয় তাড়াতে একে অপরকে জড়িয়ে বসে পড়েন মাঠের কোণায়। কোচ, কর্মকর্তারা সাহস জোগাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৩-১৪ বছরের কিশোরীরা মুহূর্তটিকে জয় করতে পারেননি। বরং আরও ভীত হয়ে কুঁকড়ে পড়ছিলেন। বেশ অনেকটা সময় পার হওয়ার ধাতস্থ হয়েছেন কৃষ্ণারা এবং প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন মাঠে নামার। তখনই এএফসি কর্তাব্যক্তিরা জানান, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক ফাইনালটি হচ্ছে না। ভূমিকম্পের ভয়াবহ তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে গোটা কাঠমান্ডু। ওই ভূমিকম্পে স্থগিত হয়ে পড়ে আঞ্চলিক ফাইনালটি। জীবন স্বাভাবিক হয়ে আসার পর এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের তারিখ নির্ধারণ করে এবং কাল ছিল সেই আকাঙ্ক্ষিত ফাইনাল। নেপাল শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের মাঠে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা ফুটবল দল। আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হতে কৃষ্ণা বাহিনী ১-০ গোলে হারায় স্বাগতিক নেপাল অনূর্ধ্ব-১৪ দলকে।       

দলটি বাংলাদেশ জাতীয় দল। আশ্চর্য হলেও সত্যি, দলটির ১৮ সদস্যের ১০ জনই এক এলাকার, এক গ্রামের। ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত অঞ্চল কলসিন্দুরের বাসিন্দা এই ১০ জন। তাই আড়ালে আবডালে কলসিন্দুর দলও বলা হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৪ জাতীয় দলকে। বাকিদের কেউ টাঙ্গাইল, কেউ সাতক্ষীরা, কেউবা রাজশাহী, কিংবা রাঙামাটির। তারপরও দলটিকে ঘিরে কলসিন্দুর গ্রাম অপেক্ষায় ছিল প্রিয় কন্যাদের ফল জানতে। সাফল্যের সংবাদ জানার পর উত্সব, উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে পুরো গ্রামবাসী এবং মিষ্টিমুখ করায় একে অপরকে।

 

আট মাস আগে ফাইনালটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমিকম্পের ভয়াবহতায় স্থগিত হয়ে পড়ে। তবে অনুশীলন বন্ধ ছিল না দলটির। কোচ ছোটনের তত্বাবধানে আরও শানিত হয়েছে। আরও ধারালো হয়েছে দল। সেই তেজ নিয়ে কাল ফাইনালে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক দলের। শিরোপা জিততে মরিয়া বাংলাদেশের কিশোরীরা শুরু থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাগতিক দলের উপর। সাঁড়াশি আক্রমণে বিপর্যস্ত করে তোলে প্রতিপক্ষকে। অবশেষে ১৬ মিনিটে কৃষ্ণারা দেখা পায় স্বপ্নের সেই গোলের। বাঁ প্রান্ত থেকে মারিয়া জোরালো শটে পরাস্ত করেন নেপালের গোলরক্ষককে (১-০)। এগিয়ে যাওয়ার পর আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি। যদি অধিনায়ক কৃষ্ণারাণী প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে একা পেয়ে গোল করতে পারলে ব্যবধানটা আরও বড় হতো। কিন্তু হয়নি। প্রথমার্ধের আক্রমণের ধার দ্বিতীয়ার্ধেও ছিল। কিন্তু গোল পায়নি বাংলাদেশ। অবশেষে ১-০ গোলের ব্যবধানেই ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজান রেফারি। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই আনন্দে মেতে উঠেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ দলের ফুটবলারা।

ভূমিকম্পে ফাইনাল হতে পারেনি। তবে এপ্রিলের ওই টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছিলেন ছোটনের শিষ্যারা। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ১৬-০ গোলে হারায় ভুটানকে। পরের ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে। সেমিফাইনালে টুর্নামেন্টের ফেবারিট শক্তিশালী ইরানকে ২-০ গোলে হারিয়ে জায়গা নেয় ফাইনালে। নেপাল ফাইনালে উঠে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে।

তিন দিন আগে ঘরের মাঠে নেপাল জাতীয় ফুটবল দলকে ১-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ ফুটবল দল। জাতীয় পুরুষ দলের এই পারফরম্যান্সই আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে কৃষ্ণা, মারিয়াদের হিমালয় জয় করতে।  

 

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪

শামসুন্নাহার, রুমা, নার্গিস, শিউলি, সানজিদা, মৌসুমী,

কৃষ্ণা (অধিনায়ক), মার্জিয়া, স্বপ্না, মারিয়া ও তাসলিমা

 

বাংলাদেশ ১ : ০ নেপাল

সর্বশেষ খবর