বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাফ ফুটবলের পর্দা উঠছে আজ

রাশেদুর রহমান

সাফ ফুটবলের পর্দা উঠছে আজ

কেরালায় শুরু হচ্ছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। গতকাল সাত দলের অধিনায়ক ও কোচ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। এরপর ভারতীয় ফুটবল সংস্থার উদ্যোগে তাদের ফটো সেশনও করা হয় —বাফুফে

জনপ্রিয়তা থাকলেও দক্ষিণ এশিয়া ফুটবলে বেশ পেছনে পড়ে আছে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দেশগুলোর অবস্থান তলানিতে। এশিয়ান ফুটবলেও কারও পাত্তা মিলছে না। বড় কোনো ট্রফি জেতার সামর্থ্য নেই। একমাত্র সাফ চ্যাম্পিয়নশিপই ভরসা। তাই সার্ক অঞ্চলে এ টুর্নামেন্ট দেশগুলোর কাছে বিশ্বকাপের মতোই।  ভারতের কেরালায় এবারে আসর বসছে। ত্রিভূবন স্টেডিয়ামে আজ নেপাল-শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্টের পর্দা উঠছে। ‘এ’ গ্রুপে ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল। ‘বি’ গ্রুপে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও ভুটান খেলবে। আরেক শক্তিশালী দল পাকিস্তান এবার সাফ ফুটবল খেলছে না। ১৯৯৫ সালে শ্রীলঙ্কায় সার্ক ফুটবল নামকরণে আসরের সূচনা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে নাম বদলে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ রাখা হয়। সর্বোচ্চ শিরোপা জেতার রেকর্ড ভারতের। পরে এসে আফগানিস্তানও দুবার চ্যম্পিয়ন হয়েছে।  প্রতিটি আসরে বাংলাদেশ ফেবারিট হয়ে মাঠে নামলেও শিরোপা জিতেছে মাত্র একবার। ২০০৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আসরে ফাইনালে মালদ্বীপকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর ফাইনালে খেললেও এক যুগ ধরে ট্রফি জেতা সম্ভব হচ্ছে না। সামান্য সাফ জেতাটাই যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

ক্রিকেটে একের পর এক সাফল্য আসলেও ফুটবল ব্যর্থতায়ই বন্দি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোনোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। আলোর মুখ দেখতে সাফ জেতাটা বাংলাদেশের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। ঢাকা ছাড়ার আগে কোচ মারুফুল হক ও অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম দৃঢ় কণ্ঠে বলে গেছেন লক্ষ্য তাদের একটাই শিরোপা। সত্যি বলতে কি ট্রফি জেতার সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। কিন্তু অতীত ব্যর্থতা বলে যত ভয়। তবে বর্তমান ও অতীতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আগে কোনোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে সাফে নামা হতো। এবারের প্রস্তুতি পুরোপুরি আলাদা। কোচ মারুফ টানা ২০ দিন শিষ্যদের অনুশীলনে রাখেন। আন্তর্জাতিক ও লোকাল ফুটবলে বছরব্যাপী মাঠেই রয়েছেন মামুনুলরা। এরপর আবার এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও জর্ডান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে লড়াই করেছে। ফলাফল সুখকর নয়। কিন্তু অভিজ্ঞতা ও ভুলত্রুটির শোধরানোর সুযোগ পেয়েছেন ফুটবলাররা। মামুনুল নিজেই বলেছেন, এ অভিজ্ঞতা সাফে কাজে লাগানো যাবে।

এমন প্রস্তুতির পরও বাংলাদেশ পারবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। টার্গেট শিরোপা। অথচ গ্রুপেই মামুনুল হেমন্তদের কঠিন লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে হবে। আগামীকাল বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ২৬ ডিসেম্বর মালদ্বীপ ও ২৮ ডিসেম্বর গ্রুপের শেষ ম্যাচে দেখা হবে ভুটানের সঙ্গে। ভুটানের বিপক্ষে জয়ে আশা করা গেলেও দুশ্চিন্তা আফগানিস্তান আর মালদ্বীপকে নিয়েই। প্রতিপক্ষ হিসেবে দুদল শক্তিশালী। বিশেষ করে আফগানিস্তানকে আসরের টপ ফেবারিট বললেও ভুল হবে না। বর্তমানে তারা চ্যাম্পিয়ন দল। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সাফ অঞ্চলে এগিয়ে আফগানরা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ হয়েও কঠিন পরিশ্রম ও সাধনা করে ফুটবলে উপরে উঠে আসছে। তাদের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে বেশ কজন ফুটবলার বিদেশি লিগ খেলে থাকেন। প্রতিটি পজিশনে আস্থা রাখা যায় এমন খেলোয়াড় দলে রয়েছেন। কোচ মারুফ বলেছেন ‘প্রথম ম্যাচটিকেই আমি গুরুত্ব দিচ্ছি। আফগানিস্তানকে হারাতে পারলে শুধু সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে না। পরবর্তী ম্যাচেও আত্মবিশ্বাস জোগাবে।’

আফগানিস্তান যতই শক্তিশালী দল হোক না কেন মামুনুলরা যদি সেরা খেলাটা খেলতে পারেন তাহলে জয়লাভ করা মোটেই কষ্টকর হবে না। ২০১০ সালে ঢাকায় এস এ গেমস ফাইনালে আফগানিস্তানকে ৪-০ গোলে হারিয়ে সোনা জয় করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে এশিয়ান গেমসের গ্রুপের উদ্বোধনী ম্যাচেও আফগানদের ধরাশায়ী করে মানুনুলরা। সুতরাং ভালো খেললে জয় দিয়ে সাফ শুরু করা যাবে। গত দুই আসরে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নেন মামুনুল-এমিলিরা। সেটা লক্ষ্য রেখেই বাংলাদেশকে বুঝেশুনে খেলতে হবে। গোটা দেশ চেয়ে থাকবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে। দেশবাসীর প্রত্যাশা এবার দল ভালো করবে। চ্যাম্পিয়ন হলে ফুটবল নতুনভাবে জেগে উঠবে। হারলে ফুটবলকে ঘিরে আগ্রহটা আরও কম যাবে। ফাইনাল ৩ জানুয়ারি। এদিনই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে সাফের শিরোপা। কিন্তু ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বরের দুই ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিরোপার পথে এগুবে না ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি ঘটবে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে ২৬ ডিসেম্বরই।

-

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান মুখোমুখি আগামীকাল

সাফের ফিকশ্চার

২৩ ডিসেম্বর   :    নেপাল-শ্রীলঙ্কা

২৪ ডিসেম্বর   :    মালদ্বীপ-ভুটান

২৪ ডিসেম্বর   :    বাংলাদেশ-আফগানিস্তান

২৫ ডিসেম্বর   :    ভারত-শ্রীলঙ্কা

২৬ ডিসেম্বর   :    বাংলাদেশ-মালদ্বীপ

২৬ ডিসেম্বর   :    আফগানিস্তান-ভুটান

২৭ ডিসেম্বর   :    ভারত-নেপাল

২৮ ডিসেম্বর   :    বাংলাদেশ-ভুটান

২৮ ডিসেম্বর   :    আফগানিস্তান-মালদ্বীপ

৩১ ডিসেম্বর   :    প্রথম সেমিফাইনাল

৩১ ডিসেম্বর   :    দ্বিতীয় সেমিফাইনাল

০৩ জানুয়ারি   :    ফাইনাল

প্রতিটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার স্টার স্পোর্টস ফোরে

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর