বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কেমন হলো টাইগারদের প্রস্তুতি

টি-২০ বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ— সীমিত ওভারের দুই বড় টুর্নামেন্টের আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগটা ছিল ক্রিকেটারদের জন্য একটা প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট। ঘরের মাঠে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে টাইগাররা যেন নিজেদের শক্তিমত্তা ঝালাই করে নিতে পারেন। কেন না কিছুদিন পর এই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই অনুষ্ঠিত হবে টি-২০ এশিয়া কাপের আসর। কিন্তু বিপিএলে কেমন হলো বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি! প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন মেজবাহ্-উল-হক

 

 

সাকিব আল হাসান 

বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব আল হাসান। টি-২০র সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও বটে। কিন্তু বিপিএলে খুব ভালো করতে পারেননি সাকিব। যদিও ১১ ম্যাচে ১৮টি উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ১৩৬ রান। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীরা সাকিবের কাছ থেকে যত বেশি আশা করেন ততটা দিতে পারেননি। তারপরেও কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে খেলতে নেমে ভালোই করেছেন। তবে বিপিএল যেমনই হোক এশিয়া কাপে ও বিশ্বকাপে সাকিবের দিকেই তাকিয়ে থাকবে গোটা দেশ।

তামিম ইকবাল

এবারের বিপিএলে দারুণ খেলেছেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল। তার দল চিটাগং ভাইকিংস প্লে-অফে উন্নীত হতে না পারায় তিনি ৯ ম্যাচের বেশি খেলতে পারেননি। তবে এই ৯ ম্যাচেই ৩৭.২৫ গড়ে করেছেন ২৯৮ রান। আসরে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। তামিমই একমাত্র ব্যাটসম্যান যারা তিনটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে এবারের আসরে। তাছাড়া গ্রুপ পর্ব পর্যন্ত  শীর্ষ রান সংগ্রাহক ছিলেন তামিম।

মুশফিকুর রহিম

বিপিএলে সময়টা ভালো যায়নি ‘দ্য ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিমের। ২২ গজে তার ব্যাট হাসেনি নিয়মিত। অধিনায়ক হিসেবেও ব্যর্থ। তবে উইকেটের পেছন দারুণ সফল এই উইকেটরক্ষক। গ্লাভস বন্দী করেন সর্বোচ্চ ১১টি ক্যাচ। ১০ ম্যাচ খেলে ৯ ইনিংসে ব্যাট করে মুশফিক রান করেছেন ১৫৭। গড় ২৬.১৬ রান মাত্র।

মাশরাফি বিন মর্তুজা

মাশরাফি এক আত্মবিশ্বাসের নাম। অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে কতটা সফল তা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে চ্যাম্পিয়ন করে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আগের দুই আসরেও ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সকে শিরোপা এনে দিয়েছিলেন ম্যাশ। তবে এবারের আসরে এক ম্যাচে ব্যাট হাতেও হাফ সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জেতানোর ক্যারিশমা দেখিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। যদিও বোলিংয়ে ততটা উজ্জ্বল ছিলেন না তিনি। তাছাড়া মাশরাফির সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে ইনজুরি। এশিয়া কাপে সম্পূর্ণ ফিট মাশরাফিকে পেলে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনাও থাকবে উজ্জ্বল।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ

ভালোই করেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। নিয়মিত রান পেয়েছেন। এবারের বিপিএলে ২৭.৯০ গড়ে ২৭৯ রান করেছেন। তবে নেতৃত্বে চমক দেখিয়েছেন ময়নসিংহের এই তারকা ক্রিকেটার। তার দল বরিশাল বুলসকে তুলেছিলেন ফাইনালে। মিডল অর্ডারে রিয়াদকে ব্যাটিং করতে হয়েছে ধৈর্য্য নিয়ে। এই অভিজ্ঞতা পরের আসরে কাজে লাগবে তার।

ইমরুল কায়েস

বরাবরই টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে ইমরুল কায়েসের পরিচিত। সেই ধীরগতির ইমরুল এবার বিপিএলে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করে নিজের টি-২০ সামর্থ্য বুঝিয়ে দিলেন। ১২ ম্যাচে ইমরুল ২৮.৩৬ গড়ে করেছেন ৩১২ রান। দুটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার।

সৌম্য সরকার

টি-২০তে এসে সুবিধা করতে পারেননি জাতীয় দলের ড্যাসিং ওপেনার। ১২ ম্যাচ খেলে করেছেন মাত্র ১৭৭ রান। স্ট্রাইকরেট খুব বেশি নয়। তবে একটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। সৌম্য ওয়ানডেতে মারকুটে ব্যাটিং করলেও কেন যেন এখনো টি-২০র সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না।

সাব্বির রহমান

বিপিএলে শুরুর দিকে একদমই ফ্লপ ছিলেন বাংলাদেশের মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু প্লে-অফের দুই ম্যাচে তিনি অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন। বিশেষ করে হঠাত্ গেইল চলে যাওয়ার পর কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সের বিরুদ্ধে সাব্বির যে ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিং করেছেন তা ভোলার নয়। তার এক একটি ছক্কা গিয়ে পড়েছিল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। টুর্নামেন্টের শেষ মুহূর্তে সাব্বিরের ফর্মে ফেরাটা খুবই ইতিবাচক জাতীয় দলের জন্য।

নাসির হোসেন

লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খারাপ করেননি নাসির হোসেন। ১১ ম্যাচে ব্যাটিং করে করেছেন ১৯৩ রান। বল হাতেও নিয়েছেন ৬ উইকেট। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে নাসির পঞ্চম।

আল আমিন

বিপিএলে বাংলাদেশের একমাত্র হ্যাটট্রিক ম্যান পেসার আল আমিন। সব মিলে উইকেট নিয়েছেন ১৭টি। দুঃস্বপ্নকে অতীত করে আবারও নতুন করে আগ্রাসী হয়ে উঠছেন এই পেসার। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর কেন যেন আর ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না আল আমিন। তবে বিপিএলে দাপটের সঙ্গেই বোলিং করেছেন। 

আরাফাত সানি

ঘূর্ণিতে চমক দেখিয়েছেন স্পিনার আরাফাত সানি। নিয়েছেন ১৬ উইকেট। এশিয়া কাপেও তার ওপর থাকবে অনেক দায়িত্ব। কেননা সাকিব আল হাসানের পর তিনিই স্পিনে বাংলাদেশের বড় ভরসা।

মুস্তাফিজুর রহমান

কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান নিয়েছেন ১৪ উইকেট। তবে বিপিএলেও তার বল খেলতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। বিপিএলে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানরা মুস্তাফিজকে সবচেয়ে বেশি মার্কিংয়ে রাখার কারণে আশানুরূপ উইকেট পাননি তিনি। তবে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দলের বোলিং লাইনআপে প্রধান ভরসাই এই সাতক্ষীরার সুপারম্যান।

আবু হায়দার রনি

এবারের বিপিএলে সবচেয়ে বড় চমকের নাম আবু হায়দার রনি। এখনো জাতীয় দলে অভিষেক হয়নি, কিন্তু ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ ক্রিকেটার বিপিএলে বড় তারকা। ২১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। এশিয়া কাপেও জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা রনির জন্য যেন এখন সময়ের ব্যাপার হয়ে গেছে।

জহুরুল ইসলাম অমি

বিপিএলে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গড় ছিল জহুরুল ইসলাম অমির। তিনি ৪১ গড়ে করেছেন ২০৫ রান। এক সময় জাতীয় দলে নিয়মিত ওপেনার ছিলেন অমি। কিন্তু ইনজুরি ও বাজে ফর্মের কারণে দল থেকে বাদ পড়ে আর ফিরতে পারেননি। তবে বিপিএলের পারফরম্যান্স আবার আশা জাগাচ্ছে অমিকে।

এছাড়া বাংলাদেশের দুই গতি তারকা রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ ইনজুরির কারণে বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি। রুবেল ৬ ম্যাচ খেলে পেয়েছেন ৪ উইকেট, তাসকিনও ৭ ম্যাচে পেয়েছেন ওই ৪ উইকেট। 

 

বিপিএলে সেরা ৫ বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান

খেলোয়াড়          দল   রান   ম্যাচ   সবোর্চ্চ গড়   ১০০/৫০

ইমরুল কায়েস  কুমিল্লা ৩১২  ১২   ৬৭   ২৮.৩৬ ০/২

তামিম ইকবাল চট্টগ্রাম ২৯৮  ৯    ৬৯   ৩৭.২৫ ০/৩

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ     বরিশাল ২৭৯  ১৩   ৫১   ২৭.৯০ ০/২

জহুরুল ইসলাম অমি   রংপুর  ২০৫  ৯    ৬২*  ৪১.০০ ০/১

নাসির হোসেন  ঢাকা  ১৯৩  ১১   ৩৩   ১৯.৯ ০/০

 

বিপিএলে সেরা ৫ বাংলাদেশি বোলার

খেলোয়াড়          দল   উইকেট ম্যাচ   সেরা বোলিং   ইকোনমি

আবু হায়দার রনি     কুমিল্লা ২১   ১২   ৪/১৯ ৬.৯১

সাকিব আল হাসান     রংপুর  ১৮   ১১   ৪/১৬ ৬.৩৯

আল আমিন         বরিশাল ১৭   ১৩   ৫/৩৬ ৭.৯৩

মোশাররফ হোসেন    ঢাকা ১৬   ১০   ৪/১৬ ৬.১১

আরাফাত সানি রংপুর  ১৬   ১১   ৪/১৪ ৬.৫৫

সর্বশেষ খবর