বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের যাত্রা আজ

কেরালা থেকে — রাশেদুর রহমান

বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের যাত্রা আজ

শক্তিশালী প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে লড়াই। মাঠে নামার আগে গতকাল কেরালায় হালকা অনুশীলনে ব্যস্ত বাংলাদেশের ফুটবলাররা — ছবি : গোল ডটকম

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে বাংলাদেশ একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০০৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আসরে মালদ্বীপকে ফাইনালে হারিয়ে স্বপ্নের এ ট্রফি ঘরে তুলেছিল। অথচ এ সামান্য সাফ জয়ই এখন বাংলাদেশের কাছে স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা পরবর্তীতে ফাইনালে উঠলেও এক যুগ ধরে লাল-সবুজের দল শিরোপার দেখা পাচ্ছে না। গত দুই আসরে দাঁড়াতেই পারেননি মামুনুলরা। গ্রুপ পর্ব খেলেই দেশে ফিরে এসেছিলেন তারা। এই ব্যর্থতা ফুটবলপ্রেমীরা মেনে নিতে পারেননি। বড় টুর্নামেন্টে জ্বলে ওঠার সামর্থ্য নেই। সাফেতো বাংলাদেশ ফেবারিট হয়েই মাঠে নামে। এরপরও হতাশার পরিচয় দিচ্ছে কেন? আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা থাকলেও ফুটবলে মানের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া বড্ড পিছিয়ে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও দেশগুলোর অবস্থান তলানিতে। এশিয়ান ফুটবলেও কারোর পাত্তা মিলছে না। তাই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ বলা হয়। যারা ট্রফি জিতে তারা এই অঞ্চলের ফুটবলে সেরা দলের খেতাব পেয়ে যায়। তাই আসর এলেই বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা থাকে শিরোপার। যোগ্যতা থাকার পরও এক যুগ ধরে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী আছে তা কি মানা যায়? বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন দেখাটাও যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ব্যর্থতার সাগরে ভাসতে ভাসতে সাফ জয়ও এখন বাংলাদেশের কাছে স্বপ্ন হয়ে গেছে। সেই স্বপ্ন পূরণের যাত্রা আজ। গতকাল কেরালায় টুর্নামেন্টের উদ্বোধন হলেও আজই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। সন্ধ্যায় ‘বি’ গ্রুপে ত্রিভান্দস স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নামবে আফগানিস্তান। ২৬ ডিসেম্বর মালদ্বীপ ও ২৮ ডিসেম্বর ভুটানের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। তবে আজকের ম্যাচটিই বাংলাদেশের কাছে গুরুত্ব অনেক। কোচ মারুফুল হকের মতে প্রথম ম্যাচটিই বাংলাদেশের কাছে ফাইনালের মতোই। শিরোপা জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মামুনুলরা কেরালায় এসেছেন। কিন্তু আজকের ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে পথ চলা। সাফে পরে এসেও দুর্দান্ত খেলছেন  আফগানরা। দুবার ট্রফি ঘরেও তুলেছে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় তারাই এগিয়ে। সত্তর দশকেও আফগানিস্তান জাতীয় দল ঢাকা আবাহনীর কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল। অথচ এখন জাতীয় দল জয় পাবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ হয়েও কঠিন পরিশ্রমে আফগান ফুটবল দল ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। আজকের ম্যাচে জয় মানে মামুনুলদের শুধু সেমিতে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে না শিরোপা জিততেও অনুপ্রাণিত করবে।

অন্যদিকে হারলে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার শঙ্কাটা জেগে উঠবে। কেরালায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা আজকের ম্যাচ দেখতে মাঠে ছুটে আসবেন। গোটা দেশের চোখ পড়ে থাকবে টিভিতে। কি করবে বাংলাদেশ আজ? জয় দিয়ে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাবে না শুরুতেই হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়বেন মামুনুলরা। প্রতিপক্ষ হিসেবে আফগানরা অবশ্যই শক্তিশালী। কিন্তু মামুনুলরা যদি নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরতে পারেন তাহলে ভয়ের কিছু নেই। ২০১৪ সালে এশিয়ান গেমসে তাদের বিপক্ষে শেষ লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছিলেন মামুনুলরা। সুতরাং পারব না এমনটি বলা যাবে না। তাছাড়া আগে প্রস্তুতি নিয়ে অভিযোগ থাকলেও এবার ভালোভাবে প্রস্তুত হয়েই সাফে নামবে। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন ও চারবার বিশ্বকাপ খেলা অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও জর্ডান, কিরগিজস্তান আর তাজিকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ম্যাচও খেলছে বাংলাদেশ। ফলাফল সুখকর না হলেও অভিজ্ঞতা ও ভুলত্রুটি শোধরানোর সুযোগ পেয়েছে যা সাফে কাজে লাগানো যাবে। শেষ প্রস্তুতিটা সেরেছে ঢাকায় নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ঘিরে কেরালায় তেমনভাবে সাজ-সজ্জা দেখা যাচ্ছে না। তবে টুর্নামেন্ট নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ ঠিকই রয়েছে। বাংলাদেশের অনুশীলনেও ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাঠে নামার আগে মামুনুলরা হালকা অনুশীলন করেন গতকাল। কোচ মারুফ শিষ্যদের সাহস জুগিয়েছেন। বলেছেন নার্ভাস না হয়ে লড়াই কর  তাতেই জিতে যাবে। অধিনায়ক মামুনুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আফগানিস্তান শক্তিশালী দল। ওরা পাওয়ার ফুটবল খেলে। আমরা টেকনিক্যালইভাবে তাদের মোকাবিলা করবো। টার্গেট আমাদের জয়। তাই রক্ষণাত্মক খেলার প্রশ্ন ওঠে না। এগিয়ে গেলেও অলআউট ফুটবল খেলব। প্রতিটি পজিশনেই সতর্ক থাকতে হবে। আশা রাখি  জয় দিয়েই এবার সাফে যাত্রা করব আমরা।

সর্বশেষ খবর