রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এমন ভরাডুবির তদন্ত দরকার

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এমন ভরাডুবির তদন্ত দরকার

আর মাত্র কদিন পরই নতুন ইংরেজি বছরের দেখা মিলবে। ২০১৫ কেমন কাটল, সব ক্ষেত্রে এর চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। বাদ নেই ক্রীড়াঙ্গনও। কয়েক বছর ধরে ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে ক্রিকেটকেই বোঝায়। আর ২০১৫ সালকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্বর্ণযুগই বলা যায়। সাফল্য আর সাফল্য। কিন্তু আরেক বড় খেলা ফুটবলে ঘুরেফিরে একই চেহারা। অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ আর এএফসি আঞ্চলিক পর্বে বাংলাদেশের বালিকারা শিরোপা জিতেছে। ফল কিছুটা তৃপ্তিদায়ক হলেও একটা খেলার সাফল্যের বিচার করা হয় মূলত জাতীয় দলের পারফরম্যান্সকে কেন্দ্র করে। ক্রিকেট আর ফুটবলের জাতীয় দলের পারফরম্যান্সের পার্থক্য ছিল আকাশ-পাতাল। আশা ছিল আগে যাই হোক না কেন এবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ বিজয়ের পতাকা ওড়াবে। ২০০৩ সালে এ আসরে একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এক যুগ ধরে শিরোপা জেতাটা স্বপ্ন হয়েই রয়েছে। শেষ দুই আসরে তো রীতিমতো ভরাডুবি। গ্রুপ পর্ব খেলেই বাংলাদেশকে বিদায় নিতে হয়।

নতুন কোচ মারুফুল হক ও অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, অতীত অতীতই, এবার আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চাই। সত্যি বলতে কি, ফুটবলপ্রেমীরাও আশাবাদী ছিলেন। কারণ এবার বাংলাদেশের প্রস্তুতিটা ছিল চোখে পড়ার মতো। ফুটবলাররাও স্বীকার করেছিলেন প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। বিশেষ করে কোচ হিসেবে মারুফকে কাছে পেয়ে মানুনুলরা খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এ কী করল বাংলাদেশ! ভরাডুবির হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন তারা। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান ৪-০, গতকাল মালদ্বীপের কাছে ৩-১ গোলে হারে। ভুটানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ। এই ম্যাচে ১০০-০ গোলে জিতলেও লাভ হবে না। আগের দুই আসরের মতো গ্রুপ পর্ব খেলেই মামুনুলদের দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে। আফগানিস্তানের কাছে কখনো না হারলেও এবার গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে। সাফ ইতিহাসে এমন শোচনীয় হারে বিস্মিত হয়ে যান ফুটবলপ্রেমীরা। ম্যাচ শেষে তবু কোচ মারুফ বলেন, সেমিতে খেলার দরজা এখনো খোলা আছে। কথাটা তিনি ঠিকই বলেছিলেন। কেননা পরবর্তী ম্যাচে মালদ্বীপ আর ২৮ ডিসেম্বর ভুটানকে হারাতে পারলে সম্ভাবনা টিকে থাকত। অর্থাত্ গতকালকের ম্যাচটি ছিল মামুনুল, হেমন্তদের বাঁচা-মরার লড়াই। এই মালদ্বীপ জাতীয় দলই একসময় মোহামেডানের কাছে গোলের বন্যায় ভেসে যেত। একই অবস্থা ছিল আফগানিস্তানেরও। ১৯৭৯ সালে আবাহনীর কাছে ৯-০ গোলে হারে। এসব বর্তমান প্রজন্মের কাছে অবাকই মনে হবে। কথা একটাই, এমন ভরাডুবি ঘটল কেন? ২ ম্যাচে ৭ গোল খেয়ে সাফে বিদায় ঘটেছে— এর চেয়ে বড় লজ্জা আর কী হতে পারে। অনেকে ফ্যাসিলিটির কথা বলেন, কিন্তু সাফে যারা খেলছেন তারা কি বাংলাদেশের তুলনায় বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। দুই দেশে তো ঘরোয়া ফুটবলই ঠিকমতো হয় না। আর এমন মান থাকার পরও পেশাদার লিগে বাংলাদেশের ফুটবলারদের পারিশ্রমিক এখন ৫০ লাখও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, এরা কি এ টাকা পাওয়ার যোগ্য? বার বার দেশের সম্মান নষ্ট করছেন। তার পরও তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হয় না। তিনবার গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায়— এ ব্যর্থতার অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। ফুটবল ফেডারেশনকেও ছাড় দেওয়া যায় না। তারা যে ফুটবল পরিচালনায় ব্যর্থ, এরও প্রমাণ মিলছে বার বার। হাসি লাগে সালাউদ্দিন ২০২২ সালে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখছেন। এমন ব্যর্থতায় অন্য কোনো দেশের ফেডারেশনের সভাপতি নির্ঘাত পদত্যাগ করতেন। কিন্তু বাংলাদেশে এটা সম্ভব নয়। আসলে এ লজ্জার বিচার চাওয়া হবে কার কাছে। ফুটবল কি তাহলে এভাবেই চলবে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর