সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কেরালায় বিমর্ষ বাংলাদেশ শিবির

কেরালা থেকে রাশেদুর রহমান

কেরালায় বিমর্ষ বাংলাদেশ শিবির

আবারও গ্রুপ পর্ব থেকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বিদায়। মালদ্বীপের কাছে হারার পর হতাশায় মাঠ থেকেই উঠতে চাচ্ছিলেন না জাতীয় দলের ফুটবলাররা —বাফুফে

হোটেল ‘বিভান্ত তাজে’র লবিতে একসঙ্গে নেমে এলো মালদ্বীপ প্লাটুন। কেরালার রাজধানী ত্রিভানদ্রামে এ হোটেলটাই সেরা। মূল ফটকের সামনে দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা রয়েছে। লিফট ধরে একধাপ উঠতেই সবুজের মেলায় নীল পানির সুইমিংপুল। হোটেলের লবিতে মালদ্বীপ প্লাটুন যখন অট্টহাস্যে উত্সব পালন করছে ঠিক তখন বাংলাদেশের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম তার সতীর্থদের নিয়ে সুইমিংপুলে সময় কাটাচ্ছেন। যেন সব ব্যর্থতা পানিতে ধুয়েমুছে সাফ করতে চাইছে বাংলাদেশ দল! কিন্তু এত সহজেই কী ব্যর্থতার দায় থেকে মুক্তি মেলে!

পুরো দলটাই সুইমিংপুলে ডুবে আছে। হেমন্ত তার নাক-চোখ-মুখ ছাড়া বাকি শরীরটা ডুবিয়ে দিয়েছেন পানিতে। বাকিদের অবস্থাও খানিকটা ওরকম। টানা দুই পরাজয়ের ক্লান্তি-অবসাদে যেন পুরো ধলটাই ভেঙে পড়েছে। চোখের দিকে তাকালে মনে হয় লজ্জায়-অপমানে-ক্ষোভে মুষড়ে আছে। নির্ঘুম রাত কাটায় লাল হয়ে আছে চোখ। জামাল ভূইয়া সুইমিংপুল থেকে উঠে দেখতে পেয়েই বলে উঠলেন, নাহ্্, পারলাম না। সত্যি বলতে আমাদের ডিফেন্স লাইনটা একেবারেই কাজ করেনি। মামুনুল বললেন, আমি লজ্জিত। কোচ মারুফুল হক এখনো বিশ্বাসই করতে পারছেন না মালদ্বীপের কাছে তার গড়া দলটা হেরে গেছে। দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু অশ্রুসিক্ত চোখে বললেন, ওদের জন্য কত কষ্টই না করলাম, ফল হলো না। জামাল ভূইয়ার মতো বাকিরাও হতাশনয়ন। দুপুর রোদের উজ্জ্বল আলোর মাঝে বাংলাদেশের এমন মলিন বদন সত্যিই বড্ড বেমানান লাগল। অন্যদিকে মালদ্বীপ। কী দুরন্ত ওরা। নির্ভীক ওরা। নিঃশঙ্ক ওরা। অথচ সামনে ওদের আফগানিস্তান ম্যাচ। অধিনায়ক আলী আশফাক সতীর্থদের নিয়ে লবিতে নেমে সবাইকে সাক্ষী রেখেই অট্টহাস্যে মেতে উঠলেন। এ যেন একদল বিজয়ীর আগাম সতর্কবার্তা প্রেরণ!

এক সময় এ মালদ্বীপ বাংলাদেশের কাছে ড্র করতেই নাকানি-চুবানি খেত। অথচ এই দলটার রূপ কী করে বদলে গেল। এ পালা বদলের শুরুটা হলো কী করে! গতকাল হোটেলের লবিতে বসে মালদ্বীপের কিউই কোচ রিকি হার্বার্ট উন্মোচন করছিলেন দলের সফলতার রহস্য। ‘মালদ্বীপকে আমি জানতাম না। সত্যি বলতে কী এ দেশের নামটাই আমার জানা ছিল না। মালদ্বীপ আমাকে নিউজিল্যান্ড ফুটবল ফেডারেশনের সেক্রেটারির মাধ্যমে প্রস্তাব দেয়। প্রথমেই আমি শর্ত দিই, দায়িত্ব নিলে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য নেব। আর আমাকে কাজে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।’ মালদ্বীপ ফুটবল ফেডারেশন রিকির প্রায় সব শর্তই মেনে নেয়। তিনি দলে কাকে রাখবেন আর কাকে রাখবেন না তা নিজেই ঠিক করেন। এমনকি আলী আশফাকের মতো তারকা ফুটবলারদেরও পারফর্ম করেই দলে টিকে থাকতে হয়। মালদ্বীপের এ দলটাতে অনেকেই আছে তরুণ। পুরনোদের মধ্যেও অনেকে রিকি আসার পর আমূল বদলে গেছেন। এখন তারা ফুটবলটা ঠিকঠাক বুঝতে পারেন। তবে রিকি বলছেন, ‘এখনো তারা উন্নতি করে চলেছে। এখনো আমার অনেক কাজ বাকি।’ মালদ্বীপ দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে রিকি হার্বার্ট এক মহাদায়িত্ব পালন করে এসেছেন। তিনি দলের ফুটবলারদের খেলা দেখেছেন ভিডিও ফুটেজে। দলের ফুটবল ইতিহাস জেনেছেন খুঁটে খুঁটে। একটা দলকে কীভাবে সামনে এগিয়ে নিতে হবে, তা আগে থেকেই তিনি ছক করে এসেছেন।

মালদ্বীপ যেভাবে বদলে গেল বাংলাদেশও কি তা পারবে! রিকি হার্বার্ট বললেন, বাংলাদেশের মিডফিল্ডটা দারুণ। অসাধারণ খেলে তারা। তবে এই দলটাকে নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। ডিফেন্স আর ফরোয়ার্ড লাইন নিয়ে কোনো কঠোর মন্তব্য করতে চাইলেন না রিকি। তবে তার নীরবতাই বলে গেল অনেক কিছু। যেমন বাংলাদেশের ডিফেন্স লাইনের অসংখ্য ফাঁকফোকর গলে বিশ্বের যে কোনো আক্রমণভাগই সফল হতে পারবে।

ফুটবল একটা বিশ্ব মঞ্চ তৈরি করেছে। এ মঞ্চে টিকে থাকতে হলে কেবল গায়ের জোর থাকলেই হবে না। থাকতে হবে মেধা-মননের লালনও। কিউই কোচ রিকি হার্বার্টের মতে, বাংলাদেশকেও নিজেকে মূল্যায়ন করতে হবে বিশ্বের মাপকাঠিতে। স্থানীয় লেভেলের ফুটবল দিয়ে মূল্যায়ন করলে প্রাপ্তির চাপই কেবল বাড়বে। ফুটবলের বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের তুলনা করাটা শিখতে হবে বাংলাদেশকে। না হলে ভবিষ্যতে মালদ্বীপের মতোই কোনো দল এসে বাংলাদেশকে পরাজিত করে বিজয়ীর অট্টহাস্যে মেতে উঠবে। আর বাংলাদেশ দল বার বার সুইমিংপুলের পানিতে নিজেদের ডুবিয়ে দূর করতে চাইবে ব্যর্থতার যন্ত্রণা!

সর্বশেষ খবর