সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ক্রিকেট ২০১৫

সাফল্যে মোড়ানো বছর

মেজবাহ্-উল-হক

সাফল্যে মোড়ানো বছর

ক্রিকেটে বাংলাদেশ বছরটা শুরুই করেছিল চমক দিয়ে। প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালেও ওঠে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে বাজিমাত করে মাশরাফি বিন মতুর্জার দল। তারপর ঘরের মাঠে তিন ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মতো এ বছরই সাতে উঠেছে টাইগাররা। নিশ্চিত করেছে ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা। ওয়ানডেতে ১৮ ম্যাচে ১৩ জয়।

টেস্টে জয় না পেলেও ৫ ম্যাচের মধ্যে ৪টিতে ড্র— পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত অর্জন তো ছিলই। একসঙ্গে তিন ফরম্যাটে সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, মুস্তাফিজের বিশ্বরেকর্ড— সব মিলে ২০১৫ সালটা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে সাফল্যে মোড়ানো এক বছর।

 

আইসিসি বিশ্বকাপ : 

একটা তরুণ দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বাউন্সি ও গতির উইকেটে টাইগাররা তাল মেলাতে পারবেন কিনা তা নিয়েই ভাবনা ছিল ভক্তদের মনে। কিন্তু মাশরাফির নেতৃত্বে এই দলটাই কিনা ওলট-পালট করে দেয় সব কিছু। প্রথম রাউন্ডে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে সহজ জয়। আর স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে কাঁপিয়ে ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়ে পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ আটের লড়াইয়ে ভারত ছলচাতুরির আশ্রয় না নিলে হয়তো অন্যরকম কিছু একটা ঘটেও যেতে পারত! ঠিক ’৯৬-র বিশ্বকাপে আলোচনার বাইরে থেকে যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা।

তবে বেদনা নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও টাইগারদের পারফরম্যান্স বিশ্ববাসীর মন কেড়ে নেয়। মাশরাফিদের ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলিটা প্রসারিত হয়ে যায়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে পেসার রুবেল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্যারিশম্যাটিক এক ‘স্পেল’ করে রীতিমতো যেন মহাতারকা!

একই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে অনেক প্রথমের জন্ম দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি, তার নিজের প্রথম সেঞ্চুরি এবং বছরের প্রথম সেঞ্চুরি। পরের ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন রিয়াদ। পর পর দুই সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা তারকা হিসেবে বিবেচিত হন তিনি।

বাংলাওয়াশ পাকিস্তান :

’৯৯-র বিশ্বকাপে পাওয়া একমাত্র জয়টাই ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের একমাত্র পুঁজি। কিন্তু এবার ঘরের মাঠে অন্য বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দেশে ফেরা দলটি পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজের তিন ম্যাচেই উড়িয়ে দিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের আনন্দের পাশাপাশি দলটির বিরুদ্ধে বাংলাওয়াশের স্বাদও নিল টাইগাররা।

ভারতকে হারিয়ে প্রতিশোধ :

বিশ্বকাপে জোর করে হারানোর দগদগে ক্ষতটা তখনো শুকায়নি। তার ওপর পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে ক্রিকেটাররা। সে কথা আন্দাজ করতে পেরেই কিনা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড দ্বিতীয় সারির দল পাঠানোর চিন্তা করেও ধোনি-কোহলিদের বিশ্রাম বাতিল করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় সেরা দলটি। তাতেও রক্ষা হয়নি তাদের। প্রথম দুই ম্যাচে জিতেই সিরিজ হাতের মুঠোয় পুরে নেয় মাশরাফির দল। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধটাও নেওয়া হয়ে যায় দারুণভাবে।

র‌্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বরে :

পাকিস্তান-ভারতকেও সিরিজে হারানোর পরও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সাফল্যের ব্যাপারে অনেকের মনে প্রশ্ন ছিল। সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরেও যায় বাংলাদেশ প্রোটিয়াদের কাছে। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেন মাশরাফিরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম সিরিজ জয় তো বটেই, সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বরে উঠে যায় বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও খেলার সুযোগ পেয়ে যায় টাইগাররা।

টেস্টে সাফল্য :

ওয়ানডের মতো টেস্টেও বাংলাদেশের শুরুটা হয় চমক দিয়ে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই ইতিহাস সৃষ্টি করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। ওপেনিংয়ে ৩১২ রানের মহাকাব্যিক এক জুটি। টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রানের জুটি এটি। ২০১৫ সালে ৫ টেস্ট খেলে মাত্র এক ম্যাচে হেরেছিল বাংলাদেশ। এর আগে কখনো টেস্টে এত ভালো সময় কাটায়নি টাইগাররা।

সাকিব-মুস্তাফিজের বিশ্বরেকর্ড :

একসঙ্গে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০— তিন ফরম্যাটেই সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার বিরল রেকর্ড অর্জন করেন সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। আর ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেকেই ৫ উইকেট নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড। তৃতীয় ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত রাখেন মুস্তাফিজ। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে আগে কখনো প্রথম তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার করতে পারেননি। অভিষেকের পর থেকেই যেন নিজেকে ভয়ঙ্কর এক বোলার হিসেবে আবির্ভূত করেন কাটার মাস্টার। বছরের শেষের দিকে আরেকটি সুখবর পেয়েছেন মুস্তাফিজ— প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে জায়গা করে নিয়েছেন।

দলীয় ও ব্যক্তিগত অর্জন মিলে ২০১৫ সালটা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্যে ভরপুর এক বছর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর