মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এভাবে ফুটবল চলে না

সাফে ভরাডুবিতে ক্ষুব্ধ সাবেকরা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এভাবে ফুটবল চলে না

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চরম ভরাডুবি। এরপরও ফুটবলকে ঘিরে আলোচনা থামছে না। ক্রীড়াঙ্গন জুড়ে একটাই আলোচনা— এ কী করল বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের পর ট্রফি জেতা হচ্ছে না। ২০১১ ও ২০১৩ সালে গ্রুপ পর্ব খেলেই সাফ মিশন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। এবার আশার বাণী শুনিয়ে গিয়েছিলেন মারুফ, মামুনুলরা। কোথায় কি, ব্যর্থতার হ্যাটট্রিক পূরণ করেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তান ৪ আর মালদ্বীপের কাছে ৩ গোল হজম করে স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে মামুনুলদের। ভুটানের বিপক্ষে সান্ত্বনার জয় নিয়ে দেশে ফিরে আসছে জাতীয় দল। সাফের ভরাডুবিতে পুরো দেশই হতাশ। জাতীয় দলের বেশ কজন সাবেক ফুটবলার আক্ষেপ করে বলেছেন, লজ্জায় তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।

এক সময় মাঠ কাঁপানো ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, আসলে কি যে বলব ভাষায় খুঁজে পাচ্ছি না। সত্যি বলতে কি এবার সাফ ঘিরে আমিও আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু ছেলেরা এতটা খারাপ করবে ভাবতেই পারিনি। আগেও হেরেছে। কিন্তু এবারের মতো হতাশ কখনো হইনি। মুখ নয়, ফুটবল যে পায়ের খেলা তা বোধ হয় অনেকে ভুলে গেছেন।

আফগানিস্তান যতই শক্তি সঞ্চয় করুক না কেন বাংলাদেশকে ৪ গোল দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। ৮৬ মিনিটে সমতা আনার পরও মালদ্বীপের কাছে ১-৩ গোলে হার কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। চুন্নু বলেন, আমরা যখন খেলতাম তখনো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রেজাল্ট খুব যে ভালো করতাম তা বলব না। তবে মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানকে গুনে গুনে গোল দিতাম। তাও আবার জাতীয় নয় মোহামেডান আর আবাহনীই তাদের গোলের বন্যায় ভাসিয়ে দিত। ১৯৭৯ সালে আবাহনীর হয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলাম। আমাদের তো আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এগিয়েছে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ। কেন এমন হলো এটাই আমার প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে শুধু ফুটবলারদের দোষ দিলে চলবে না। যারা ফুটবল পরিচালনা করছেন তাদেরও দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আসলে যে অবস্থা দেখছি তাতে নতুন কর ফুটবল সাজাতে হবে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তা না হলে অযথা ফুটবল খেলে লাভ নেই। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ফুটবল পেছনে পড়ে থাকবে তা তো হতে পারে না।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক কায়সার হামিদ বেশ আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, সকালে একটু বের হয়েছিলাম। যার সঙ্গে দেখা হয়েছে তারা তিরস্কার করে বলেছেন ভাই অযথা দেশের সুনাম নষ্ট করে লাভ কি। ফুটবল খেলাটা বন্ধ করা যায় না। একজন ফুটবলার হয়ে এই লজ্জা কি মানা যায়? বাংলাদেশের ফুটবলে উন্নতি না হোক; কিন্তু কখনো ভাবতেই পারিনি আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের কাছে নাকানি চুবানি খাবে। জাতীয় নয়, যে কোনো টুর্নামেন্টে ম্যাচ শুরুর আগে দুই দেশ মোহামেডান ও আবাহনীর কর্মকর্তাদের অনুরোধ রাখত বেশি গোল যেন না দেওয়া হয়। অথচ এখন উল্টো দৃশ্যটাই যেন দেখছি। খেলায় হারজিত থাকবেই। কিন্তু তিন আসরে সাফে গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় তা তো ভাবাই যায় না। বিশ্বকাপ নয় এখন সাফে সেমিফাইনাল খেলাটাই যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অনেকে বলেন, বাংলাদেশের ফুটবল শেষ হয়ে গেছে। আমি তা কোনোভাবেই বলব না। ব্যর্থতার তদন্ত করে ফুটবল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবল শুরু করতে হবে। পরিকল্পনা নেই বলে ফুটবলে করুণ দশা নেমে এসেছে। ১৯৯৯ সালে জুয়েল রানার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাফ গেমসে সোনা জয় করে। তিনি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পারফরম্যান্সে হতাশ ও বিরক্ত। তার কথা আমাদের ফুটবলারদের কোয়ালিটি কি তা পুরোপুরি বোঝা গেছে। এখন সেভাবে কাজ করতে হবে। বার বার কেন ব্যর্থ এটারও তদন্ত দরকার রয়েছে। আসলে ফুটবল চলছে অগোছালোভাবে। এক সময় আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ আমাদের কাছে পাত্তা পেত না। এখন উল্টোটা। ওরা কিভাবে এগিয়ে গেল তাও খতিয়ে দেখতে হবে। বার বার ব্যর্থতায় দেশের সুনাম নষ্ট হবে— তা আমি কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না।

বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, এমন ব্যর্থতার পর কী বলব। সত্যি বলতে কি মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ হয়তো পরিকল্পনা করে ফুটবলে এগুচ্ছে। তারপরও তাদের কাছে এমনভাবে বিধ্বস্ত হবে ভাবতেই পারিনি। আফগানিস্তানের দিন মনে হয়েছে বাংলাদেশ যেন কোনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে লড়ছে। পুরো ম্যাচেই ছিল কোণঠাসা।

মালদ্বীপের বিপক্ষে তুলনামূলক ভালোই খেলেছিল। পেনাল্টিতে গোল খেয়ে ৮৬ মিনিটে সমতায় ফিরেছিল। কিন্তু ইনজুরি টাইমে ভুলের কারণে ২ গোল হজম করেছে। কেন এমন হলো এ প্রশ্নটা অনেকেরই। আমার মনে হয় মারুফ ভাই যেভাবে তৈরি করেছিল সেভাবে মাঠে খেলতে পারেনি ফুটবলাররা। যাক শত কষ্ট হোক, ফুটবল নিয়ে  নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। আমি মনে করি, শুধু দক্ষ ফুটবলার নয়, ফুটবল উন্নয়নে যোগ্য সংগঠকদের প্রয়োজন রয়েছে। যেভাবে চলছে আসলে এভাবে ফুটবল চলে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর