রবিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু

মেজবাহ্-উল-হক

টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু

প্রাথমিক দল ঘোষণা হয়ে গেছে। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন। অবশ্য টি-২০ বিশ্বকাপের এখনো মাস দুয়েক বাকি। কিন্তু এবার অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতিতে নেমে পড়েছেন মাশরাফিরা।

টি-২০ বিশ্বকাপের আগে টাইগাররা জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে চার ম্যাচের একটি টি-২০ সিরিজ খেলবে। তারপর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশেই হবে পাঁচ জাতি এশিয়া কাপের আসর। তবে এই দুই আসরকেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নিচ্ছে টাইগাররা।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ওয়ানডেতে যতটা শক্তিশালী টি-২০তে ততটাই দুর্বল। আইসিসির সহযোগী সদস্য আফগানিস্তানও টি-২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের উপরে। ওয়ানডেতে যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান সাত নম্বরে সেখানে টি-২০ র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে টাইগাররা। সে কারণেই এবার অনেক আগে থেকেই টি-২০ বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে ক্রিকেট বোর্ড।

অবশ্য গত মাসে শেষ হওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ ছিল। কিন্তু আজ থেকে প্রাথমিক দলে থাকা ২৭ সদস্যকে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতি মিশনে নামছে বাংলাদেশ। প্রথম দিন ফিটনেসের ওপরই গুরুত্ব দেওয়া হবে। কেননা ১৫ ডিসেম্বর বিপিএল ফাইনালের পর আর কোনো ম্যাচে কিংবা অনুশীলনে অংশ নেননি মাশরাফিরা। নতুন বছরে ক্রিকেটারদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি মিশন হলেও প্রথমে জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়েই ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ১২ জানুয়ারি ঢাকায় আসার কথা জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের। ৪টি টি-২০ ম্যাচ হবে। সূচি চূড়ান্ত না হলেও সব ম্যাচই হবে সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে। নিকট অতীতের পরিসংখ্যান ঘাটলে জিম্বাবুয়েকে বড় প্রতিপক্ষ ভেবে ভয় পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু ফরম্যাটটা অনিশ্চয়তার টি-২০ ক্রিকেট বলেই যত ভাবনা। এক ওভার কিংবা এক বলেও এখানে ম্যাচের ভাগ্য বদলে যেতে পারে।

জিম্বাবুয়ের সিরিজের পরই এশিয়া কাপ। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পাঁচ জাতির এই টুর্নামেন্ট শুরু হবে। এবারই প্রথম টি-২০ ফরম্যাটে হবে আসরটি। এই টুর্নামেন্টেই টাইগারদের সামর্থ্যের একটা বড় পরীক্ষা হয়ে যাবে। কেননা এবারের বিশ্বকাপটা যেহেতু উপমহাদেশে (ভারত) হচ্ছে, এখানকার দেশগুলোর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বিশ্বকাপের রেসে থাকতে হলে টি-২০ এশিয়া কাপে ভালো করা খুবই জরুরি। ভালো করতে পারলে হয়তো এখান থেকেই বিশ্বকাপে ভালো খেলার জ্বালানিটা পেয়ে যাবেন ক্রিকেটাররা।

বিপিএলটাও ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য একটা পরীক্ষা। কেননা টানা ওয়ানডে খেলতে খেলতে টি-২০র মেজাজটাই যেন হারিয়ে ফেলেছিল টাইগাররা। তাই বিপিএলে টি-২০র মেজাজটা বুঝতে পেরেছেন মাশরাফিরা। তাছাড়া এই আসরের মাধ্যমেই নতুন তারকা পেসার আবু হায়দার রনিকে পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতীয় দলের তারকা বোলারদের টেক্কা দিয়ে ২১ উইকেট নিয়ে এবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হয়েছেন নেত্রকোনার এই তরুণ তুর্কি। প্রাথমিক দলে তো আছেনই চূড়ান্ত দলেও দেখা যেতে পারে তাকে। ইমরুল কায়েসের পরিচিতি ছিল টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে। কিন্তু এবারের বিপিএলে অন্য ইমরুলকে দেখা গেছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১২ রান করেছেন তিনি। বিপিএলে অসাধারণ খেলেছেন ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবাল। তিনিও করেছেন ২৯৮ রান।

সব কিছু ঠিক থাকলে এবার ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গে দেখা যেতে পারে ইমরুল কায়েসকেই। বিপিএলে দারুণ সময় কাটিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। ভালো করেছেন লেট মিডল অর্ডারে ভরসার প্রতীক হয়ে থাকা নাসির হোসেন। এবার দলে ফিরতে পারেন রাজশাহীর তারকা ব্যাটসম্যান জহুরুল ইসলাম অমিকেও।

বোলিংয়ে বিপিএলে বাংলাদেশের একমাত্র হ্যাটট্রিকম্যান পেসার আল আমিন এখন পেস আক্রমণে বড় ভরসার নাম। ইনজুরির কারণে রুবেল হোসেন তো দলেই নেই। গতি তারকা তাসকিন আহমেদও শতভাগ ফিট নন। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে, কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান বিপিএল খেলে আরও ধারালো হয়েছেন। বিপিএলে তার ডেলিভারিগুলো ছিল দেখার মতো। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা মুস্তাফিজের ওভারে রান করার চেয়ে ওভারটি কিভাবে পার করা যায় তা নিয়েই যেন বেশি চিন্তা করেছেন। বাংলাদেশের দলের আত্মবিশ্বাসের জায়গায় সাকিব আল হাসান তো রয়েছেনই। যে কোনো দলের বিরুদ্ধে যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা তার রয়েছে। সাব্বির রহমানের হাতে যে মার, নিজের দিনে গেইল-ভিলিয়ার্সও নস্যি হয়ে যেতে পারেন তার কাছে! এছাড়া মিস্টার ডিপেডেবল মুশফিকুর রহিম তো রয়েছেনই। আর নেতৃত্বে মাশরাফির ক্যারিশমা তো থাকছেই।

সর্বশেষ খবর