সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

টাইগারদের প্রস্তুতি শুরু

ক্রীড়া প্রতিবেদক

টাইগারদের প্রস্তুতি শুরু

এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপে জ্বলে উঠতে হবে। সেই লক্ষ্যেই গতকাল থেকে প্রস্তুতিতে নেমে পড়লেন মাশরাফি আল-আমিন মুস্তাফিজ সৌম্যরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি করতে চেয়েছিলেন তামিম ইকবাল। নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রানের ইনিংস খেলে কাছাকাছি পৌঁছেও গিয়েছিলেন বাঁ হাতি ড্যাসিং ওপেনার। সেঞ্চুরি না পেলেও ওই ম্যাচে রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। বিশকাপসহ ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে রেকর্ড গড়েছিল টাইগাররা। ওই ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মাহমুদুল্লাহরও স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করার। সেই স্বপ্ন পূরণ করেন অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে। শুধু ওই ম্যাচেই নয়, হ্যামিল্টনে পরের ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন মাহমুদুল্লাহ। বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়া মাহমুদুল্লাহ চাইছেন ২০১৫ সালের সাফল্য ২০১৬ সালে ধরে রাখতে। শুধু মাহমুদুল্লাহ নন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলই চাইছে গত বছরের স্বর্ণ সময় যেন নতুন বছরেও বহমান থাকে। সেই টার্গেটেই কাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নতুন বছরের মিশন শুরু করলো দিগন্ত ছাড়ানো স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে।

২০১৫ সাল বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি অধ্যায়। ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। এরপর ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ করে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে। পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করার আত্মবিশ্বাস নিয়ে সিরিজ জিতে নেয় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। তিন পরাশক্তিকে হারানোয় বাংলাদেশের গ্রাফ তরতরিয়ে উঠে যায় উপরে। পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে ২০০৬ সালের পর জায়গা করে নেয় ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নশিপে। বছর শেষ করে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে। টাইগারদের পারফরম্যান্সের এমনই ধারাবাহিকতা ছিল যে, ১৮ ম্যাচের ১৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এই ধারাবাহিকতাই ধরে রাখতে চাইছেন মাহমুদুল্লাহ, ‘সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই এখন আমাদের মূল দায়িত্ব। বর্তমান অবস্থান থেকে পেছনে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই আমাদের। এখন আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। সেজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’

জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শেষ হয়ে গিয়েছিল টাইগারদের। তারপরও ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন মাহমুদুল্লাহরা। অর্থের ঝনঝনানির টুর্নামেন্ট খেলে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে ক্রিকেটাররা। অনেকের আবার ভাগ্যও ঘুরেছে বিপিএল খেলে। বিপিএল শেষ করে অনেক দিন বিশ্রামে কাটালেন ক্রিকেটাররা। কাল শুরু করেন ২০১৬ সালের মিশন। জিম্বাবুয়ে সিরিজ, এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য ২৭ সদস্যের প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। সে দলের গতকাল রিপোর্ট করার কথা। সাকিব আল হাসান ও ইমরুল কায়েশ ছাড়া বাকি সবাই উপস্থিত ছিলেন এবং মারিও ভিলাভারায়নের তত্ত্বাবধানে ফিটনেস ট্রেনিংয়ে অংশ নেন মাশরাফি, মাহমুদুুল্লাহরা। সাকিব উপস্থিত ছিলেন না কন্যা ও স্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায়। নাকের অস্ত্রোপচারের জন্য উপস্থিত ছিলেন না ইমরুল। 

সোনালি বছরে বাংলাদেশ যতটা সফল ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটে। ঠিক ততটা অনুজ্জ্ব্বল ছিল টি-২০ ক্রিকেটে। পাকিস্তানকে হারালেও হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। গত বছর বাংলাদেশ টি-২০ ম্যাচ খেলেছে ৫টি। জয় সাকল্যে দুটি এবং পাকিস্তান ছাড়া অপরটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সাফল্যের পরিমাণ ৪০ শতাংশ, তারপরও নতুন বছরে সাফল্যের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী মাহমুদুল্লাহ, ‘এ বছর অনেকগুলো টি-২০ ম্যাচ খেলব আমরা। প্রথমে টি-২০ সিরিজ, এরপর এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপ। আশা করি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ভালো হবে আমাদের। তারপরও আমাদের টার্গেট সবগুলো টুর্নামেন্টে ভালো করা।’ 

মাহমুদুল্লাহকে বলা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিখুঁত শিল্পী। তার ব্যাটিং শৈলীতে মুগ্ধ সুনীল গাভাস্কার, মার্ক ওয়াহদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। তবে মাহমুদুল্লাহ যতটা সাবলীল ওয়ানডেতে, বিপরীত চিত্র টি-২০ ক্রিকেটে। একটু ধীরলয়ে ব্যাটিং করেন মাহমুদুল্লাহ। সেই ধীরলয়ের ব্যাটিং কাটিয়ে এবার বিপিএলে সাফল্য পেয়েছেন। ১৩ ম্যাচে রান করেছেন ২৭৯। এই পারফরম্যান্সই আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে মাহমুদুল্লাকে, ‘আমার মনে হয় না, টি-২০তে অতটা খারাপ খেলোয়াড়! বিপিএলে ভালো খেলেছি। এটা আমাকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে।  তবে এটা জানি সাফল্য পেতে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম করলেই সাফল্য পাব। সেজন্য আমি কষ্ট করতেও প্রস্তুত।’ 

কাল শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশের ক্রিকেট মিশন। ক্রিকেটপ্রেমীরা অধীর অপেক্ষায় নতুন বছরেও সাফল্য পেতে। এখন বাস্তবায়নের দায়িত্ব শুধু মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহদের।

সর্বশেষ খবর