সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভারতের সপ্তম শিরোপা

কেরালা থেকে — রাশেদুর রহমান

ভারতের সপ্তম শিরোপা

গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারির একটা কোণে পতাকা নাড়িয়ে চিত্কার করছেন গুটিকয় সমর্থক। হাতে আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা। মাথায় জড়ানো পতাকাখচিত ব্যান্ড। দুধ-সাদা আফগানি কুর্তা গায়ে জড়ানো এক তরুণ ভুভুজেলা বাজিয়ে সারাক্ষণই খুদে দলটাকে উত্সাহ দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের হাজার ত্রিশেক দর্শকের গর্জন সমুদ্র ছাপিয়ে আফগানদের চিত্কার কানে তালা লাগাতে পারেনি। তবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের ৭০ মিনিটটা ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। আফগান অধিনায়ক ফয়সাল শায়েস্তার বাড়িয়ে দেওয়া বল পেয়ে ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং সাধুর দুই পায়ের ফাঁক গলে অসাধারণ এক গোল করেন জুবায়ের আমিরি। মুহূর্তেই গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামে নেমে আসে কবরের নিস্তব্ধতা। কেবল গ্যালারির পশ্চিমাংশের সেই অংশটুকু উত্সবে মেতে ওঠে। আফগান ফুটবলাররা দর্শকদের সঙ্গে একাত্ম হতেই ছুটে আসেন গ্যালারির কাছাকাছি। তবে গুটিকয় দর্শকের এ আনন্দ-উত্সব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুই মিনিট পরই জেজে লালপেখলুয়ার গোলে সমতায় ফেরে ভারত। নির্ধারিত সময় ১-১ ব্যবধানে শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ের ১০১ মিনিটে সুনীল ছেতরির দুর্দান্ত এক গোল বিজয় উপহার দেয় ভারতকে। ২-১ গোলে জিতে ভারতীয়রা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সপ্তম শিরোপা ঘরে তুলল। ধারাটা ঠিকই থাকল। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে স্বাগতিক কোনো দল ফাইনাল খেললে, তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়। এ ইতিহাসটা বদলাতে পারল না আফগানিস্তান। সেই সঙ্গে ভারতীয়দের একটা প্রতিশোধও নেওয়া হলো। গত সাফের ফাইনালে এই আফগানদের কাছেই ২-০ গোলে হেরেছিল ভারত। তবে ভারতের এবারের জয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই থাকল। ম্যাচের ১১৯ মিনিটে নিশ্চিত পেনাল্টির আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন রেফারি কিমোরা। তা ছাড়া আফগানিস্তানের কোচ পিটার সেগরতকেও মাঠ থেকে বের করে দেন তিনি ম্যাচের শেষ দিকে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। পুরো টুর্নামেন্টে আফগানিস্তানের পারফরম্যান্স দেখে ভারতীয় কোচ তাদের ফেবারিটের তকমা উপহার দিয়েছিলেন আগেই। তবে ময়দানি লড়াইয়ে দেখা গেল কেউ কারও চেয়ে কম নয়। বরং ভারতীয়দের আক্রমণ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে আফগান ডিফেন্স লাইনের। সুনীল ছেতরি, জেজে লালপেখলুয়া আর হালিচরণদের দিয়ে সাজানো ত্রিফলার আক্রমণে নাজেহাল ছিল আফগানরা। ১৫ মিনিটেই জেজে লালপেখলুয়া এগিয়ে দিতে পারতেন ভারতকে। তবে আফগান গোলরক্ষক এবারের মতো ফিরিয়ে দেন তাকে। প্রথমার্ধের সাদাসিধে আক্রমণগুলোর পর দ্বিতীয়ার্ধেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল ভারতীয়রা। ৫৬ মিনিটেই সুনীল ছেতরি এবং জেজে লালপেখলুয়ার আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়েছিল আফগান ডিফেন্স। অবশ্য ভাগ্যগুণে বেঁচে যায় তারা। ৬২ আর ৬৫ মিনিটেও দুটি দারুণ সুযোগ তৈরি করেছিল ভারতীয় আক্রমণভাগ। ভারতীয়দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আফগানরাও খেলে চলছিল তাদের স্বাভাবিক ফুটবলটা। প্রথমার্ধেই বেশ কয়েকটা গোলের সুযোগ মিস করেন ফয়সাল শায়েস্তারা। ম্যাচের ১০ মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন আফগান অধিনায়ক। তবে তার দুর্দান্ত শটটা ফিরিয়ে দেন ভারতীয় গোলরক্ষক গুরপ্রিত। শায়েস্তার মতোই সুযোগ হারান জাজাই আর আমিরিরা। দুই পক্ষই সুযোগ হারিয়েছে অনেক। তবে এসব সুযোগের চেয়েও ম্যাচটাতে ছিল আরও বেশি কিছু। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচটাই ফুটবলাররা প্রমাণ করল, এখানেও ফুটবল হয়। সুনীল ছেতরি যেমন বার বার আফগান রক্ষণভাগ ছিন্নভিন্ন করে দিলেন একাই। তেমনি ফয়সাল শায়েস্তাও। তবে ভারতীয় আক্রমণভাগ গতকাল ছিল অনেক বেশি সক্রিয়। সেই তুলনায় আফগানদের জার্মান-স্টাইলের গতিশীল ফুটবল ফাইনালে খুঁজেই পাওয়া যায়নি! এ নিয়ে সাতবার সাফে ট্রপি জিতল ভারতীয়রা। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে যে অবস্থানে থাকুক না কেন এ অঞ্চলে ফুটবলে ভারত যে সেরা তা আবার প্রমাণ দিল।

ভারতীয়রা এমন বদলে গেল কেমন করে! সুনীল ছেতরি যেন বহুগুণে ধারালো হয়ে উঠেছেন! অনেকেরই দাবি, ইন্ডিয়ান সুপার লিগটা (আইএসএল) ভারতীয় ফুটবলে অনেক গুণগত পরিবর্তন এনেছে। বিশ্বসেরা ফুটবলারদের সঙ্গে ফুটবলটা খেলতে শিখেছে ভারতীয়রা।

আইএসএলে সুনীল ছেতরি খেলছেন মুম্বাই সিটির হয়ে। এখানে ফরাসি তারকা নিকোলাস আনেলকা তার গুরু। ভারতীয় ফুটবলাররা আইএসএলে সংস্পর্শ পাচ্ছেন দেল পিয়েরো, রবার্তো কার্লোস, লুসিওদের মতো ফুটবলারদের। আইএসএলের অভিজ্ঞতাই নাকি ভারতীয় ফুটবলারদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে শেখাচ্ছে। এমন দাবি করেছেন সর্বভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কুশল দাশ এবং কেরালা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অনীল কুমারও। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আফগানিস্তানের এটাই শেষবারের মতো অংশগ্রহণ। তারা চলে যাচ্ছে মধ্য এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনে। তবে বিদায়টা খুব সুখকর হলো না আফগানদের। তাদের শুনে যেতে হলো ভারতীয়দের বিজয়োল্লাস!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর