বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের গলফারদের শিরোপার স্বপ্ন

মেজবাহ্-উল-হক

বাংলাদেশের গলফারদের শিরোপার স্বপ্ন

অনুশীলনে ব্যস্ত সিদ্দিকুর রহমান —বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুর্মিটোলা গলফ কোর্সের ‘প্রাকটিস রেঞ্জে’ প্রবেশ মুখে চোখে পড়ে বিশাল আকারের ছবি পাঁচটি। স্ট্রিক হাতে পাঁচ তারকা গলফার- থাইল্যান্ডের থেয়র্ন উইরাচান, ডেনথাই বুনমা, ভারতের রশীদ খান, সিঙ্গাপুরের মারদান মামত ও ফিলিপাইনের মিগুয়েল তাবুয়েনা। সাধারণত তারকা গলফারদের ছবিই রেঞ্জের মূল ফটকে লাগানো থাকে।  বুনমা ও তাবুয়েনা ছাড়া বাকি তিন গলফারের ছবি বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের প্রথম আসরেও ছিল। সেবার সঙ্গে ছিল দেশের গলফার সিদ্দিকুর রহমানের ছবিও।

এবার এখানে উপেক্ষিত সিদ্দিকুর রহমান। নেই বাংলাদেশি অন্য কোনো গলফারের ছবিও। বাংলাদেশের গলফের সেরা বিজ্ঞাপন সিদ্দিকুর রহমানের ছবি ছাড়া রেঞ্জের মূল ফটক যেন কিছুটা বেমানানই লাগছে! অবশ্য এ নিয়ে বাংলাদেশি কোনো গলফারের আক্ষেপ নেই। বরং তারা স্টিক হাতে কোর্সেই নিজেদের প্রমাণ করার অপেক্ষায় রয়েছেন।

বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের প্রথম আসরে ইনজুরির কারণে সুবিধা করতে পারেননি দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান। হয়েছিলেন ৩৮তম। তবে এবার ফর্মের তুঙ্গে দেশের সেরা গলফার। গত নভেম্বর একটুর জন্য হাত ছাড়া হয়ে গেছে আরেকটি এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা। ভারতে অনুষ্ঠিত ‘প্যানাসনিক ওপেনে’ তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন সিদ্দিকুর। কিন্তু শেষ রাউন্ডে গিয়ে ছন্দ হারিয়ে ফেলেন। এরপর সব শেষ মালয়েশিয়ান ওপেনে পারের চেয়ে ৮ শট কম খেলেছেন। তবে এশিয়ান ট্যুরের দুই শিরোপা জয়ী সিদ্দিকুর রহমান এবার দেশের মাটিতে শিরোপা জয়ের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। সিদ্দিকুর বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনেক ভালো। প্রস্তুতিও ভালো। ঘরের কোর্স বলে একটা বাড়তি সুবিধাও থাকবে। ভালো করার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’

স্থানীয় গলফারদের মধ্যে সজীব আলীকে শিরোপার অন্যতম দাবিদার বলাই যায়! সিদ্দিকুর রহমান ছাড়া স্থানীয় টুর্নামেন্ট খেলে গত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন সজীব (৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা)।  বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সাতটি টুর্নামেন্টের মধ্যে দুটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। ফোর্থ পেট্রোন্স কাপ ও ফাস্ট হোসাফ ওপেন ছাড়াও আর দুটি টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়েছিলেন সজীব। বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনেও শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সজীব বলেন,‘আমি কঠোর অনুশীলন করছি। পরিচিত কোর্স, আশা করছি ভালো ফলই হবে। ভাগ্য সহায় থাকলে শিরোপাও জিততে পারি।’

সাম্প্রতিক স্থানীয় গলফারদের মধ্যে সেরা দুলাল হোসেন। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন দুটি টুর্নামেন্টে। ‘পূবালী ব্যাংক ও গ্রামীণফোন ওপেনে’ শিরোপা জয়ের পর ২০১৬ সালে কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে অনুষ্ঠিত একমাত্র টুর্নামেন্ট ‘ষষ্ঠ সামিত ওপেনে’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে ‘৭ আন্ডার পার’ খেলেছেন। যদিও দুলালের দাবি, এই কোর্সে তিনি ১৬ আন্ডার পারও খেলেছেন। তাই স্বপ্ন দেখছেন দেশের এই তারকা গলফার। দুলাল বলেন, ‘এবার বাংলাদেশিদের শিরোপা জয়ের সুযোগ অনেক বেশি। সবাই ভালো খেলছেন। সবার প্রস্তুতিও ভালো। বাংলাদেশের যে কেউ শিরোপা জিততে পারে। আমারও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ আছে।’

জামাল হোসেন মোল্লাও দুটি শিরোপা জিতেছেন গত মৌসুমে- ‘তৃতীয় পেট্রোন্স কাপ’ ও ‘মার্ক ডিজাইনস কাপ’। সিদ্দিকুরের সঙ্গে গত নভেম্বরে প্যানাসনিক ওপেনে তৃতীয় রাউন্ডে তিনি যৌথভাবে সপ্তম অবস্থানে ছিলেন। তাই এবার ঘরের কোর্সে এই টুর্নামেন্টে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী জামাল। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘বাজে আবহাওয়া ও কোর্সে হঠাৎ কিছু নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছিল গত আসরে। যে কারণে কোর্সের সঙ্গে আমরা স্থানীয়রা মানিয়ে নিতে পারিনি। তবে এবার এই কোর্সেই আমরা অনুশীলন করেছি। আবহাওয়া দারুণ। তাই ভালো কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে।’

বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের প্রথম আসরে বাংলাদেশের সফল গলফার সাখাওয়াত হোসেন সোহেল। ‘২ আন্ডার পার’ খেলে যৌথভাবে হয়েছিলেন ১৯তম। যেহেতু প্রথম আসরে অনেক প্রতিবন্ধকতার পরও ভালো করতে পেরেছিলেন তিনি। তাই এবার তার আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। সাখাওয়াত বলেন, ‘এবার আমি অনেক বেশি অনুশীলন করেছি। শারীরিক, মানসিক ও স্কীল সব দিক দিয়েই অনেক ভালো অবস্থানে আছি আমি। এখন শুধু মূল মঞ্চে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে চাই।’ শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মো. নাজিম ও লিটন হাওলাদারও। চমক দেখানোর অপেক্ষার রয়েছেন গত আসরে অ্যামেচার গলফার হিসেবে অংশ নিয়ে ‘কাট’ পাওয়ার দিল মোহাম্মদও। দেশের অন্য গলফাররাও নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

সর্বশেষ খবর