রবিবার, ৬ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইতিহাস গড়ার অপেক্ষা

বাংলাদেশ ভারত ফাইনাল আজ

মেজবাহ্-উল-হক

ইতিহাস গড়ার অপেক্ষা

হোক না ভারত। স্বপ্নের ফাইনালে তাদেরকে হারিয়ে ইতিহাস গড়তে চায় বাংলাদেশ। মাঠে নামার আগে শেষ প্রস্তুতিটা সেরে নিচ্ছেন সাকিব, সৌম্যরা —রোহেত রাজীব

আর মাত্র একটি ম্যাচ। জিতলেই সৃষ্টি হবে ইতিহাস। ক্রিকেটে এশিয়ার সেরা হয়ে যাবে বাংলাদেশ। এমন এক ম্যাচের আগে আবেগী না হয়ে উপায় আছে! টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া  গোটা দেশ আজ ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত। প্রান্তিক গ্রামের দিনমজুর থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আজকের ম্যাচ নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন।

আবেগ তাড়া করে ফিরছে মাশরাফিদেরও। এর আগে কখনো টি-২০-এর এত বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। আইসিসি টি-২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের দিকে তাকালেই পরিষ্কার হয়ে যায়- আজকের লড়াইটা হচ্ছে ১ নম্বর দলের সঙ্গে ১০ নম্বর দলের। এমন এক ফাইনালে অংশ নিতে গেলে মনের ভিতর বাড়তি আবেগ কাজ করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাশরাফি পা মাটিতেই দিয়ে রাখছেন। তাই খুব বেশি রোমাঞ্চিতও হচ্ছেন না। সতীর্থদেরও স্বাভাবিক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

যে কোনো ফাইনাল ম্যাচই অনেক বড় চাপ। কিন্তু গতকাল নিজেদের হালকা করতেই ভারতকে এক তরফা ‘ফেবারিট’ বলে দিলেন। এখানে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে হতেই পারে, মাঠে নামার পূর্বমুহূর্তে যখন ক্যাপ্টেন স্বয়ং প্রতিপক্ষকে অনেক বেশি শক্তিশালী হিসেবে ভাবছেন, তাহলে বোধহয় ম্যাচে আর বাড়তি লড়াই জমবে না! কিন্তু বিয়ষটা তেমন নয় মোটেও। মাশরাফির যা সামর্থ্য তা মাঠেই দেখাতে চান, মুখে নয়। অধিনায়ক মাশরাফি এখানেই আলাদা, তিনি কখনো প্রতিপক্ষকে হেয় করে কথা বলেন না।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের পেসাররা এই ভারতকে চেপে ধরার পরও তো তারা সদর্পে উঠে দাঁড়িয়েছিল। তাই সংযুক্ত আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে ফাইনালে ওঠার পরও ভারতকে হারাতে ভাগ্যের সহায়তা চাচ্ছেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে টাইগার দলপতি বলেন, ‘খেলার মাঠে আমরা শতভাগ দিয়েই চেষ্টা করব। নিজেদের যা করণীয়, সেটার সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করব। ভাগ্যের আশায়ও কিছুটা আছি আমরা, ভাগ্যকে পাশে পেলে ম্যাচ অবশ্যই আমাদের দিকে আসতে পারে।’ মাশরাফি আরও যোগ করেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের দলীয় একতা দারুণ। আর এটিই আমাদের মূল শক্তি। একে ধরে রাখতে চাই। দর্শক, মাঠ, ড্রেসিং রুম সব আমাদের পক্ষে। তবে এটাই শেষ কথা নয়, সবকিছু পক্ষে থাকলেই যে দিন আমাদের হবে, এর নিশ্চয়তা নেই।’

২০১২ সালেও এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। দুই রানের সেই হারটা এখনো টাইগারদের যন্ত্রণা দেয়। যেন জেতা ম্যাচে শেষ মুহূর্তে গিয়ে হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে এবারের ফাইনালটা ভিন্ন ফরম্যাটে, প্রতিপক্ষও ভিন্ন। কিন্তু প্রত্যাশা আগের চেয়েও অনেক বেশি। বাংলাদেশ দলের খেলাতেও গত চার বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে। সে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এবার বাংলাদেশই ভালো করবে বলে জানালেন ম্যাশ, ‘ও রকম পরিস্থিতি হলে আমরা ভালো করব। তবে এভাবে বলতে পারব না যে, চার বছর আগের সেই ফাইনালে এত কাছে গিয়েছি বলেই এবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। তবে টি-২০ খেলাটাই হলো সুনির্দিষ্ট দিনে যে ভালো খেলবে তারাই জিতবে।’

বাংলাদেশ আজ ফাইনালে মাঠে নামছে সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমানকে ছাড়াই। কিন্তু আগের ম্যাচে আল আমিন, তাসকিনরা তো বুঝতেই দেননি কাটার মাস্টারের অভাব। এটা দলের জন্য খুব ভালো দিক বলে মনে করেন মাশরাফি। তা ছাড়া ব্যাটিংয়েও দলে রয়েছেন তামিম, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, সৌম্যের মতো বিশ্ব মানের ব্যাটসম্যান। তাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।

আজকের ফাইনাল বাংলাদেশিদের জন্য যে কতটা রোমাঞ্চকর তা বোঝা যায় টিকিটের জন্য হাহাকার দেখেই। এক টিকিটের জন্য ৪৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেও কারও আপত্তি নেই। আজকের ম্যাচের জন্য একটি টিকিট ২০-৩০ গুণ বেশি দামেও কিনেছে অনেকে। ব্যাংকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পেয়ে অনেকে আবার নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন। দর্শকের এমন পাগলামি কিন্তু ক্রিকেটকে অতিরিক্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে যে উন্মাদনা হয়, তা বিশ্বে আর দেখা যায় না। টাইগাররা বড় কোনো ম্যাচ জিতলে গোটা দেশে মধ্যরাত পর্যন্ত আনন্দ উৎসব হয়। যে দেশে ক্রিকেটকে ধ্যান-জ্ঞান ভাবা হয় সেই ভারতেও এখন এত বেশি উন্মাদনা চোখে পড়ে না। তাই আজ ক্রিকেটপাগল ভক্তদের জন্যই এশিয়া কাপের শিরোপাটা জিততে চান মাশরাফি। ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শক্তি দর্শক। তারা সব সময়ই আমাদের সঙ্গে ছিল, এখনো আছে। দর্শক না থাকলে আমরা এতটা অনুপ্রাণিত হতাম না। আমাদের ক্রিকেট এই পর্যন্ত আসার পেছনে জনসাধারণের অনেক অবদান আছে। অনেক ত্যাগও আছে। এটা আমাদের জন্য ভালো একটি সুযোগও। আমরা যদি ভালো খেলতে পারি, ভালো কিছু করতে পারি, তাহলে অবশ্যই সবাই খুশি হবে। সেটাই চাই।’

সর্বশেষ খবর