রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইডেন কাঁপল মুস্তাফিজে

ইডেন কাঁপল মুস্তাফিজে

রীতিমতো ইডেনে ঝড় তুললেন মুস্তাফিজ। নিউজিল্যান্ডের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠান তিনি। কিন্তু তার বীরত্বের পরও শোচনীয় হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা —এএফপি

বাংলাদেশকে যেন প্রতিপক্ষই বানিয়ে ফেলেছে কলকাতাবাসী! গতকাল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচেও স্থানীয় বাঙালিরা সমর্থন  দেয়নি টাইগারদের। অথচ ভারতের মঙ্গল কামনা করে হলেও গতকাল বাংলাদেশকেই সমর্থন করার কথা ছিল। কেননা কিউইরা হারলে পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জিতলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল ভারতের। কিন্তু এসব গাণিতিক হিসাবের আশপাশ দিয়ে যান কলকাতাবাসী।

গ্যালারিতে মাশরাফিদের পক্ষে যতটুকু সমর্থন ছিল কেবল বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালিরাই করেছে। তবে মুস্তাফিজের  বেলায় গ্যালারির চিত্র ছিল ভিন্ন রকম! কাটার মাস্টারের প্রতিটি উইকেট শিকারে ইডেন যেন কেঁপে উঠছিল। আর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রতিনিধি হয়ে মুস্তাফিজ ছক্কাটি হাঁকালেন, তারপর যেন গর্জন উঠল। তা যেন ছড়িয়ে পড়ল পুরো ভারতবর্ষে!

আসলে কালকের ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে গলা ফাটানোর খুব একটা উপলক্ষ ছিল না। কিন্তু ব্যাটিংয়ের সময় একমাত্র ছক্কাটি আসে মুস্তাফিজের ব্যাট থেকেই। আর বোলিংয়ে কাটার মাস্টার সৃষ্টি করলেন আরেক ইতিহাস। মাত্র ২২ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিং ফিগার তো বটেই, চলতি আসরে এখন পর্যন্ত এটিই সেরা! তবে টি-২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে পঞ্চম সেরা বোলিং। ২০১২ সালের বিশ্বকাপে হাম্বানটোটায় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে মাত্র ৮ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন লঙ্কান স্পিনার অজান্তা মেন্ডিস। এ ছাড়া রেকর্ডবুকে মুস্তাফিজের সামনে থাকা রঙ্গনা হেরাথ, ওমর গুল ও এহসান মালিক— তিন বোলারই ৫টি করে উইকেট পেয়েছেন। সব মিলে টি-২০-তে বাংলাদেশি বোলারের মধ্যে মুস্তাফিজ দ্বিতীয় সেরা  বোলিং ফিগারের মালিক। এর আগে ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৩ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ইলিয়াস সানি।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুপার টেন-এর প্রথম ম্যাচে মুস্তাফিজ ছিলেন দর্শক। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে সতীর্থদের অসহায়ত্ব দেখেছেন। হয়তো তখনই আক্ষেপ জন্মেছিল মুস্তাফিজের মনে। কাল কিউই ব্যাটসম্যানদের ওপর যেন সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে। টি-২০-তে ইডেনে মুস্তাফিজই এখন সেরা বোলার। এর আগে আন্তর্জাতিক টি-২০-তে ক্রিকেটের এই নন্দন কাননে কোনো বোলারের এই কৃতিত্ব নেই।

মুস্তাফিজের বোলিংয়ের রহস্য এখনো আবিষ্কার করতে পারেননি  কোনো ব্যাটসম্যান। কাটার মাস্টার বল হাতে নিলেই কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। গতকাল কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন অসাধারণ ব্যাটিং করলেও যখনই মুস্তাফিজের সামনে পড়েছেন বিব্রতবোধ করেছেন। ৪২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলার পরও উইলিয়ামসন মুস্তাফিজের বলে আউট হয়েছেন বোকার মতো। তার পেছন দিয়ে বল গিয়ে মিডল স্টাম্প ভেঙে যায়। তাই ম্যাচ শেষে মুস্তাফিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কিউই অধিনায়ক। কেন উইলিয়ামসন বলেন, ‘উইকেট শিকারের দিক দিয়ে অসাধারণ এক বোলার মুস্তাফিজ। তার স্লোয়ার বলগুলো অসাধারণ। খুবই চমত্কার বোলিং করেছেন তিনি। মুস্তাফিজের কারণেই আমরা বেশ সমস্যায় পড়েছিলাম।’

নিউজিল্যান্ডের আরেক মারকুটে ব্যাটসম্যান রস টেলর বলেন, ‘মুস্তাফিজ সত্যিই ব্রিলিয়ান্ট এক বোলার। এখানের কন্ডিশন সে খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পেয়েছে। ব্যাটসম্যানদের কোথায় দুর্বলতা তা বুঝেই সে বোলিং করে। তার বল খেলা খুবই কঠিন।’ কাটার মাস্টারকে সবসময় খুব কাছ থেকে দেখেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। কাটার মাস্টার সম্পর্কে বলেন, ‘মুস্তাফিজকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। আজ সে ৫ উইকেট নিয়েছে। আমার বিশ্বাস, সামনে অন্তত ১০ বছর সে এভাবেই দলকে সহযোগিতা করে যাবে। সত্যি মুস্তাফিজ এক অসাধারণ বোলার।’ কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে বলেন, ‘মুস্তাফিজ খুবই মেধাবী এবং চালাক। সে ব্যাটসম্যানের মুভমেন্ট দ্রুত বুঝতে পারে। সে কারণেই সফল হয়। আমার বিশ্বাস, সামনে সে আরও ভালো করবে।’ কিন্তু মুস্তাফিজের দাপুটে বোলিংয়ের পরও কাল ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় লজ্জায় ডুবতে হয় বাংলাদেশকে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ৭০ রানে অলআউট হয়েছে। এটিই টি-২০-তে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রানের নতুন লজ্জা। গতকাল মাত্র ১৫.৪ ওভারেই গুটিয়ে যায় টাইগারদের ইনিংস। মাশরাফিদের ইনিংসে বাউন্ডারি এসেছে মাত্র ৪টি। আর ছক্কাটি তো মুস্তাফিজই হাঁকিয়েছেন। তাই ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশের অন্ধকারময় দিনেও আলো জ্বালিয়েছেন সাতক্ষীরার এই সুপারম্যান। দলীয় লজ্জার দিনেও ইডেন কাঁপিয়ে দিলেন মুস্তাফিজ।

নিউজিল্যান্ড ইনিংস : ১৪৫/৮, ২০ ওভার; বাংলাদেশ ইনিংস : ৭০/১০, ১৫.৪ ওভার

ইংল্যান্ড ইনিংস : ১৭১/৪, ২০ ওভার; শ্রীলঙ্কা ইনিংস : ১৬১/৮, ২০ ওভার

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর