সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

তাসকিন সানিকে হারানোটা ছিল বড় ধাক্কা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তাসকিন সানিকে হারানোটা ছিল বড় ধাক্কা

দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সকালের সূর্য তখন মাত্র তেজ ছড়ানো শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকার রাস্তাগুলো ব্যস্ত হয়ে উঠছে যানবাহনের ভিড়ে। ব্যস্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও। বিমানবন্দরের বাইরে প্রিয়জনকে বরণ করতে অপেক্ষমাণ জনতার ভিড়। মিডিয়া কর্মিরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছেন বিমান বন্দরের ভিআইপি ট্রানজিটে। ইতিউঁতি অপেক্ষা সবার, কখন বিমান থেকে টারমাকে পা রাখবেন মাশরাফি, তামিম, মুস্তাফিজরা। অবশেষে পৌনে ৯টায় অপেক্ষার অবসান। ভালো-মন্দের টি-২০ বিশ্বকাপ শেষ করে কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় পা রাখেন মাশরাফি বাহিনী। মাশরাফিরা ঢাকায় আসলেও সঙ্গী ছিলেন না শুভাগত হোম ও ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হালসাল। ব্যক্তিগত কাজে কলকাতা রয়ে গেছেন শুভাগত এবং হালসাল লন্ডন উড়ে গেছেন ছুটি নিয়ে।

টি-২০ ক্রিকেটে এমনিতে মাশরাফিদের সঙ্গে যায় না। ওয়ানডে ক্রিকেট যতটা ভালো বুঝে, ঠিক ততটা নয় টি-২০ ক্রিকেটে। তারপরও বড় স্বপ্ন নিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন মাশরাফিরা। মেঘ আর পাহাড়ের সৌন্দর্য্যে ঘেরা ধর্মশালায় বাছাইপর্বে নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও ওমানকে হারিয়ে জায়গা করে নেয় সুপার টেনে। সুপার টেনের চার ম্যাচের চারটিতেই হারে। কিন্তু আলো ছড়িয়ে জায়গা নেয় নতুন উচ্চতায়। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে যে মানের ক্রিকেট খেলেন মাশরাফিরা, তাতে মুগ্ধ ক্রিকেটবিশ্ব। মুগ্ধতা ঝড়েছে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কণ্ঠে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছিল। এরপর একাদশের মূল দুই ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানিকে ছাড়া খেলতে নামে। ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ৪০ ওভারের ম্যাচে ৩৯.৩ ওভার পর্যন্ত চালকের আসনে ছিল বাংলাদেশ। ১৪৭ রান তাড়া করতে নেমে ১৯.৩ ওভারে মাশরাফিবাহিনীর সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ১৪৫ রান। জয় যখন সময়ের ব্যাপার, তখনই ১৯.৪ ও ১৯.৫ ওভারে আত্মাহৃতি দেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দুই প্রতিষ্ঠিত তারকার বিদায়ের পরও জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল ছিল বাংলাদেশের। শেষ বলে দরকার ২ রান। এক রান নিয়ে টাই হতো এবং খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হতো সুপার ওভারে। সেই সুযোগ হাতছাড়া করেন শুভাগত ও মুস্তাফিজ। হার্দিক পান্ডের শর্ট বল ব্যাটে লাগাতে না পেরে উল্টো রানআউট হন মুস্তাফিজ। আর তাতেই টি-২০ বিশ্বকাপের চলতি আসরে সবচেয়ে উত্তেজনাকর খেলায় হেরে যায় বাংলাদেশ। ১ রানের দুঃখজনক হারে হতাশায় মুষড়ে পড়ে গোটা দেশ। বিমানবন্দরে নেমে মিডিয়ার মুখোমুখিতে সেই হতাশার কথাই বলেন মাশরাফি, ‘ভারতের বিপক্ষে দল যেভাবে হেরেছে, তাতে আমি সত্যিই হতাশ। অবশ্য এটাও ঠিক যে, টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে আমার অনেক ইতিবাচক দিক পেয়েছি। যা ভবিষ্যতে আমাদের টি-২০ ক্রিকেটে কাজে লাগবে।’

অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে বেশ বড়সড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হওয়ায় সাময়িক নিষিদ্ধ হন তাসকিন ও আরাফাত। ম্যাচ শুরুর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তামিম। ফলে তিন ক্রিকেটারকে ছাড়া খেলতে নামে বাংলাদেশ। তাসকিন ও আরাফাতকে হারানোটা বিরাট বড় ধাক্কা ছিল বলেন টাইগার অধিনায়ক, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে তাসকিন ও আরাফাতের নিষেধাজ্ঞাটা দলকে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছিল। তামিমও খেলতে পারেননি। সব মিলিয়ে আমরা খুব চাপে ছিলাম। তারপরও আমি মনে করি আমরা ম্যাচে ছিলাম বেশ ভালোভাবেই।’ নিষিদ্ধ হলেও তাসকিন দ্রুত ফিরবেন বলে বিশ্বাস করেন মাশরাফি, ‘তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন যখন শুনলাম অবৈধ, তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। বিশ্বাস হচ্ছিল না। অনেকেই বিশ্বাস করেনি। তবে তার অ্যাকশনের যে ত্রুটি ধরা হয়েছে, সে বাউন্সার মারার বিষয়টি আমি মনে করি ঠিক করে ফেলবে সে। বিশ্বাস করি সব শুধরে তাসকিন আবার ফিরবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।’

টি-২০ বিশ্বকাপে ডাগ আউটে বসে কাটিয়েছেন নাসির হোসেন। এ নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা বিরক্ত। নাসিরকে না খেলানোর ব্যাখ্যায় মাশরাফি বলেন, ‘এটা টিম ম্যানেজমেন্টের বিষয়। দলের কম্বিনেশনের কথা চিন্তা করেই তাকে খেলান হয়নি।’

সর্বশেষ খবর