মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

কমিটি আসে কমিটি যায় ফুটবলে নেই উন্নয়ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কমিটি আসে কমিটি যায় ফুটবলে নেই উন্নয়ন

ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন শিডিউল ঘোষণা করা হয়েছে। ৩০ এপ্রিল নির্বাচনের মাধ্যমে চার বছর মেয়াদে বাফুফের নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন হবে। মান যতই কমে যাক, ফুটবল বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা। তাই নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ সৃষ্টি হয়। এখন পর্যন্ত সেই ধরনের উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে গ্রুপিং লবিং শুরু হয়ে গেছে। তবে এবারে নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা নয়, সংঘাতের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফেডারেশনও একটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। নির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে কাজী সালাউদ্দিন সভাপতির দায়িত্বে থাকতে চাচ্ছেন। অর্থাৎ এবারও তিনি এই পদে প্রার্থী হবেন তা অনেকটাই নিশ্চিত। গত দুই নির্বাচনে যারা সালাউদ্দিনের পক্ষে কাজ করেছিলেন তাদের অনেকেই আবার সভাপতির কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট। বিশেষ করে শেখ জামালের সভাপতি মনজুর কাদের বরাবরই ছিলেন সালাউদ্দিনের পাশে। তাদের বন্ধুত্বে যে ফাটল ধরবে কেউ ভাবতেও পারেনি।

সেই মনজুর কাদের এখন সালাউদ্দিনের বিপক্ষে। এ ব্যাপারে কাদেরের বক্তব্য হচ্ছে আমরা কারও বিরুদ্ধে নয়। ফুটবলকে বাঁচাতে চাই। যাদের হাতে ফুটবল নিরাপদ নয় তাদের আর দায়িত্ব দেওয়া যায় না। তার বক্তব্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সালাউদ্দিন বা বর্তমানে ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসে থাকা কর্মকর্তারা নির্বাচন করলে তাদের বিপক্ষে শক্তিশালী প্রার্থী দেওয়া হবে এটা নিশ্চিত। নির্বাচনকে ঘিরে সব সময় উত্তেজনা দেখা যায়। এবারও হবে, নির্বাচন জমজমাট হোক ফুটবলপ্রেমীরাও প্রত্যাশা করে। কিন্তু দেশের ফুটবলে করুণ দশা কীভাবে কাটানো যায় সেদিকে কি কারোর নজর আছে। এখানে গদিতে বসার লড়াই করে কোনো লাভ হচ্ছে না। ফেডারেশনে কতই না পরিবর্তন হলো, কিন্তু ফুটবল ঘুরে ফিরে সেই হতাশায় বন্দী। এটা সত্য এক সময় আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা থাকলেও বাংলাদেশের ফুটবলের মান কখনো গর্ব করার মতো ছিল না। তবে গত কয়েক বছর ধরে যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশের ফুটবল বেঁচে থাকবে কিনা এ নিয়ে সবাই শঙ্কিত। কেন এই অবস্থা?

আগে বলা হতো ফুটবলের লোক নেই বলে মানের উন্নয়ন ঘটানো যাচ্ছে না। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে খ্যাতনামা ফুটবলাররতো ফেডারেশন পরিচালনা করছেন। সালাউদ্দিন সভাপতি, সালাম মুর্শেদী সিনিয়র সহ-সভাপতি, বাদল রায় সহ-সভাপতি, আরিফ খান জয় সহ-সভাপতি, শেখ মো. আসলাম (মাস খানেক আগে পদত্যাগ করেন), হাসানুজ্জামান বাবলু, সত্যজিত দাশ রুপু, এর আগের মেয়াদে ছিলেন খোরশেদ বাবুল। নামকরা ফুটবলাররা ফেডারেশনের দায়িত্বে থাকার পরও ফুটবলে বেহাল দশা কেন?

অন্যদের কথা বাদই দিলাম, সালাউদ্দিন সভাপতি হওয়ার পর অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, এতদিনে যোগ্য অভিভাবক খুুঁজে পেল ফুটবল। এরপরও লাইফ সার্পোটে ফুটবল। ক্রিকেটে যেখানে আলোর ঝলকানি, সেখানে ফুটবল অন্ধকারে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব চারিদিকে শুধুই হাহাকার। কিছু বললে সভাপতি বলেন, উন্নতির জন্য টাকা দরকার। অথচ সভাপতি হওয়ার পর সালাউদ্দিনই বলেছিলেন, টাকা কোনো ফ্যাক্টর নয়। এখন তাহলে অর্থের অজুহাত দাঁড় করাচ্ছেন কেন? আর ফুটবল উন্নয়নে অর্থ ফ্যাক্টর তা কি বিশ্বাস করা যায়? দেশে এত কর্পোরেট হাউস আছে তাদের কি কাজে লাগানো যেত না। যদিও প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি, তারপর শোনা যাচ্ছে গতবার ও এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ঘিরে যে ফান্ড মিলেছে তা অবিশ্বাস্য। ফিফা ও এএফসি থেকে মোটা অংকের অনুদান আসছে। এরপর ধরলাম ফেডারেশনে পর্যাপ্ত ফান্ড নেই। কিন্তু বিলাসিতাতো ঠিকই আছে। ঢাকার বাইরে ভেন্যু দেখতে গেলে হেলিকপ্টার চড়তে হবে। বড় বড় হোটেলে অনুষ্ঠান করতে হবে। আর ফুটবলারদের বেলায় শুধু টাকা নেই। পেশাদারিত্বে যুগে জাতীয় দলে এখন বেতন চালু হয়নি। এমনকি সামান্য বীমাও নেই এটা কি ভাবা যায়।

বর্তমান কমিটি ব্যর্থ। এখন সামনে যদি নতুন কারও নেতৃত্বে বাফুফের কমিটি গঠন হয়। তাহলে কি ফুটবলে ভালো কিছু আশা করা যায়। ফুটবল নিয়ে শুধু ফুটবলপ্রেমীদের হাহাকার কিন্তু যারা দায়িত্ব পান তারা কি সেটা উপলব্ধি করেন। নির্বাহী কমিটির অনেক সভা হয় আজ পর্যন্ত কোনো সভায় ফুটবলের দুর্দশা কীভাবে কাটানো যায় তা নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে। দম আর গতি নেই বলে ফুটবলারদের তিরস্কৃত করা হচ্ছে। ফেডারেশন কি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে। আশ্চর্য লাগে ফুটবলারদের ফিটনেসের জন্য ফুটবলে এখন পর্যন্ত আলাদা জিম করতে পারেনি। নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা হয় আবার থেমে যায়। কিন্তু ফুটবলে মান নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। তাহলে কি গদিটাই বড়, আর ফুটবল হচ্ছে তুচ্ছ। এভাবেই কী কাটবে দেশের ফুটবল?

সর্বশেষ খবর