বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

‘অস্থিরতা থেকে মুক্তি চাই’

ক্রীড়া প্রতিবেদক

‘অস্থিরতা থেকে মুক্তি চাই’

ফুটবলারদের দলবদল নিয়ে নাটক নতুন কিছু নয়। একজন ফুটবলার নতুন মৌসুমের জন্য কোনো ক্লাবে যোগ দিলেও পাল্টা অন্য ক্লাব থেকে অগ্রিম পেমেন্ট নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। একাধিকবার এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু দুই ক্লাবের সমঝোতায় সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। দুই ক্লাবের অর্থ নেওয়ার দায়ে নব্বই দশকে তারকা ফুটবলার মোনেম মুন্নাকে বহিষ্কার করেছিল আবাহনী। পরে তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে তা তুলে নেওয়া হয়। কখনো কোনো ক্লাব এ নিয়ে মামলার চিন্তা করেনি। কয়েক বছর আগে এক ক্লাব মামলা করতে গেলে আদালত তা গ্রহণ করেননি। কোর্ট বলে দিয়েছিলেন, ‘খেলাধুলার আবার মামলা কী! নিজেরা বসেই সমাধান করে নিন।’

এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব আইনের আশ্রয় নিয়েছে। গত মৌসুমে খেলা তাদের আট ফুটবলার ভালো অফারে এবার বিভিন্ন দলে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম আবাহনী পাঁচ, শেখ রাসেলে দুই ও ঢাকা আবাহনীতে একজন যোগ দেন। কিন্তু শেখ জামাল বলছে তাদের দলবদল অবৈধ। কেননা তাদের দলে থাকবেন বলে এরা অগ্রিম পেমেন্ট নিয়েছেন। বাফুফের কাছে শেখ জামাল লিখিত অভিযোগ করে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাফুফেই সাধারণত বিষয়টি নিষ্পত্তি করে। শেখ জামালের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে বাফুফের প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি বৈঠকে বসে। যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আট ফুটবলার নতুন দলে খেলতে পারবেন। কিন্তু শেখ জামাল বসে না থেকে আইনের আশ্রয় নেয়। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। আদেশ দেওয়া হয়, আট ফুটবলার শেখ জামাল ছাড়া অন্য ক্লাবে খেলতে পারবেন না। আইনি ব্যাখ্যা চেয়ে বাফুফের কাছে চিঠিও দিয়েছিলেন কোর্ট। কিন্তু বাফুফে এ রুলকে চ্যালেঞ্জ করে আপিলে যায়। এরপর সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সুপ্রিমকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে।

সোমবার আপিল বিভাগ দুই পক্ষের বক্তব্য শোনেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বহাল রাখেন। অর্থাৎ আট ফুটবলার শেখ জামাল ছাড়া অন্য কোথাও খেলতে পারবেন না। ক্লাব সভাপতি মনজুর কাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আট ফুটবলারকে ফিরে আসার আহ্বান জানান। অন্যদিকে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, আট ফুটবলার কোথায় খেলবেন তার নিষ্পত্তি হবে বিচারিক আদালতে।

শেখ জামাল আইনের আশ্রয় নিলেও তিন ক্লাব কিন্তু নিয়ম মেনেই আট ফুটবলারের রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে। কেননা ১৯ জানুয়ারি বাফুফে যখন ঘোষণা দেয়, ফুটবলারদের দুয়ার খোলা। যে যার পছন্দের দল বেছে নিতে পারবেন। এরপরই চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ রাসেল ও ঢাকা আবাহনী মাঠে নামে। আট ফুটবলারের মধ্যে জামাল ভূঞাও রয়েছেন। তিনি যোগ দিয়েছেন শেখ রাসেলে। এএফসি কাপ খেলতে শেখ জামাল যখন দেশের বাইরে গেল তখন জামাল ভূঞাকেও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। শেখ জামাল দাবি করছে জামাল ভূঞা তাদের। অথচ এই ক্লাব শেখ রাসেলকে চিঠি দিয়েছিল। যেখানে লেখা আছে— ‘আপনাদের নিবন্ধিত খেলোয়াড় জামাল ভূঞাকে আমরা এএফসি কাপে নিতে চাই।’ এএফসি কাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে শেখ জামাল। তাই দেশের স্বার্থে জামালে খেলার অনুমতি দিয়েছিল শেখ রাসেল। প্রশ্ন উঠেছে, শেখ জামাল যেখানে জামাল ভূঞাকে শেখ রাসেলের নিবন্ধিত খেলোয়াড় বলে উল্লেখ করেছে তাহলে আটজনের তালিকায় তার নাম থাকল কেন?

প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থেকে ফুটবলাররা চোখের পানি ফেলেছেন। বলেছেন, জোরপূর্বক শেখ জামাল তাদের স্বাক্ষর নিয়েছে। সে কারণে ধারণা করা হচ্ছিল ফুটবলাররা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে আইনের আশ্রয় নেবেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম মৌসুমে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক নিয়ে শেখ জামাল ছেড়ে এবার চট্টগ্রাম আবাহনীতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোর্ট তো নির্দেশ দিয়েছেন শেখ জামালে খেলতে হবে। গতকাল মামুনুলের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। তবে আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।’ তাহলে কি শেখ জামালে খেলবেন? ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত যা সিদ্ধান্ত দেবেন তা মেনে নিতে হবে। তবে আমি সব কিছুর সুষ্ঠু সমাধান চাই। আমি এক দলে খেলব বলে স্বাক্ষর করেছি এবং পারিশ্রমিকও নিয়েছি। কোর্টের নির্দেশে আমাকে যদি শেখ জামালে খেলতেই হয় তাহলে চট্টগ্রাম আবাহনী আমাকে যে অর্থ দিয়েছে তা পুরোটাই শোধ করতে হবে শেখ জামালকে। বাফুফে, শেখ জামাল, চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ রাসেল ও ঢাকা আবাহনী বিষয়টি যত দ্রুত নিষ্পত্তি করবে ফুটবলারদের জন্য তা মঙ্গলজনক হবে। কেননা এ অস্থিরতা থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

সর্বশেষ খবর