বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

আবাহনী-মোহামেডানের নির্বাচনী লড়াই

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আবাহনী-মোহামেডানের নির্বাচনী লড়াই

১৯৯৮ সাল থেকে ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার জন্য তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নির্বাচনের উদ্যোগ নেন। সেই থেকে ক্রীড়াঙ্গন পরিচালিত হচ্ছে নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে। বড় দুই ফেডারেশনের নির্বাচন আসলে ক্রীড়াঙ্গন যেন ঈদ উৎসবে পরিণত হয়। ৩০ এপ্রিল বাফুফের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের উত্তেজনা পুরোপুরি ভিন্ন। সালাউদ্দিন-মনজুর কাদেরের নেতৃত্বাধীন প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। প্যানেলের বাইরে থেকেও অনেকে নির্বাচন করছেন। মনোয়নপত্রের মূল্য আকাশছোঁয়া হলেও নির্বাচনে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। সভাপতি পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জয় নিশ্চিত করতে প্রার্থীরা প্রচার অভিযান শুরু করে দিয়েছেন। কে জিতবেন বা হারবেন হিসাবনিকাশ শুরু হয়ে গেছে।

বাফুফে নির্বাচনে সাবেক ফুটবলারা অংশ নিচ্ছেন আগে থেকেই। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে ফুটবলারদের অংশ নেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। ফুটবলার হিসেবে বাফুফের প্রথম সভাপতি ছিলেন হাফিজউদ্দিন। কিন্তু প্রথম নির্বাচিত সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ২০০৮ ও ২০১২ সালে তিনি নির্বাচিত হন। এবারও সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বলা যায় এই প্রথম সালাউদ্দিনকে কঠিন লড়াইয়ে সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সিনিয়র সহসভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল এক সময়ে মাঠ কাঁপানো দুই ফুটবলার সালাম মুর্শেদী ও দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল। গতকাল টুটুল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে সালাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। সহসভাপতি পদেও একাধিক তারকা ফুটবলার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সদস্য পদেও ফুটবলারের কমতি নেই।

ফুটবল নির্বাচনে ফুটবলারদের ছড়াছড়ি। এবার লক্ষণীয় ব্যাপার যে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা মোহামেডান ও ঢাকা আবাহনীর একাধিক অধিনায়ক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শেষ পর্যন্ত কারও মনোনয়পত্র যদি বাতিল না হয় তাহলে আবাহনীর আট ও মোহামেডানের পাঁচ সাবেক অধিনায়ক ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অংশ নেবেন। এটা ঠিক ফুটবলে দুই দলের আগের সেই জৌলুস নেই। পেশাদার লিগে আবাহনী চারবার শিরোপা জিতলেও মোহামেডানের কপালে একবারও জোটেনি। ২০০২ সালে তারা শেষবারের মতো লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এখন শক্তিশালী কিংবা তারকানির্ভর দল গড়ছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল। চট্টগ্রাম আবাহনীও এবার শক্তিশালী দল গড়েছে। তারপরও ক্রীড়াঙ্গনে আবাহনী ও মোহামেডানের গুরুত্ব কমে যায়নি। দুই দলের তারকারা নির্বাচনে কি করবেন এনিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের ঠিকই আগ্রহ রয়েছে। সভাপতি পদে এবার চারপ্রার্থী, কিন্তু ফুটবলার হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাজী সালাউদ্দিন ও গোলাম রব্বানী হেলাল। দুজনই আবাহনীর নির্ভরযোগ্য তারকা ছিলেন। তবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সালাউদ্দিনই। ১৯৭৫ সালে মারদেকা কাপে জাতীয় দলের পাশাপাশি আবাহনীরও অধিনায়ক হন। কিন্তু তার নেতৃত্বে আবাহনী কোনো ট্রফি জিততে পারেনি।

সিনিয়র সহসভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোহামেডানের সালাম মুর্শেদী। ১৯৯৩ সালে তিনি ঐতিহ্যবাহী দলের অধিনায়ক হন। ফেডারেশন কাপে ট্রফি জিতলেও সেবার লিগে রানার্সআপ হয় মোহামেডান। মাঠ কাঁপানো ফুটবলার আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু সহসভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯৭৯ সালে তিনি আবাহনীর অধিনায়ক ছিলেন। সেবার তার দল রানার্সআপ হয়। বাদল রায়কে মোহামেডানের প্রাণভোমরা বলা হতো। এবারও সহসভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুইবার ঐতিহ্যবাহী দলটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার সৌভাগ্য তার হয়েছে। ১৯৮১ ও ১৯৮৬ সাল। প্রথমবার ফেডারেশন কাপ ট্রফি জিতলেও ১৯৮৬ সালে তার নেতৃত্বে মোহামেডান অপরাজিত লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। মধ্যমাঠের সাড়া জাগানো ফুটবলার খুরশিদ আলম বাবুল। ১৯৮১ সালে তার নেতৃত্বে আবাহনী লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়।

সদস্য পদেও দুই প্রধানের লড়াই। শেখ মো. আসলাম ১৯৮৭ সালে  আবাহনীর অধিনায়ক হন। শিরোপা নয়, সেবার তার দল লিগে রানার্সআপ হয়। রক্ষণভাগে চীনের প্রাচীর বলে খ্যাত কায়সার হামিদ এবারই প্রথম বাফুফে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে তিনি মোহামেডানের অধিনায়ক হন। ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হলেও লিগে সাদা-কালোরা হয় রানার্সআপ। সত্যজিত দাশ রুপু ২০০৮ ও ২০১২ সালে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। লিগ শিরোপা এনে দেন দলকে। রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির। দেশের ফুটবলে পরিচিত মুখ। সদস্য পদে এটি তার দ্বিতীয় নির্বাচন। ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তিনি ছিলেন মোহামেডানের অধিনায়ক। প্রথমবার ডামফা কাপ ও লিগ উপহার দিলেও দ্বিতীয়বার তার নেতৃত্বে মোহামেডান ছিল ট্রফিহীন। ইমতিয়াজ সুলতান জনি ঠাণ্ডা মাথায় ফুটবল খেলতেন। এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ১৯৮৫ সালে তারই নেতৃত্বে আবাহনী হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় করে। ইলিয়াস হোসেন, ১৯৮৬ সালে আবাহনীর বিপক্ষে তার দেওয়া গোলটি এখনো চোখে ভাসে। ১৯৮৮ সালে মোহামেডানের নেতৃত্ব পান। সেবারই মোহামেডান লিগে অপরাজিত হ্যাটট্রিক শিরোপার রেকর্ড গড়ে। ডিফেন্ডার ইকবাল হোসেন ২০০০ সালে আবাহানীকে নেতৃত্ব দেন।

সর্বশেষ খবর