সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইশতেহার জুড়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ইশতেহার জুড়ে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি

বাফুফে নির্বাচনী লড়াই তুঙ্গে। ৩০ এপ্রিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে সম্মিলিত পরিষদ ও মনজুর কাদেরের নেতৃত্বাধীন বাঁচাও ফুটবল পরিষদ পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অনেকে আবার প্যানেল ছাড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শুক্রবার সালাউদ্দিন ও গতকাল কাদেরের প্যানেল নির্বাচনে জিতলে তাদের করণীয় কি হবে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। দুই প্যানেলের লক্ষ্য অভিন্ন, ফুটবলের উন্নয়ন। কাদের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তবে শক্তিশালী প্যানেল দাঁড় করিয়েছেন। বাফুফের ২১টি কার্যনির্বাহী পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ২০০৮ ও ২০১২ সালে জয়ী হয়ে বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন। এবারও তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ঘোষণা দিয়েছেন এটিই তার শেষ নির্বাচন। ‘বাঁচাও ফুটবল পরিষদ’ সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন কামরুল আশরাফ খান। নরসিংদী-২ আসন থেকে জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার গোলাম রব্বানী হেলাল প্যানেলের বাইরে থেকে সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। আরেক প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলেও তিনি ঘোষণা দিয়েছেন সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন না। কামরুলের পক্ষে প্রচার অভিযানে অংশ নেবেন।

কে হচ্ছেন ফুটবলের অভিভাবক এনিয়ে আলোচনার শেষ নেই। দুবার জয়ী হলেও সালাউদ্দিন বলছেন, এবার নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জের। ফুটবলে বাংলাদেশের কিংবদন্তি সালাউদ্দিন। হেলালও জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন। সে তুলনায় কামরুলকে একেবারে নতুন বা অপরিচিত মুখ বললেও ভুল হবে না। তবে কাল মনজুর কাদের বলেছেন, ‘ফুটবলের লোক হয়েও ফুটবলে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয় তা আমরা প্রমাণ পেয়েছি আট বছরে। দেশের ফুটবল উন্নয়নের জন্য আমরা দুবার সালাউদ্দিনকে নির্বাচিত করেছি। অথচ স্বেচ্ছাচারিতা করে দেশের ফুটবলকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমরা তাই ‘কামরুল ভাইকে’ সভাপতি প্রার্থী করেছি। তিনি বলেন, আমাদের প্রার্থী ফুটবলার ছিলেন না ঠিকই তার মানে এই নয় যে তিনি জিতলে ফুটবলের উন্নয়ন হবে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি নাজমুল হাসান পাপনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তিনি তো ক্রিকেটার ছিলেন না তার নেতৃত্বে ক্রিকেটের উন্নয়ন কি ঘটছে না? শুধু পাপন কেন ১৯৯৭ সালের পর যারা বিসিবি সভাপতি হয়েছেন তারা তো ক্রিকেটার ছিলেন না। এরপরও ক্রিকেটের এত অগ্রগতি হলো কেন? যোগ্য নেতৃত্বেই এটা সম্ভব হয়েছে। সালাউদ্দিন নেতৃত্ব দিতে                   ব্যর্থ শুধু উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি ‘কামরুল ভাই’ ও আমাদের প্যানেল জয়ী হলে মৃতপ্রায় ফুটবল জেগে উঠবে।

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোজাফফর হোসেন পল্টু অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এক সময়ে আমি ছিলাম ফুটবলের নিয়মিত দর্শক। এখন আর মাঠে যাই না, কারণ ফুটবলের মান নিচে নেমে গেছে। ফুটবল উন্নয়নে পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। আমি বিশ্বাস করি, শুধু নামে নয়, নির্বাচনে জিতলে ‘বাঁচাও ফুটবল’ ফোরাম ফুটবলকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলবে।’ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু ও সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার টিপু ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেলকে জয়ী করার আহ্বান জানান। ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি চৌধুরী ইসমাইল সম্রাটও বক্তব্য দেন। সভাপতি প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান বলেন, ‘আমি কারও সমালোচনা করতে চাই না। কিন্তু খারাপ লাগে ফুটবল বাঙালির প্রাণ ও মনের খেলা। তার জন্য ‘বাঁচাও ফুটবল পরিষদ’ গঠন হয়েছে। আমাকে এই প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী করা হয়েছে। অনেকে বলছেন, আমি ফুটবলের লোক নই, তাই নির্বাচিত হলে কি সেবা করব। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই বিশ্বের যে নামকরা ক্লাবের মালিকরা আছেন তাদের ভিতর কেউ ফুটবলার ছিলেন কিনা? তাছাড়া ফিফার যারা সভাপতি ছিলেন তারা সবাই ফুটবল খেলতেন কীনা? এটা ঠিক আমি কখনো ফুটবল খেলিনি। তবে ক্রীড়াঙ্গনের অনেকে আমার পরিচিত। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ও শেখ জামাল ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমার ওপর আস্থা আছে বলে তারা আমাকে সভাপতি প্রার্থী করেছেন। ‘সালাউদ্দিন ভাই’ খুব বড় মাপের খেলোয়াড় ছিলেন। আমিও তার ভক্ত ছিলাম। কিন্তু সভাপতি হিসেবে ফুটবলের উন্নয়ন ঘটাতে পারেননি। বর্তমান ফুটবলের যে দশা হুট করে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তবে কথা দিচ্ছি নির্বাচিত হলে ফুটবল উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়ব। ৬৪টি জেলার সংগঠকরা আমাদের প্যানেলের পক্ষে কাজ করা শুরু করছেন। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ঘোষণা দিচ্ছি নির্বাচনে হেরে গেলেও ফুটবল উন্নয়নে সেবক হিসেবে কাজ করার। ইশতেহারে ‘বাঁচাও ফুটবল পরিষদ’ ১৪টি পয়েন্ট তুলে ধরে। যার প্রতিটি হচ্ছে পরিবর্তন ও উন্নয়নের প্রতিপক্ষ। ওয়েস্টিন হোটেলে সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে প্যানেল ঘোষণা করেন এই পরিষদের অন্যতম রূপকার ঢাকা মোহামেডানের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঞা। প্রার্থীরা হচ্ছেন সভাপতি কামরুল আশরাফ খান, চার সব-সভাপতি, নজির আহমেদ, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, খুরশিদ আলম বাবুল ও একেএম মুমিনুল হক। সদস্য পদে— আবদুল গাফফার, শেখ মো. আসলাম, কায়সার হামিদ, সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির, কামরুন নাহার ডানা, আবু হাসান চৌধুরী, একেএম নওশেরুজ্জামান, টিপু  সুলতান, আফজর-উজ-জামান খান, মো. ইকবাল, হাসানুজ্জামান খান বাবলু, শফিউর রহমান মনি,   ইশতিয়াজ সুলতান জনি ও বিজন বড়ুয়া।

সর্বশেষ খবর