বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

এক বছরেই স্বপ্নচূড়ায়

মেজবাহ্-উল-হক

এক বছরেই স্বপ্নচূড়ায়

ঝিনুকের ভিতর মুক্তা মূল্যহীন বস্তু! কিন্তু বাইরের পৃথিবীতে তা মহামূল্যবান সম্পদ। এক বছর আগে মুস্তাফিজুর রহমানের পরিচয়ও ছিল নিছক অজপাড়াগাঁয়ের এক সাধারণ ছেলে মাত্র। হ্যাংলা-পাতলা সেই ছেলেটি ক্রিকেটের আলোয় আলোকিত হয়ে এখন হয়ে গেছেন দীপ্তিময় এক মুক্তা! ক্রিকেটের সেরা সম্পদ! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের মাত্র এক বছরেই শিকড় থেকে শিখরে পৌঁছে গেছেন মুস্তাফিজ। গোটা বিশ্ব এখন বাংলাদেশি এই বাঁ হাতি পেসারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

জাতীয় দলের জার্সিতে মুস্তাফিজুর রহমানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচ দিয়ে। এরই মধ্যে খেলেছেন মোট ১৩টি ম্যাচ। নিয়েছেন মোট ২২টি উইকেট। ওভারপ্রতি রানও দিয়েছেন ছয়ের কম (৫.৯৮)। সবশেষ ম্যাচে টি-২০ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ২২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে তো রেকর্ডবুকে নাম লিখিয়েছেন। টি-২০-তে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগার তো বটেই, ২০১৬ বিশ্বকাপের সেরা বোলিং।

ওয়ানডেতে মুস্তাফিজের অভিষেক হয় বিশ্বরেকর্ডের মধ্য দিয়ে। গত বছর ১৮ জুন অভিষেক ম্যাচেই ভারতের বিরুদ্ধে তুলে নেন ৫ উইকেট। একই সিরিজের পরের ম্যাচে কাটার মাস্টার আরও ভয়ঙ্কর। সে ম্যাচে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। মুস্তাফিজের জাদুতেই ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ওই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচেও ২ উইকেট। প্রথম তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজ অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন।

ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম তিন ম্যাচে কোনো বোলার এত বেশি উইকেট শিকার করতে পারেননি। নয় ওয়ানডেতে মুস্তাফিজের উইকেট সংখ্যা ২৬। ইকনোমি রেটও অসাধারণ। ওভারপ্রতি তিনি রান দিয়েছেন মাত্র ৪.২৬।

টেস্ট ক্রিকেটেও অপ্রতিরোধ্য মুস্তাফিজ। গত বছর জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে অভিষেকেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ। প্রথম ইনিংসেই হাশিম আমলা, জেপি ডুমিনি, কুইন্টন ডি কক ও টেম্বা বাভুমাকে আউট করেন। বৃষ্টির কারণে ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ ওভারের বেশি বোলিং করতেই পারেননি। ম্যাচে মুস্তাফিজের দাপটেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তার করেছিল বাংলাদেশ। নিজের দ্বিতীয় টেস্টে তো বোলিং করার সুযোগই পাননি কাটার মাস্টার। বাংলাদেশ টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসটাই শেষ হয়নি। তাই নামের পাশে দুই টেস্ট খেলা থাকলেও পুরো সময় মুস্তাফিজ বোলিং করার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র এক ইনিংসে। আর সেখানেই বাজিমাত করে দিয়েছেন।

মুস্তাফিজ যেন এক পরশপাথর! হাতে মাটি, পাথর কিংবা ছাই— যাই তুলে নিচ্ছেন তা হয়ে যাচ্ছে মণি-মুক্তা, হীরা-জহরত। উইকেট কেমন তা বড় বিষয় নয়! মুস্তাফিজ যেখানেই বোলিং করছেন সেখানেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে শেষ হওয়া টি-২০ বিশ্বকাপ এবং চলমান আইপিএলে মুস্তাফিজের বোলিং ক্যারিশমা দেখে গোটা বিশ্ব এখন তার ভক্ত হয়ে গেছে।

ভারতের টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী মুস্তাফিজের বোলিংয়ের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বোলিং মণিহারে এখন সবচেয়ে দামি, উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় মুক্তা হচ্ছে মুস্তাফিজুর রহমান।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো কাটার মাস্টারকে জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আইসিসি ও বিসিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বিশ্বে মুস্তাফিজের মতো এমন বোলার আর নেই। আমি ৪০ বছর ক্রিকেট খেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। হলফ করে বলতে পারি, মুস্তাফিজের মতো বোলার আর নেই।’

আইসিসির বার্ষিক সভায় প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট জহির আব্বাস বিস্ময় প্রকাশ করে বিসিবি সভাপতির কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এমন সুপার বোলার আপনারা কোথায় পেয়েছেন!

বয়স মাত্র ২০ পেরিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার এক বছরেই মুস্তাফিজের যে উত্থান, সামনে আরও কতটা ভয়ঙ্কর হবেন তা কে জানে? কাটার মাস্টারের পারফরম্যান্স নিয়ে এখন গোটা ক্রিকেটবিশ্বই বিস্মিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর