বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

র‌্যাঙ্কিং নিয়ে তামাশা

মেজবাহ্-উল-হক

র‌্যাঙ্কিং নিয়ে তামাশা

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গত মাসে বলেছিলেন, মে মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। খবরটা ছিল বেশ চমকপ্রদ। স্থানীয় মিডিয়া ফলাও করে খবরটি ছাপিয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সিরিজটি আদৌ সম্ভব নয়! 

কেননা মে মাসের শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা ব্যস্ত সময় কাটাবেন ভারতীয় সেলিব্রেটি ঘরোয়া টি-২০ লিগ আইপিএলে। তারপর জুনের ৩ তারিখ থেকে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ট্রাইনেশনে অংশ নেবে ক্যারিবীয়রা। তাছাড়া মে মাসে সিরিজ হলে তো বাংলাদেশের দুই সেরা তারকা সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানকে আইপিএল থেকে দেশে ফেরত নিয়ে আসতে হবে। সেটা কি পারবে বিসিবি! তাই আপাত দৃষ্টিতে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়!

সব শেষ ২৫ এপ্রিল আইসিসি সভা থেকে ফিরেই বোর্ড সভাপতি জানালেন, পরবর্তী আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ সাত থেকে পাঁচ নম্বরে উঠবে! খবরটা মুহূর্তের মধ্যে টিভি স্ক্রোল, ওয়েব পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সৌজন্যে গোটা দেশ জেনে যায়। গোটা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। প্রথমবারের মতো আইসিসির পঞ্চম স্থানে ওঠা— চাট্টিখানি কথা নয়!

তাছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান আইসিসির সভা থেকে ফিরেই এই খবর দিয়েছেন, তাই ভুল হবারও উপায় নেই! তারপরেও ক্রীড়া সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছিল না কিছুতেই। তাই যোগাযোগ করা হয় আইসিসির সঙ্গে। তারপরেই আসল ঘটনা জানা যায়। বাংলাদেশ আগের মতো সাত নম্বরেই থাকছে। আগামী ২ মে আইসিসি যে নতুন র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করবে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান এখনকার মতো সাতই থাকবে।

আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে ধরা হয় সব শেষ তিন বছরের পারফরম্যান্সকে। কিন্তু সব শেষ দুই বছরের পারফরম্যান্সের হিসাব করলে পাঁচে থাকে বাংলাদেশ। আর এই বিষয়টি হয়তো শুনে থাকবেন বোর্ড সভাপতি। কিন্তু একজন বোর্ডের প্রধান কর্তা হিসেবে যখন মিডিয়ার সামনে কোনো বিবৃতি দেবেন অবশ্যই তাকে পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। সে কাজটি করতে পারেননি বিসিবির সভাপতি।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে পর পর দুটি বড় ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ যেন বিসিবির ইমেজকেই সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে এটি ভুল নাজমুল হাসান পাপনের। কিন্তু যেহেতু তিনি বিসিবির প্রধান তাই নেতিবাচক প্রভাবটা বিসিবির উপরেই পড়বে। তাছাড়া আরেকটি বিষয় হচ্ছে, র‌্যাঙ্কিং তামাশা কাণ্ডে শুধু নাজমুল হাসান পাপন একা নন, তার সঙ্গে ছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দীন চৌধুরী। সিইও তার নিজের দায়িত্ব কতটা পালন করেছেন! বরং তামাশার পর উল্টো নিজাম উদ্দীন আরও জানিয়েছেন, ‘দুটি র‌্যাঙ্কিংই ঠিক!’

র‌্যাঙ্কিং তামাশা কাণ্ডে যেখানে সবাই হাসাহাসি করছে সেখানে বিসিবি নিজেদের অবস্থান থেকে যেন নড়েনি। তা না হলে এতো বিভ্রান্তির পরও কেন বিসিবি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কোনো কিছু জানায়নি। এখানে চরমভাবে বিসিবির অপেশাদারিত্বই ফুটে ওঠে। ভাগ্যিস, ক্রীড়া সাংবাদিকরা বিষয়টি যাচাই করেছিল! তা না হলে র‌্যাঙ্কিং ঘটনায় হয়তো আন্তর্জাতিকভাবে অপদস্থ হতে হতো বাংলাদেশকে!

দেশের ক্রিকেটে উন্নতির গ্রাফটা এখন ঊর্ধ্বমুখী। সাকিব-মাশরাফি-মুস্তাফিজদের দাপটে চারদিক থেকেই আসছে একের পর এক সাফল্য। দল ভালো করছে। ব্যক্তিগত রেকর্ড দিয়েও ক্রিকেটাররা দেশের নামকে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করছে। তার বড় উদারহণ মুস্তাফিজুর রহমানের আগুন ঝরা পারফরম্যান্স। টি-২০, ওয়ানডে, টেস্ট —তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই এখন সেরা সময় পার করছে বাংলাদেশ। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে ক্যারিশমা থাকলেও মাঠের বাইরে যারা কাজ করে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তারা যেন দিন দিন ‘অপেশাদার’ আচরণ করছেন!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর