বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার : নজিব আহমেদ

ফুটবল বাঁচাতেই আমাদের সংগ্রাম

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ফুটবল বাঁচাতেই আমাদের সংগ্রাম

নজিব আহমেদ

প্রতিশ্রুতি নয়; আমি কাজে বিশ্বাসী। তাই নির্বাচিত হলে কী করব, আগাম প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। কাজ দেখিয়ে প্রমাণ করব আমার সাংগঠনিক দক্ষতা বা যোগ্যতা— কথাগুলো বলছিলেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক নজিব আহমেদ। ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন। ‘বাঁচাও ফুটবল’ প্যানেল থেকে নজিব সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও পরিচালক। ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে বোর্ড পরিচালকদের অনেক দায়িত্ব, তাই ফুটবলের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কেন? নজিব বলেন, ‘এই প্রশ্ন অনেক সাংবাদিকই করছেন। দেখেন ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হওয়া যেমন সম্মানের তেমনি দায়িত্ব অনেক। আমি এখানে সফল কিনা আমার কাজের বিশ্লেষণ করলে প্রমাণ পাবেন। বাফুফের নির্বাচন করার মূল কারণ একটাই— বাঙালির প্রাণের খেলাকে বাঁচাতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের প্যানেল নির্বাচিত হলে ফুটবল উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়বে। শুধু শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মতিঝিলের অফিসে বসে থাকবে না। নির্বাচিত হলে ফুটবলের সংকটাপন্ন অবস্থা দূর করতে সবাই মিলেমিশে কাজ করব।’

আপনারা বলছেন বাঁচাও ফুটবল তাহলে কী দেশের ফুটবল মৃত্যুর মুখে? নজিব বলেন, ‘কাজী সালাউদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে আমার বা বাঁচাও ফুটবল প্যানেলের কারও দ্বন্দ্ব নেই। তিনি একজন গ্রেট ফুটবলার ছিলেন। উনার খেলা দেখতে দুপুর থেকে গ্যালারিতে বসে থাকতাম। উনার মতো ফুটবলার বাংলাদেশে আসবে কি না সন্দেহ রয়েছে। পারফরম্যান্স তাকে এতদূর নিয়ে গেছে। তবে ফুটবলের সভাপতি বা অভিভাবক হিসেবে তিনি ব্যর্থ। সালাউদ্দিন ভাই একা নন আট বছর যারা ফেডারেশনের দায়িত্বে ছিলেন তারা কেউই ফুটবল উন্নয়নে কাজ করেননি। অথচ ফুটবলপ্রেমীরা আশায় ছিলেন, সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে দাঁড়িয়ে যাবে। জাতীয় দলের চরম বিপর্যয়। লোকাল ফুটবলে দর্শক নেই। ঢাকার বাইরে খেলা নেই। আট বছরে আটজন নতুন ফুটবলারও তৈরি হয়নি। অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। মৃত্যুর মুখে দেশের ফুটবল। লাইফ সাপোর্টে বেঁচে আছে। এ অবস্থায় আমরা কি বসে থাকতে পারি? তাই ফুটবলকে বাঁচাতে সংগ্রামে নেমেছি।

নজিব আক্ষেপ করে বলেন, মঙ্গলবার এএফসি কাপে সিঙ্গাপুর চ্যাম্পিয়ন ট্যাম্পাইন রোভার্স ক্লাবকে পরাজিত করেছে শেখ জামাল। শুধু এ জয় নয়, কাপ জয়ের সম্ভাবনা ছিল আমাদের। কিন্তু সালাউদ্দিন ভাইয়ের একগুঁয়েমির কারণে তা আর হয়নি। তিনি ফুটবলের অভিভাবক অথচ ঈর্ষান্বিত হয়ে তারকা ফুটবলারদের শেখ জামালে খেলতে দেননি। উনার সঙ্গে আমি একাধিক বৈঠক করেছি। বলেছেন, আরে বাবা শেখ জামাল এএফসি কাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। শেখ জামাল জেতা মানে দেশের সুনাম বাড়া। সুতরাং খেলোয়াড় অবশ্যই পাবে, চিঠি দাও সব ঠিক হয়ে যাবে। কথা বললাম, চিঠি দিলাম এর পরও তিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। তার কারণেই আমরা আগের ম্যাচগুলো হেরেছি। এখন আপনারাই বলুন, এমন লোকের কাছে কী ফুটবল নিরাপদ। ধন্যবাদ জানায় শেখ রাসেল ও ঢাকা আবাহনীকে। তারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

সালাউদ্দিনরা ব্যর্থ কিন্তু আপনারা জিতলে ফুটবলের করুণ চেহারা পাল্টে দিতে পারবেন কি? নজিব দৃঢ় কণ্ঠেই বললেন, কেন পারব না, এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। কামরুল আশরাফ খান আমাদের প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী। তিনি বলেছেন নির্বাচিত হলে বাঁচাও ফুটবল প্যানেল কী করবে। আমি সহসভাপতি প্রার্থী হওয়ায় অনেকে বলছেন তাহলে বিসিবির দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। বোর্ডের গঠনতন্ত্রে আছে বোর্ডের কোনো পরিচালক অন্য ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটিতে থাকতে পারে না। হ্যাঁ, ভোটাররা যদি আমাকে নির্বাচিত করেন তাহলে বোর্ডে থাকব না। ক্রিকেটে কাজ করার আরও লোক আছে। আমি ফুটবল উন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়ব। আমার সাংগঠনিক ক্যারিয়ার বেশি দিনের নয়। ২০০৯ সাল থেকে শেখ জামালের সঙ্গে জড়িত। এ সাত বছর শেখ জামাল কি করছে তা আপনারা দেখেছেন। কাজ আর পরিশ্রমে শেখ জামালকে আজ আমরা দেশের সেরা দলে পরিণত করতে পেরেছি। সুতরাং সংগঠক হিসেবে আমি যোগ্য কিনা ভোটাররা বিচার করবেন। ‘সালাউদ্দিন ভাই বলেছেন ফান্ডের কারণে তিনি কাজ করতে পারেননি।  কিন্তু ফান্ড কোনো ফ্যাক্টর নয়। কাজ দেখাতে পারলে ব্যবসায়ী বা স্পন্সররা এগিয়ে আসবে। ফান্ড জোগাড়ে আমার একটা পরিকল্পনা রয়েছে। যা দিয়ে ফুটবল উন্নয়ন, ফুটবলারদের বেতন, জেলাগুলোকে সহযোগিতা বা দুস্থ ফুটবলারদের জন্য ফান্ড তৈরি হবে, আশা করি। পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। এখানে গড ফাদারদের কোনো জায়গা নেই। নির্বাচিত কর্মকর্তাই শুধু ফেডারেশনে থাকবে এই রীতি বিশ্বাস করি না। যারা যোগ্য সবাইকে ফুটবল উন্নয়নে কাজে লাগানো হবে। নোংরামি পরিহার করে এগুতে হবে। তা না হলে ফুটবল বাঁচানো যাবে না।’

সর্বশেষ খবর