শনিবার, ৭ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিরোপাযুদ্ধে ঊষা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

শিরোপাযুদ্ধে ঊষা

ঘরোয়া হকিতে বরাবরের পরিচিত মুখ ঊষা ক্রীড়া চক্র। শিরোপা রেসে সব সময়ই নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করে চলেছে পুরান ঢাকার দলটি। তারই ধারাবাহিকতায় ঘরোয়া মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট মার্সেল ক্লাব কাপ হকির ফাইনালে উঠেছে ঊষা। গতকাল প্রথম সেমিফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটে ৭-৫ গোলে মোহামেডানকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে দলটি। অবশ্য দুই দলের টানটান উত্তেজনার সেমিফাইনালটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ৩-৩ গোলে ড্র ছিল। নাটকীয়ভাবে ফাইনালে ওঠায় ঊষা হকি কমিটির চেয়ারম্যান তারেক এ আদেল এক লাখ টাকা বোনাস দেন খেলোয়াড়দের। আজ দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আবাহনীর প্রতিপক্ষ মেরিনার্স ইয়াংস।

গত আসর বয়কট করেছিল মতিঝিল পাড়ার দল মোহামেডান। ফলে ২০০৯-১০ মৌসুমের ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়ন দলটি অনেক দিন ধরেই শিরোপা বঞ্চিত। বিপরীতে ঊষা শুধু গত আসরের ক্লাব কাপ চ্যাম্পিয়নই নয়, আগের আসরেরও শিরোপাধারী। হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতার লক্ষ্যে পুরান ঢাকার দলটি উড়িয়ে আনে মালয়েশিয়া হকি দলের চার খেলোয়াড়কে। পিছিয়ে ছিল না মোহামেডানও। পাকিস্তান জাতীয় দলের চার খেলোয়াড়কে দলভুক্ত করে। অবশ্য গ্রুপের শেষ ম্যাচে আবাহনীর বিপক্ষে খেলার জন্য উড়িয়ে এনেছিল খেলোয়াড়দের। কিন্তু নিবন্ধন করতে না পারায় খেলাতে পারেনি। ফলে চির-প্রতিপক্ষের কাছে হেরে যায় ২-৪ গোলে। ওই হারের ধাক্কা নিয়ে গতকাল খেলতে নামে সেমিফাইনাল। খেলতে নামে দলীয় অধিনায়ক রাসেল মাহমুদ জিমিকে ছাড়া। আবাহনী ম্যাচে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়েছিল দেশ সেরা স্ট্রাইকারের। চার পাকিস্তানি খেললেও জিমির অভাব পরিষ্কারভাবে অনুভূত হয়েছে মোহামেডানের খেলায়। 

ফাইনালে উঠতে দুই দল কাল খেলা শুরু করে ধীরলয়ে। প্রতিপক্ষের কৌশল দেখে নেওয়ার ম্যাচে প্রথম আক্রমণে যায় মোহামেডান। ৬ মিনিটে পাকিস্তানি ফরোয়ার্ড ওমর ভুট্টোর পাসে মাঝ বক্স থেকে রিভারসুইপ করেন ফরোয়ার্ড রুবেল হোসেন। কিন্তু বলটি সাইডপোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ৯ মিনিটে এগিয়ে যায় ঊষা। ম্যাচের প্রথম পেনাল্টি কর্নারে (পিসি) গোল করেন ঊষার অধিনায়ক কৃষ্ণ কুমার। পুশ করেছিলেন কৃষ্ণা নিজেই। স্টপ করেন সারওয়ার এবং এরপর মালয়েশিয়ান স্ট্রাইকার জুলহাইরি বিন হাশিম গতানুগতিক স্কুপ বা হিট না করে কব্জির মোচড়ে বল বাড়িয়ে দেন পাশে দাঁড়ানো কৃষ্ণাকে। সময় ক্ষেপণ না করে কৃষ্ণা দলকে এগিয়ে নেন (১-০)। গোল হজমের পর খেলার গতি বাড়িয়ে দেয় মোহামেডান। কিন্তু ঊষার আঁটোসাঁটো রক্ষণভাগের জন্য গোল পাচ্ছিল না। অবশেষে ৩১ মিনিটে আরাধ্য গোলের দেখা পায় মতিঝিল পাড়ার দলটি। সমতা আনে ফিল্ড গোলে। ছোট ছোট পাসে ঊষার রক্ষণভাগে ঢুকে পুশ করেন কামরুজ্জামান, বক্সের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানি তাসওয়ার আব্বাস রিভার্সসুইপে সমতা আনেন (১-১)। এই সমতা নিয়ে বিরতির বাঁশি বাজান ওমান থেকে আসা দুই রেফারি।

বিরতির পর তেড়েফুঁড়ে খেলতে থাকে দুই দল। বিরতির পর ৪০ মিনিটে এগিয়ে যায় মোহামেডান। সালমান হোসেন অসাধারণ স্টিক ওয়ার্কে ঢুকে পড়েন ঊষার রক্ষণভাগে এবং বল দেন পাশে দাঁড়ানো তাসওয়ার আব্বাসকে। তাসওয়ার ফাঁকা পোস্টে গোল করতে ভুল করেননি (২-১)। ৪৫ মিনিটে সমতা আনে ঊষা (২-২)। পরপর তিন পিসির শেষটিতে আড়াআড়ি শঠে ঊষার মালয়েশিয়ান ডিফেন্ডার শফিক জেলান গোল করেন। খেলা যখন শেষের দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই এগিয়ে যায় মোহামেডান। ৬৮ মিনিটে মোহামেডানকে ৩-২ গোলে এগিয়ে নেন পাকিস্তানি স্ট্রাইকার ওমর ভুট্টো। এগিয়ে যাওয়ার পর ফাইনালে ওঠার আগাম উৎসব করতে থাকে মোহামেডান শিবির। তখনই মোহামেডানের আনন্দ-উৎসবে পেড়েক ঠুকে দেন পুস্কর ক্ষিসা মিমো। ডান প্রান্ত থেকে ইসমাইল বিন আবুর পাওয়ার হিটে ফ্লিকে সমতা আনেন মিমো (৩-৩)। তখন ম্যাচের বাকি ১০ সেকেন্ড। নির্ধারিত সময় ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুট আউটে।

পেনাল্টি শুট আউটের প্রথমটি মিস করে ঊষা। গোল করে মোহামেডান। দ্বিতীয় শটে গোল করে ঊষা এবং মোহামেডান। পরের তিন শটে ঊষা গোল করলেও মোহামেডান ব্যর্থ হয় পুরোপুরি। ফলে ৫ শটের পেনাল্টি শুট আউটে ঊষা জিতে নেয় ৪-২ গোলে। সব মিলিয়ে ম্যাচের ফল ৭-৫।

সর্বশেষ খবর