বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঐতিহ্যের লড়াই মিরপুরে আজ

আবাহনী-মোহামেডান মুখোমুখি

মেজবাহ্-উল-হক

ঐতিহ্যের লড়াই মিরপুরে আজ

কি হতে পারে ম্যাচে। মিরপুরে অনুশীলনের ফাঁকে মুশফিককে এ কথাই কী বলছেন তামিম। আজ হাই ভোল্টেজ ম্যাচে মোহামেডান আবাহনীকে নেতৃত্ব দেবে তারাই —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি দর্শক গ্যালারিতে, স্টেডিয়ামের বাইরেও লোকে-লোকারণ্য, ভেতরের ও বাইরের দর্শকের গগনবিদারী চিৎকারে মুহুর্মুহু প্রকম্পিত হয় স্টেডিয়াম পাড়া— ক্রিকেটে এমন দৃশ্য দেখা যায় সাধারণত আন্তর্জাতিক ম্যাচে। কিন্তু এ ছবিটা এক সময় দেখা যেত আবাহনী ও মোহামেডানের ম্যাচে। ঐতিহ্যবাহী দুই ক্লাবের লড়াইয়ে গোটা দেশ যেন বিভক্ত হয়ে যেত!

দুই দলের সমর্থকদের সে কী উচ্ছ্বাস! দুই জায়ান্টের লড়াই ছিল বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদী মানুষের চির-আকাঙ্ক্ষিত এক ম্যাচ! কিন্তু এখন আর সে উন্মাদনা নেই। তবে কিছুটা উত্তেজনার ঝাঁঝটা এখনো আছেই। আজ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে দুই জায়ান্ট— মোহামেডান ও আবাহনী। আগের মতো দর্শকের মাতামাতি না থাকলেও দুই দলের ক্রিকেটারদের মাঝে বাড়তি টেনশন কাজ করে ঠিকই। ঐতিহ্যের এই লড়াইয়ে দুই দলই থাকে জয়ের জন্য মরিয়া।

তবে অতীতের মতো জৌলুস না থাকলেও ঐতিহ্যবাহী দুই দলের এখনো কিছু একনিষ্ঠ ভক্ত আছেন, যারা মাঠে গিয়ে দেখেন। দুই দল মুখোমুখি হলে সে ম্যাচে উত্তেজনাও দেখা যায়। সেটা ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা হকি খেলাই হোক না কেন! জনপ্রিয়তার কথা চিন্তা করলে ক্রিকেট ও ফুটবলের পর হকির অবস্থান। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ক্লাব কাপ হকির সেমিফাইনাল মুখোমুখি হয়েছিল দুই জায়ান্ট। সেখানেও দেখা গেছে, ৭-৮ হাজার দর্শক।

ফুটবলে গত বছর পেশাদার লিগে সব শেষ দেখা হয়েছিল দুই দলের। সেখানেও ৭-৮ হাজার দর্শক হয়েছিল। অথচ ঘরোয়া ফুটবলে অধিকাংশ ম্যাচে গ্যালারিতে হাজার খানেক দর্শকও দেখা যায় না। আন্তর্জাতিক ম্যাচেই বাইরে মাঠে গিয়ে ক্রীড়ামোদীদের খেলার দেখার যে আগ্রহটুকু আছে তা কেবল আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ ঘিরেই! দুই জায়ান্টের লড়াইয়ে এখনো যেন এক অন্যরকম আমেজ বিরাজ করে।

ক্রিকেটে আবাহনী-মোহামেডান প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। প্রথম বিভাগ লিগের সেমিফাইনাল। তখন ৪৫ ওভারে খেলা হতো। ম্যাচে আবাহনী ৬ উইকেটে জিতে যায়। তবে হারলেও ওই ম্যাচে মোহামেডানের হয়ে রামচাঁদ গোয়ালা ও দৌলতউজ্জামান মিলে শেষ উইকেট জুটিতে ৯৯ রান করেছিল। লিগে এখন পর্যন্ত সেই রেকর্ডটি রয়েছে। মোহামেডানকে হারানোর পর ওই আসরে ফাইনালে শান্তিনগরকে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী।

আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি, তা ঢাকার দর্শকরা দেখেছিল ১৯৭৬ সালের সেই ম্যাচে। যে ম্যাচে এসএম ফারুক আহমেদের মোহামেডান প্রথম ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৮৯ রানেই অলআউট হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসের পরই আবাহনীর সমর্থকরা জয়ের পূর্বাভাস পেয়ে উৎসবের প্রস্তুতি নিতে থাকে। আবাহনীর অধিনায়ক প্রয়াত আলিউল ইসলামও যেন জয়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে পড়েছিলেন আগেই। কিন্তু ২২ গজে গিয়ে ঘটে এক মহাবিপত্তি! ৮৮ রানের অলআউট হয়ে যায় আবাহনী। মাত্র ১ রানেই জিতে যায় মোহামেডান। উত্তেজনা তো ছিলই, টেনশনে দর্শকের হার্ড অ্যাটাক হওয়ার দশাও হয়েছিল— তা সহজেই অনুমেয়!

ঐতিহ্যবাহী দুই দলেই বিশ্বের অনেক তারকা খেলোয়াড় খেলেছেন। আবাহনীর জার্সি মাঠ মাতিয়েছেন— ফেয়ার ব্রাদার (ইংল্যান্ড), ওয়াসিম আকরাম, সামারা সাকারা, সেলেসবুরী, অরুণ লাল, র‌্যামন লাম্বা, অজয় জাদেজা ও শহীদ আফ্রিদির মতো তারকা ক্রিকেটার। মোহামেডানও পিছিয়ে ছিল না। তারাও এনেছিলেন তারকা ক্রিকেটারদের। ৯৬-র বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা খেলেছেন মোহামেডান, তারকা ক্রিকেটারদের সনাৎ জয়াসুরিয়াও খেলেছেন। এছাড়া পাকিস্তানের আমির মালিক, ভারতের প্রভিন আমরেও খেলেছেন। পাক কিংবদন্তি জাভেদ মিয়াঁদাদ মোহামেডানের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এবারের আসরে দুই দলে বিদেশি তারকা ক্রিকেটার না থাকলেও দুই দলে রয়েছে দেশের দুই তারকা ক্রিকেটার। আবাহনীতে সাকিব আল হাসান, মোহামেডানে মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু ভারতীয় সেলিব্রেটি ক্রিকেট লিগ আইপিএলে খেলার কারণে দুই ক্রিকেটারই আজ খেলতে পারছেন না।

আবাহনী-মোহামেডান লড়াইয়ের আড়ালে আজ আরেকটি লড়াই হবে— টেস্টের অধিনায়ক ও সহঅধিনায়কের লড়াই! মোহামেডানের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম টেস্ট দলের অধিনায়ক। আবাহনী অধিনায়ক তামিম ইকবাল জাতীয় দলে মুশফিকের ডেপুটি। তবে জাতীয় দলের কথা ভুলে আজ দুই ক্রিকেটারই ঐতিহ্যের লড়াইয়ে মুখোমুখি অবস্থানে।

পয়েন্ট তালিকায় এখন এক নম্বরে মোহামেডান। ছয়ে আবাহনী। তবে ধানমন্ডির দলটি এখনো তাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারেনি বলে মনে করেন অধিনায়ক তামিম। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো সেরা ক্রিকেট খেলতে পারিনি। মোহামেডানের বিরুদ্ধে জিততে ভালো খেলতে হবে।’ মোহামেডানের কোচ সোহেল ইসলামও ভালো করেই জানেন, তার দল তালিকায় শীর্ষে থাকলেও শিরোপার পথটা এখনো কণ্টকাকীর্ণ। তবে তার শিষ্যরা আবাহনীর বিরুদ্ধে ভালো খেলার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আবাহনীতে তারকার ছড়াছড়ি। দেশের একমাত্র লেগ স্পিন বিশেষজ্ঞ জুবায়ের হোসেন লিখন রয়েছেন এই দলে। এ ছাড়া তাসকিন আহমেদ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেনের মতো তরুণ তুর্কি তো রয়েছেনই। তবে আবাহনীর প্রাণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। মোহামেডানে মুশফিকুর রহিম ও নাঈম ইসলাম ছাড়া অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বলতে লঙ্কান ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা। তবে মোহামেডানের তরুণ ক্রিকেটারই দারুণ পারফর্ম করছেন। এবারের আসরে এ পর্যন্ত মাত্র একটা ম্যাচে হেরেছিল দলটি। বাকি চার ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।

এদিকে ফতুল্লায় আজ প্রাইম দোলেশ্বর খেলবে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে আর বিকেএসপিতে মুখোমুখি হবে প্রাইম ব্যাংক ও ভিক্টোরিয়া স্পোটিং।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর