বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশবাসীর ভালোবাসাই আমার বড় প্রাপ্তি

দেশবাসীর ভালোবাসাই আমার বড় প্রাপ্তি

মুস্তাফিজুর রহমান। তাকে বলা হচ্ছে ‘বিস্ময় বালক’। বাংলাদেশ মাতিয়ে এখন তিনি ভারত মাতাচ্ছেন। আসলে তাকে নিয়ে মেতে আছে গোটা ক্রিকেটবিশ্বই। তার বোলিংয়ের ‘রহস্যময়’ কাটার, ভয়ঙ্কর ইয়র্কার ও দুর্দান্ত সুইংয়ে ছত্রখান হয়ে যায় বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের উইকেট। যথারীতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও (আইপিএল) মুস্তাফিজ তাণ্ডব চলছে। তার সারল্যমাখা হাসি, আর হাতের তালি— এই মুহূর্তে আইপিএলের ‘সিম্বল অব ক্রিকেট’-এ পরিণত হয়েছে। ভারতের ছত্তিশগড়ের রায়গড়ে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। রায়গড়ে বসে মোবাইল ফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন হালের টিনএজ সেনসেশান মুস্তাফিজুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসিফ ইকবাল। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো :

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আইপিএলে আপনার যেদিন খেলা থাকে, সেদিন পুরো দেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে...। শহর থেকে গ্রাম, সব জায়গায়ই টিভি সেটের সামনে দর্শকদের উন্মাদনা হয়— জানেন কি?

মুস্তাফিজুর রহমান : হ্যাঁ শুনেছি। আমার বাড়িতেও নাকি প্রজেক্টারে খেলা দেখেন সবাই। এটা শুনে খুব ভালো লাগে। দেশের মানুষ আমাকে ভালোবাসেন, এটাই আমার বড় প্রাপ্তি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি এই মুহূর্তে কোথায় আছেন, পাঞ্জাব না হায়দরাবাদে?

মুস্তাফিজ : জায়গার নাম জানি না। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে জয়ের পরদিনই আমরা চলে এসেছি এখানে। এটুকু শুনেছি আমাদের পরের ম্যাচ যেখানে, সেখানেই এসেছি আমরা (ছত্তিশগড়ের রায়গড়)।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দলটি কেমন এবং সতীর্থরা কতটা সহায়তা করছে আপনাকে?

মুস্তাফিজ : দলের সবার আচরণ বন্ধুর মতো। আমি দলের সবচেয়ে জুনিয়র ক্রিকেটার। তাই আমার প্রতি সবারই বাড়তি নজর। প্রথম এক-দুই দিন সমস্যা হয়েছে মানিয়ে নিতে। কিন্তু এখন সমস্যা অনেকটাই কেটে গেছে। এখন বুঝতে কষ্ট হয় না। দলের সবার সঙ্গে আকার-ইঙ্গিতে কথা বলে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। কোচ টম মুডি, অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও ভিভিএস লক্ষ্মণ খুব সহায়তা করেন এবং তারা খেয়ালও রাখেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সানরাইজার্স এখন পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। আপনি দলটির সাফল্যের একজন অন্যতম রূপকার। দল এবং আপনার পারফরম্যান্স কেমন লাগছে?

মুস্তাফিজ : দল জিতলে কার না ভালো লাগে? সানরাইজার্সের পারফরম্যান্সে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত। পরের দুই ম্যাচের একটি জিতলেই বোধহয় আমরা শীর্ষে থেকে লিগ পর্ব শেষ করব। দল যখন জেতে, তখন ড্রেসিংরুমে আমরা খুব আনন্দ করি। দলের জয়ে অবদান রাখতে পারলে ভালো লাগে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আইপিএলে এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন ১৪টি। কার উইকেট এবং কোন ম্যাচের বোলিংকে এগিয়ে রাখবেন?

মুস্তাফিজ : আমার কাজ হচ্ছে বোলিং করা। সব ম্যাচেই চেষ্টা করি ভালো বোলিং করতে। তবে আইপিএলে এখন পর্যন্ত আমার সেরা বোলিং পাঞ্জাবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে (বোলিং স্পেল ৪-১-৯-২)। আলাদা করে উইকেটের কথা বলতে পারব না। সব কটি উইকেটই আমার ভালো লেগেছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এই প্রথম আইপিএল খেলছেন। কতটা কঠিন মনে হচ্ছে?

মুস্তাফিজ : প্রতিটি দলে সব দেশের তারকা ক্রিকেটাররা খেলছেন। এখানে ব্যাটসমানরা সবাই প্রতি বলেই চার-ছক্কা মারতে চান। এমন পরিস্থিতিতে বোলিং করা খুব কঠিন। অবশ্যই এখানে খেলাও অনেক কঠিন। অবশ্য সব ম্যাচেই নতুন নতুন অনেক কিছু শেখা যায়। আমি সব সময় নিজের বোলিংয়ের দিকে মনোযোগ দিই। সব সময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দিতে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনি, এ বি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলাদের মতো তারকা ব্যাটসম্যানরা খেলছেন। কারও বিপক্ষে বোলিং করতে কি ভয় পেয়েছেন?

মুস্তাফিজ : না, কাউকে বোলিং করতে ভয় পাইনি। এখানে সবাইকেই বোলিং করা কঠিন। সবাই অপেক্ষা করেন চার-ছক্কা মারতে। এমন অবস্থায় বোলিং করা সত্যিই কঠিন কাজ। তখন আমি শুধু নিজের বোলিং করার দিকে মনোনিবেশ করি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : সাকিবের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে কেমন লেগেছিল?

মুস্তাফিজ : সাকিব ভাই আমাদের বিপক্ষে খেলেছিলেন। খুব সম্ভবত ব্যাটিং করেননি। শুরুতে নিয়মিত না হলেও এখন খেলছেন। আমার মনে হয় তার বিপক্ষে বোলিং করলে ভালোই করতাম। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলি। তিনি আমাকে মানসিকভাবে অনেক হেল্প করেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : মুত্তিয়া মুরলিধরন, রবি শাস্ত্রীদের মতো সাবেক তারকা ক্রিকেটাররা ভূয়সী প্রশংসা করছেন আপনার। কী বলবেন?

মুস্তাফিজ : অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে। তার ওপর যদি তারকা ক্রিকেটাররা প্রশংসা করেন, তখন ভালো লাগাই স্বাভাবিক এবং এর মাত্রাটাও বেশি হয়।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : শোনা যাচ্ছে বিশ্রামের জন্য কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের পক্ষে খেলবেন না?

মুস্তাফিজ : এমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এসব বিষয় স্যাররা জানেন। তারাই ঠিক করবেন। আমার কাজ শুধু খেলে যাওয়া।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিগব্যাসে খেলার কথা শোনা যাচ্ছে। কোনো দল কি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে? মুস্তাফিজ : না, কোনো দল কথা বলেনি। আর দল কথা বলবে কেন? এটা তো লটারিতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এই প্রথম পরিবার-পরিজন ছাড়া এতদিন দেশের বাইরে আছেন। কেমন লাগছে?

মুস্তাফিজ : ৪০ দিনের ওপর হলো দেশের বাইরে আছি। এতদিন কখনো মা-বাবাকে ছাড়া থাকিনি। খারাপ লাগে। আমি দেশে থাকলেও ঢাকার চেয়ে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার কাছে থাকতে বেশি ভালো লাগে। এখানে আসার পর মা-বাবা, ভাই-বোনদের ছেড়ে থাকতে প্র্রথম কয়েক দিন খুব খারাপ লেগেছিল। খেলা শুরুর পর অবশ্য সব ঠিক হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিনই ভাইভারে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলি।

সর্বশেষ খবর