রবিবার, ২২ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

পেসারদের ছাপিয়ে স্পিনাররা

মেজবাহ্-উল-হক

পেসারদের ছাপিয়ে স্পিনাররা

বাংলাদেশ স্পিননির্ভর দল —গল্পটা ২০১৫ বিশ্বকাপের আগের! অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ পুরাদস্তুর পেসনির্ভর দল হয়ে গেছে। এখন জাতীয় দলের একাদশে নিয়মিত তিন পেসার থাকেন। কখনো কখনো চার পেসারও দেখা যায়। মাশরাফি বিন মর্তুজার অধিনায়ত্বে পেসাররা বেশ উজ্জীবিত হয়েছেন। টাইগার পেসাররা এখন ১৪০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করার সামর্থ্য রাখেন। ক্রিকেট বিশ্বেও এখন বাংলাদেশের পেস আক্রমণ প্রশংসিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দেশের আনাচে-কানাচে থাকা তরুণ পেসারদের খুঁজে বের করতে নতুন করে ‘পেসবোলার হান্ট’ প্রতিযোগিতা চালু করেছে। কিন্তু এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। সেখানে পেসাররা নন, ভালো করছেন স্পিনাররা। সপ্তম রাউন্ড শেষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ১০ বোলারের মধ্যে পেস বোলার মাত্র দুই জন।

জাতীয় দলের তারকা পেসার আল আমিন হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বি ছাড়া বাকি আট বোলারই স্পিনার। তাছাড়া লিগে এ পর্যন্ত এক ম্যাচে ৫ কিংবা তার বেশি উইকেট নেওয়ার ঘটনা যে ছয়বার ঘটেছে তার মধ্যে পাঁচবারই নিয়েছেন স্পিনার। পেসারদের মধ্যে কেবলমাত্র আবু হায়দার রনি একবার নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এছাড়া ভিক্টোরিয়ার হয়ে খেলা লঙ্কান বাম হাতি স্পিনার চতুরঙ্গ ডি সিলভা নিয়েছেন দুইবার, আবাহনীর জুবায়ের হোসেন লিখন, গাজী গ্রুপের অলোক কাপালি, শেখ জামালের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একবার করে নিয়েছেন।

ব্যাটসম্যানদের মতো উইকেট শিকারেও শীর্ষে নেই বাংলাদেশের বোলার। সাত ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে লঙ্কান স্পিনার চতুরঙ্গ ডি সিলভা। জাতীয় দলে উপেক্ষিত দেশের একমাত্র লেগস্পিন বিশেষজ্ঞ জুবায়ের হোসেন লিখন ১৩ উইকেট নিয়ে রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। তবে লিখনের সঙ্গে আরও চার বোলারের ঝুলিতে রয়েছে ১৩ উইকেট। মোহামেডানের দুই স্পিনার নাঈম ইসলাম জুনিয়র ও এনামুল হক জুনিয়র। এছাড়া জাতীয় দলের দুই পেসার আল আমিন হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বিও শিকার করেছেন ১৩টি করে উইকেট। ১২টি করে উইকেট নিয়েছেন ছয় বোলার। তাদের মধ্যে চার জনই স্পিনার— মোহামেডানের হাবিবুর রহমান, গাজীর অলোক কাপালি, ক্রিকেট কোচিং স্কুলের সালেহ আহমেদ শাওন ও জাতীয় দলে উপেক্ষিত কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের স্পিনার আবদুর রাজ্জাক রাজ।

সেরা দশে না থাকলেও দুই পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজা ও আবু হায়দার রনিও নিয়েছেন ১২টি করে উইকেট। জাতীয় দলের আরেক পেসার রুবেল হোসেন ভালো বোলিং করলেও নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন না। প্রাইম ব্যাংকের হয়ে খেলা এ পেসার সাত ম্যাচে তিনি উইকেট পেয়েছেন ৯টি। ৯ উইকেট শিকার করেছেন বোলিং অ্যাকশনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ গতি তারকা তাসকিন আহমেদও। এছাড়া শেখ জামাল ধানমন্ডির হয়ে পেসার শফিউল ইসলাম সুহাস নিয়েছেন ৭ উইকেট।

উইকেট শিকারে শীর্ষ ১০-এ থাকা তিন স্পিনার নাঈম ইসলাম জুনিয়র, হাবিবুর রহমান এবং সালেহ আহমেদ শাওনের এখনো জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয়নি। তিন তরুণ বোলারের ইকোনমি রেটও অসাধারণ। হাবিবুর সাত ম্যাচে ৬৪.২ ওভার বোলিং করে ওভারপ্রতি মাত্র ৩.৩২ করে রান দিয়েছেন। প্রিমিয়ার লিগের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটও রান দেওয়ায় ভীষণ কিপটে মোহামেডানের এই স্পিনার। নাঈম জুনিয়র ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৪.৬২ করে। দুই দুটি ম্যাচে নিয়েছেন চারটি করে উইকেট। শুধু তাই নয়, প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করতে ওস্তাদ নাঈম।

অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের তারকা বোলার স্পিনার সালেহ আহমেদ শাওন। প্রিমিয়ার লিগের সাত ম্যাচে শুধু ১৩ উইকেট-ই শিকার করেননি, রান দেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি দেখিয়েছেন কিপটেপনা। সাত ম্যাচে ৫৬ ওভার বোলিং করে ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৪.৮০ করে। দুই দুটি ম্যাচে নিয়েছেন ৪টি করে উইকেট। ১৮ বছর বয়সী সিসিএসের এই তরুণ স্পিনার সব শেষ ম্যাচে ভিক্টোরিয়ার বিরুদ্ধে মাত্র ১৫ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। শাওনের অসাধারণ বোলিংয়ের কারণেই শীর্ষে ওঠার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যায় ভিক্টোরিয়ার। সপ্তম রাউন্ডে এসে প্রিমিয়ার লিগে প্রথম জয়ের দেখা পায় সিসিএস। শাওন প্রতি ম্যাচেই যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করছেন তাই জাতীয় দলের সুযোগ পাওয়াটা তার জন্য এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

সর্বশেষ খবর