অভিজ্ঞতা ছাড়া সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। কিন্তু তা যদি তিন যুগ থেকে হতে থাকে কেমন লাগে? স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ দুনিয়া কাঁপানো অলিম্পিক গেমসে যাচ্ছে। ১৯৭২ ও ১৯৭৬ সালে প্রতিনিধি পাঠালেও ১৯৮৪ সাল থেকে গেমসে ক্রীড়াবিদরা অংশ নিচ্ছেন। ১৯৮৪ থেকে ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা অংশ নিয়েছেন। সাফ, এশিয়ান বা কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশ স্বর্ণ জিতলেও অলিম্পিকে পদক জেতাটাই স্বপ্নই থেকে গেছে। লক্ষ্য সম্পর্কে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে একটাই কথা বলেন, অভিজ্ঞতা অর্জন। এক বা দুইবার নয়, সেই ৮৪ সাল থেকেই একই কথা বলা হচ্ছে। এটা যেন একটা টেপ রেকর্ড। অলিম্পিক আসলেই একই গান বাজানো হয়। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? তিন যুগ ধরেই চলবে অভিজ্ঞতা?
বিওএর কর্মকর্তারা বলেন, অলিম্পিকে এখন ভারত বা পাকিস্তানের পদক জেতাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পারবে কীভাবে? পদক জেতা তো দূরের কথা, গেমসে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা হিটেই টিকতে পারে না। অ্যাথলেটে এমনও অবস্থা হয়েছে যে সবার দৌড় শেষ করলেও বাংলাদেশ শুরু করতে পারেনি। বাংলাদেশের নাজুক পারফরম্যান্স নিয়ে অলিম্পিকে অনেক হাসাহাসি হয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, অযথা পাঠিয়ে দেশের সম্মান নষ্ট করে লাভ কী? বিওএ বলছে অংশগ্রহণই বড় কথা। এবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে শুটার আবদুল্লাহ হেল বাকি, সুইমার মাহফিজুর রহমান সাগর, আরচার শ্যামলী ও গলফার সিদ্দিকুর রহমান অংশ নেবেন। স্বপ্নের অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের ক্যারিয়ারে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে। ওয়াইল্ড কার্ডের ভিত্তিতে তিন ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে যাচ্ছেন। কিন্তু সিদ্দিকুর র্যাঙ্কিংয়ের কারণে সরাসরি সুযোগ পেয়েছেন। অনেকদিন পর অলিম্পিকে গলফ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। খ্যাতনামা গলফারের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণই বলা যায়। তাই চোখ থাকবে সিদ্দিকুরের দিকে। পদক জিতে সিদ্দিকুর ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারবেন কিনা তা এখন দেখার বিষয়।
১৯৯০ সালে কমনওয়েলথ গেমসে শুটিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রথমবার স্বর্ণ জিতেছিল। এক সময় কমনওয়েলথ গেমসেও পদক জেতাটা স্বপ্ন মনে হতো। সেটা দূর হয়েছে। এশিয়ান গেমসে ব্যক্তিগত না হোক ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশ স্বর্ণ জেতার স্বপ্ন পূরণ করেছে অনেক আগেই। কমনওয়েলথ গেমসেও তো অনেক শক্তিশালী দেশ বা খ্যাতনামা ক্রীড়াবিদরা অংশ নিয়ে থাকেন। এখানে পারলেও অলিম্পিকে কেন হচ্ছে না? কর্মকর্তারা যুক্তি দেখান, অলিম্পিকে বড়জোর ৪/৫ জন ক্রীড়াবিদ যায়, এখানে পদক জয়ের সম্ভাবনা থাকবে কীভাবে? ক্রীড়াবিদদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। সামান্য প্রস্তুতি নিয়ে পদক জেতার আশা কোনোভাবেই করা যায় না। তাহলে কি জীবনেও বাংলাদেশ পদক জিততে পারবে না। বিওএর এক কর্মকর্তা বললেন, দীর্ঘমেয়াদের প্রস্তুতির ব্যবস্থা নেওয়া হোক, তাহলে অবশ্যই অলিম্পিকে পদক জেতা সম্ভব।