শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

শেষ হলো কলঙ্কময় পর্ব

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

শেষ হলো কলঙ্কময় পর্ব

ফুটবল বরাবরই ঢাকাকেন্দ্রিক। অনেকে তাই বলেন, বাফুফে নয় ফুটবলকে বাফুফের বদলে ঢাফুফে বললেই ভালো হয়। এবার টনক নড়েছে কর্মকর্তাদের। ঢাকার বদলে পেশাদার লিগের যাত্রা হয়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। এমন নতুনত্ব আনায় বাফুফে ধন্যবাদ পেতেই পারে। চার জেলায় লিগ হবে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু চট্টগ্রামে যেভাবে লিগ হলো তা কি সুষ্ঠুভাবে হয়েছে? গতকালকের ম্যাচ দিয়ে চট্টগ্রামপর্ব শেষ হয়েছে। ফুটবলপ্রেমীরা সন্তুষ্ট হতেন যদি লিগে বিতর্ক না উঠত। এই প্রথম দেশ সেরা ক্লাবগুলো চট্টগ্রামে খেলতে আসেন। দর্শকরা কি তা প্রাণ ভরে উপভোগ করেছেন? বিতর্কিত রেফারিং দেখে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছিলেন। বলা হচ্ছে কলঙ্ক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।

এক্ষেত্রে দেশের সবচেয়ে আলোচিত দল শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের নাম উল্লেখ করতে হয়। অন্যদের বেলায় নানা অভিযোগ থাকলেও পেশাদার লিগে পুরোপুরি পেশাদারিত্ব মেনেই মাঠে নামছে শেখ রাসেল। সুযোগ-সুবিধা পেয়ে দলের ফুটবলাররাও সন্তুষ্ট। তারপরও দুর্ভাগ্য গত মৌসুমে কোনো ট্রফিই ঘরে তুলতে পারেনি। তাতে কি, ভেঙে পড়েনি শেখ রাসেল। নতুন মৌসুমে সাফল্য পেতে এবারও দেশসেরা ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়েছে। উড়িয়ে আনা হয়েছে বিদেশি ভালোমানের ফুটবলারও। ভালো খেলেও মৌসুমে প্রথম দুই ট্রফি স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপের ট্রফি হাত ছাড়া হয়ে যায়।

পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে দল সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে। কিছু খেলোয়াড় ইনজুরিতে ভুগছেন। কিন্তু শেখ রাসেল যে মানের দল তাতেও মাঠে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। লিগ জিততে মরিয়া খেলোয়াড়রাও। কিন্তু শিরোপার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবার রেফারি। রেফারিং নিয়ে বিতর্ক আগেও হয়েছে। কিন্তু এবার যা হচ্ছে তা আগের সব কলঙ্ককে ছাড়িয়ে গেছে। চট্টগ্রামে দর্শকরা দেখেছেন রেফারির মান। উদ্বোধনী ম্যাচে শেখ রাসেল হেরে গেছে উত্তর বারিধারার কাছে। ফুটবলে দুর্বলদের কাছে ফেবারিটদের হারের অনেক রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু সেদিনের হারকে কি প্রকৃত হার বলা যায়। অযথা পেনাল্টি দিয়ে ফেবারিট দলের পুরো পয়েন্ট কেড়ে নেওয়া হলো। শেখ রাসেলকে ন্যায্য পেনাল্টি থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে করে কি বোঝা যায়? এত কিছুর পরও শেখ রাসেলের খেলোয়াড়রা ঠাণ্ডা মাথায় খেলে গেছেন। অন্য দল হলে হয়তো ক্ষোভে মাঠ ছেড়ে উঠে যেত। পরের ম্যাচে এক তরফা খেলেও রহমতগঞ্জের কাছে ০-২ গোলে হার মেনেছে। অস্বীকার করব না রহমতগঞ্জের গোল নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। ডিফেন্ডারদের ভুলে তারা সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। তারপরও রেফারির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একের পর এক আক্রমণ করেছে শেখ রাসেল। যেকোনো সময় গোল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এখানে অফসাইডের পতাকা উড়িয়ে গোলের সম্ভাবনা নষ্ট করেছেন রেফারিই।

আসা যাক, শেখ রাসেল-চট্টগ্রাম আবাহনী ম্যাচ প্রসঙ্গে। এবার দুই দল তারকানির্ভর দল গড়েছে। এ হাইভোল্টেজ ম্যাচে কে যে জিতবে বলা মুশকিল ছিল। গ্যালারিতে উল্লেখযোগ্য দর্শক উপস্থিত ছিলেন। বড় ম্যাচ উপভোগ করবে এটাই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু বিতর্কিত রেফারিংয়ে তা হয়নি।

ম্যাচে প্রথমে গোল করে এগিয়ে যায় চট্টগ্রাম আবাহনী। পরিষ্কার গোল এখানে আপত্তি তোলার প্রশ্ন উঠে না। পিছিয়ে গেলেও ম্যাচ ছিল শেখ রাসেলের নিয়ন্ত্রণে। প্রথমার্ধে শেষ মুহূর্তে সমতাও ফিরে আনে শেখ  রাসেল।

দ্বিতীয়ার্ধেও কোণঠাসা অবস্থায় চট্টগ্রাম আবাহনী। শেখ রাসেলের আক্রমণ সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল মামুনুলরা। অবস্থা এমন যে কোনো সময়ে গোল পেয়ে যাবে শেখ রাসেল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রেফারি ভিলেনের ভূমিকা পালন করলেন। পরিষ্কার অফসাইড, অথচ সহকারী রেফারিকে পতাকা উড়াতে দেখা গেল না। অবৈধভাবে গোল করে বসলেন লিওনেন। গোল করার পরও চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়রা নীরবভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। তারাও ভেবেছিলেন এটা অফসাইডের গোল। কিন্তু রেফারির বাঁশি শুনে তারা উৎসবে মেতে উঠলেন। আর এভাবেই রেফারি জিতিয়ে দিলেন চট্টগ্রাম আবাহনীকে।

লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদীও স্বীকার করেছেন ভুল রেফারিংয়ে। ভুল হতেই পারে। কিন্তু বার বার শেখ রাসেল শিকার হবে কেন? একে কি ভুল বলা যায়, শেখ রাসেলের বিরুদ্ধে যে রেফারিংয়ের দেখা মিলল তাতে মনে হয়েছে কোনো মহলকে খুশি করতেই এ পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। এমন দৃশ্য দেখার পরও চট্টগ্রাম পর্বকে কি সফল বলা যায়। বরং এটাই বলা যায় কলঙ্কে ভরা চট্টগ্রাম পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটল। এখন বাকি তিন ভেন্যুতে কি ঘটে সেটাই দেখার বিষয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর