রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফেল্‌প্‌সকে চমকে দিলেন স্কুলিং

ক্রীড়া ডেস্ক

ফেল্‌প্‌সকে চমকে দিলেন স্কুলিং

১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে ‘দ্য ফ্লাইং ফিশ’ খ্যাত মাইকেল ফেল্প্সকে হারিয়ে সোনা জয়ের পর সিঙ্গাপুরের ২১ বছরের তরুণ যোসেফ স্কুলিং —ইন্টারনেট

মাইকেল ফেল্পেসর বয়স ৩১ বছর। সাঁতারের জন্য বয়সটা একটু বেশিই। তার পরও রিও অলিম্পিকে তার দুরন্তপনা টগবগে যুবকদেরও হার মানিয়েছে। তবে ক্লান্তির শেষ ধাপটা অতিক্রম করে গেলে কীই বা করার থাকে! এমনকি ‘দ্য ফ্লাইং ফিশ’ মাইকেল ফেল্পেসরও কিছু করার ছিল না। ২১ বছরের এক টগবগে সিঙ্গাপুরি তরুণ জোসেফ স্কুলিং দুরন্তপনায় হারিয়ে দিলেন মাইকেল ফেল্প্সকে। ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে মাইকেল ফেল্পেস হারিয়ে সোনা জিতলেন স্কুলিং। এটা সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে প্রথম অলিম্পিক সোনা। ২২টি অলিম্পিক সোনা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো মার্কিন সাঁতারু ফেল্প্সকে। অবশ্য এতেই তিনি অসাধারণ সব রেকর্ডের মালিক বনে গেছেন। যে রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন দেখার দুঃসাহস কেবল আরও একজন মাইকেল ফেল্প্সই দেখাতে পারেন। সে ফেল্পেসর জন্ম কবে কে জানে! আট বছর আগে মার্কিন সাঁতারু দল অলিম্পিকের ক্যাম্প করেছিল সিঙ্গাপুরে। মাইকেল ফেল্প্স তখন মহাতারকা। সিঙ্গাপুরের কান্ট্রি ক্লাবে ১৩ বছরের চশমা পরা এক বালক খুব শখ করে ছবি তুলেছিল ফেল্পেসর সঙ্গে। কে জানত ঠিক আট বছর পর কান্ট্রি ক্লাবের সেই বালকই মাইকেল ফেল্প্সকে হারিয়ে সোনা জিতবে অলিম্পিকে! সেই বালকই আজকের জোসেফ স্কুলিং। ১০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে ৫০.৩৯ সেকেন্ড টাইমিং করে সোনা জিতেছেন তিনি। ফেল্পেসর গড়া অলিম্পিক রেকর্ডটাও (৫০.৫৮ সেকেন্ড) ভেঙেছেন স্কুলিং। এ ইভেন্টে ৫১.১৪ সেকেন্ড টাইমিং করে রুপা জিতেছেন মাইকেল ফেল্প্স, চ্যাড লি ক্লস ও ল্যাসজলো সেহ্। সিঙ্গাপুরকে প্রথম অলিম্পিক সোনা উপহার দেওয়ায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী লি হিসিয়েন লুঙ সোনাজয়ী স্কুলিংকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘এটা সত্যিই অসাধারণ। বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে লড়াই করে মনোযোগ ধরে রেখে বিজয়ী হওয়াটা দারুণ ব্যাপার।’ স্কুলিং সোনার পদকের পাশাপাশি এক মিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলারও পাচ্ছেন পুরস্কার হিসেবে। তার সোনা জয়ের খবরে পুরো সিঙ্গাপুরই এখন উৎসবে মেতেছে। দেশে ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি। আর যাকে হারিয়ে সোনা জিতলেন সেই ফেল্প্স নাকি পিঠ চাপড়ে বলেছেন, ‘দারুণ করেছ। এটা সত্যিই এক অসাধারণ রেস ছিল।’ ফেল্পেস আরও চার বছর সুইমিংপুলে থাকার অনুরোধ করেছিলেন স্কুলিং। কিন্তু এখানেই সমাপ্তি রেখা টানছেন ফেল্প্স। বলেছেন, ‘আর নয়, এবার থামতে চাই।’ বৃহস্পতিবার ২০০ মিটার মিডলেতে সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে অলিম্পিকে ব্যক্তিগত ইভেন্টে ১৩ নম্বর সোনা শোকেসে পুরেন ফেল্প্স। ২২টি অলিম্পিক সোনার বাকি ৯টি এসেছে রিলে ইভেন্ট থেকে। ১৫২ খ্রিস্টপূর্বের গ্রিক অলিম্পিকে রিলের ধারণা ছিল না। লিওনাইডাস ১২টি একক সোনা জিতে যে রেকর্ড গড়েছিলেন তা টিকে ছিল ২০০০ বছরেরও বেশি। ১৬৪ থেকে ১৫২ খ্রিস্টপূর্ব, চারটি অলিম্পিয়াডে তিনি স্টাডিয়ন, ডিয়াউলস আর হপলিটডরোমোস ইভেন্টে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। স্টাডিয়ন আর ডিয়াউলস অনেকটা এখনকার ২০০ মিটার আর ৪০০ মিটার স্প্রিন্টের মতো। আর হপলিটডরোমোসে খেলোয়াড়দের দৌড়াতে হতো ভারী ঢাল হাতে, কাঁসা নির্মিত বর্ম পরে। এতসব রেকর্ড গড়া মাইকেল ফেল্প্স পুল থেকে বিদায় নিচ্ছেন এক নতুন তারকার সন্ধান দিয়ে। সিঙ্গাপুরের ২১ বছরের তরুণ স্কুলিং অবশ্য কতদূর যাবেন তা কেবল ভবিষ্যৎই বলতে পারে! এখানেই হয়তো থেমে যাবে তার সাঁতার। আবার ফেল্পেসর মতো মহাতারকাও হতে পারেন তিনি। তবে মাইকেল ফেল্প্সকে হারিয়ে প্রথম অলিম্পিক সোনা জয়ের স্মৃতি কখনই মলিন হবে না স্কুলিংয়ের।

সর্বশেষ খবর