মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

বোল্ট মানেই গোল্ড

মেজবাহ্-উল-হক

বোল্ট মানেই গোল্ড

সাঁতারে জলদানব মাইকেল ফেলপসকে হারিয়ে দিয়েছে সিঙ্গাপুরের ‘পুঁচকে’ স্কুলিং! উসাইন বোল্ট কি পারবেন এবার? ভক্তদের মনে এমন প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক ছিল না। হয়তো উঠেও ছিল! তা ছাড়া রিওতে জ্যামাইকান বিদ্যুতের বিমর্ষ চাহুনিও যেন দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন ভক্তদের। কিন্তু ফাইনালে বোল্ট বুঝিয়ে দিলেন ১০০ মিটারে তিনিই রাজাধিরাজ! তিনিই সম্রাট!

বিশ্ব রেকর্ড হয়নি। হয়নি অলিম্পিক রেকর্ডও। তবে ৯.৮১ সেকেন্ড সময় নিয়ে ঠিকই সোনা জিতেছেন। ৯.৮৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে সিলভার জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন। ৯.৯১ সেকেন্ড সময় নিয়ে ব্রোঞ্জ জিতেছেন কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রেসে। একটুর জন্য পদক মিস করেছেন বোল্টের স্বদেশি ইয়োহান ব্লেক। তার টাইমিং ছিল ৯.৯৩।

বোল্ট প্রথম ৫০ মিটারে বেশ খানিকটা পিছিয়ে ছিলেন। তার থেকে বেশ খানিকটা সামনে ছিলেন গ্যাটলিন। ৬০-৭০ মিটার পর্যন্ত গ্যাটলিন-বোল্ট সমানে সমান। কিন্তু বোল্টের আসল শক্তি তো শেষের দিকে। এবারও নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে কার্পণ্য করেননি। শেষ ৩০ মিটারেই এগিয়ে যান। গ্যাটলিনকে পেছনে ফেলে তার চেয়ে ০.১০ সেকেন্ড আগেই ‘ফিনিশিং টাচে’ পৌঁছে যান।

১০০ মিটার স্প্রিন্টে অলিম্পিক রেকর্ড এবং বিশ্ব রেকর্ড দুই-ই বোল্টের। ২০০৯ সালে জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে মাত্র ৯.৫৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। জ্যামাইকান বিদ্যুতের অলিম্পিক রেকর্ডটি হয়েছে ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে। সময় নিয়েছিলেন ৯.৬৩ সেকেন্ড।

২০০ মিটার স্প্রিন্টে বিশ্ব রেকর্ডও বোল্টের। ওই বার্লিনেই ১৯.১৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

মজার বিষয় হচ্ছে, ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে ১৫০ মিটার স্প্রিন্টে ১৪.৩৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে অন্যরকম এক রেকর্ড গড়েছিলেন বোল্ট। ওই ইভেন্টের শেষের ১০০ মিটারে বোল্ট সময় নিয়েছিলেন মাত্র ৮.৭০ সেকেন্ড। অর্থাৎ ঘণ্টায় ৪১.৩৮ কিলোমিটার গতিতে।

৪০০ মিটারের বিশ্ব রেকর্ডটিও বোল্টের। ২০০৭ সালে জ্যামাইকার কিংস্টনে মাত্র ৪৫.২৮ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ৪+১০০ মিটার রিলের রেকর্ডটি লন্ডন অলিম্পিকে। সময় নিয়েছিলেন ৩৬.৮৪ সেকেন্ড। রিলেতে বোল্টের সঙ্গে ছিলেন স্বদেশি ইয়োহান ব্লেক, মাইকেল ফ্রটার ও নেস্তা চার্টার।

তবে বোল্ট রিওতে শেষের ৫০ মিটার যে গতিতে দৌড়েছেন একই গতি প্রথম ৫০ মিটারে থাকলে হয়তো নিজের গড়া রেকর্ডটা ভেঙে রিও ডি জেনিরোতেই সৃষ্টি করতে পারতেন নতুন আরেক ইতিহাস।

তবে বোল্টের ধীরগতিতে শুরুর পেছনে রহস্য কী? নিশ্চয়ই ২০১১ সালের দেগু বিশ্ব অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের সেই বিষাদময় দুঃস্মৃতি! বোল্ট তখন ছিলেন তার সেরা ফর্মে। ট্র্যাকে নামলেই বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি হবে— এমন একটা পরিস্থিতি। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে সবকিছু হয়ে যায় ওলটপালট। কোথায় নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়বেন, উল্টো ‘ফলস স্টার্ট’ এর কারণে বাদ পড়ে গেলেন। বোল্টের বিমর্ষ চেহারা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তার কোটি কোটি ভক্ত। বিখ্যাত অ্যাথলেট কিম কলিন্সের ভাষায় সেটি ছিল অ্যাথলেটিকসের ‘বিষাদময় দিন’। তবে ওই আসরের ফাইনালে বোল্ট অংশ নিতে না পারলেও তার স্বদেশি ইয়োহান ব্লেক ৯.৬২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হয়েছিলেন। বোল্টের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় কষ্ট এটি। জ্যামাইকান তারকার জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষাও। এরপর থেকেই বোল্ট অনেক বেশি সতর্ক। আর এই বাড়তি সতর্কতার কারণেই শুরুটা হচ্ছে ধীরগতির।

তবে রিওতে ১০০ মিটারে বিশ্ব রেকর্ড না হলেও ২০০ মিটার এবং ৪+১০০ মিটার রিলেতে এখনো সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব রেকর্ড না হলেইবা কি! ১০০ মিটারের মতো ওই দুই ইভেন্টে সোনা জিততে পারলেই জ্যামাইকান বিদ্যুৎ যেন লাভ করবেন ‘অমরত্ব্ব’! অলিম্পিকের টানা ইভেন্টে এই তিন ইভেন্টে সোনা জয় করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! ইতিমধ্যে কিংবদন্তির তালিকায় সোনার হরফে লেখা হয়ে গেছে বোল্টের নাম।

‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকের ‘গ্রেটেস্ট শো’ অবশ্যই অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ইভেন্টটি। গেমসের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই আসরেই তো বাজিমাত করেছেন বোল্ট। বেইজিং ও লন্ডন অলিম্পিকের পর টানা তৃতীয়বারের মতো রিও অলিম্পিকে সোনা জিতে হ্যাটট্রিক করেছেন। সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক ইতিহাস। তাই এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ানের প্রসঙ্গ উঠলে সবার আগে আসবে উসাইন বোল্টের নাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর