ম্যাচ শেষ হওয়ার মিনিট বিশেক পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তখনো তার হাত-পা কাঁপছিল। শেষ ওভারের উত্তেজনায় তখনো আপ্লুত খুলনা টাইটানস ক্যাপ্টেন। হাসতে হাসতে বললেন, ‘জানি না, কিচ্ছু জানি না! কিভাবে যে কী হয়ে গেছে!’ মাহমুদুল্লাহ বললেন, ‘আমি এতই নার্ভাস ছিলাম যে, এখনো আমার হাত ঘামছে।’
এমন রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক থাকার কথাও নয়। শেষ ওভারে মাহমুদুল্লাহ যখন বল হাতে তুলে নেন তখন খুলনার জয়ের আশা নেই বললেই চলে। ছয় বলে জয়ের জন্য প্রতিপক্ষ চিটাগং ভাইকিংসের প্রয়োজন ছিল ছয় রান। হাতে চার উইকেট। ২২ গজেও রয়েছেন দুই সেট ব্যাটসম্যান। আগের ওভারে ১১ রান দিয়ে পাকিস্তানি বোলার জুনায়েদ খান যেন টাইটানসের সব সম্ভাবনার সমাধি রচনা করে গেছেন। হাতে আর বোলিং অপশনও নেই। অগত্যা মাহমুদুল্লাহকেই বল হাতে তুলে নিতে হলো। আর এসেই দেখালেন ক্যারিশমা। মাত্র এক রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়ে খুলনাকে এনে দিলেন চার রানের স্বপ্নিল এক জয়। জাদুকরী শেষ ওভারের প্রথম বলেই এক রান দেন। দ্বিতীয় বলে ভাইকিংসের লঙ্কান তারকা চতুরঙ্গ আউট। তৃতীয় বল ডট। চতুর্থ বলে রাজ্জাক আউট। পঞ্চম বল ডট। শেষ বলে আফগান তারকা মোহাম্মদ নবী আউট।
ক্যারিশমেটিক শেষ ওভার সম্পর্কে মাহমুদুল্লাহর ভাষ্য, ‘আলাদা কোনো পরিকল্পনা ছিল না। আমি শুধু চেষ্টা করেছি, নবীকে যাতে যত কম স্ট্রাইক দেওয়া যায়। চতুরঙ্গর উইকেটটা ক্রুশিয়াল ছিল। তারপর একটা বল ডট যায়। আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়ে যায়। ৬ বলে ৬ রান, দুইজন সেট ব্যাটসম্যান। একটা ছয়ই যথেষ্ট। এমন অবস্থায় জেতা কঠিনই ছিল। আমি চিন্তা করেছিলাম ম্যাচটা হেরে গেছি।’নিজেদের প্রথম ম্যাচে রাজশাহী কিংসের বিরুদ্ধেও একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ ওভারে তিন রানে তিন উইকেট নিয়ে খুলনাকে তিন রানের একটা দারুণ জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। শেষ ওভারে ক্যারিশমেটিক বোলিং করে খুলনাকে দুই জয় এনে দেওয়ায় মাহমুদুল্লাহ এখন হয়ে গেছেন শেষ ওভারের ম্যাজিকম্যান।
কাল প্রথমে ব্যাট করে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় মাত্র ১২৭ রান করে খুলনা। বোলারদের দাপটে পরে চিটাগংকে ১২৩ রানেই আটকে দেয়। মাহমুদুল্লাহ ছাড়াও শফিউল অসাধারণ বোলিং করেছেন। চার ওভারে ২৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। তবে শেষ ওভারের ক্যারিশমায় ম্যাচসেরা মাহমুদুল্লাহই। তবে রুদ্ধশ্বাস এমন জয়ের পর মাহমুদুল্লাহর স্মৃতিতে ভাসে টি-২০ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচটি। শেষ দুই বলে দুই রান দরকার। কিন্তু চাপ নিতে না পেরে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হয়ে যান মাহমুদুল্লাহ। বাংলাদেশও হেরে যায় মাত্র ১ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খুলনা : ১২৭/৭, ২০ ওভার, চট্টগ্রাম : ১২৩/৯, ২০ ওভার।
ঢাকা : ১৭০/৬, ২০ ওভার, রংপুর : ৯২/৯।