শিরোনাম
শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভাইকিংসের কাছে হারল কিংস

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

ভাইকিংসের কাছে হারল কিংস

ড্যারেন স্যামি জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে উইকেটের পাশে সবুজ ঘাসে দাঁড়িয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করছেন। ছক্কা আর চার মারার কৌশলটা রপ্ত করছেন ঠিকঠাক। ক্যারিবীয় এই ক্রিকেটার সেই মনোযোগী ছাত্রের মতো যে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথেও বার বার চোখ বুলিয়ে নেয় উত্তরপত্রের দিকে। কিন্তু ম্যাচ শুরুর ঠিক পূর্বমুহূর্তে ড্যারেন স্যামির ব্যাটিং অনুশীলনটা সত্যিকারের পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধোপে টিকল না। ২ ছক্কায় ৭ বলে ১৪ রান করেই তালগোল পাকিয়ে উইকেট ছাড়েন তিনি। ধুঁকতে থাকা রাজশাহী কিংসের ব্যাটিং লাইন আরও একবার মুখ থুবড়ে পড়ল— চিটাগং কিংসের ১৯০ রানের বিশাল সংগ্রহের সামনে।

ছুটির দিন। সকাল থেকেই সাগরিকায় ক্রিকেট ভক্তদের ছোটখাটো ভিড় জমতে থাকে। দুপুর গড়ানোর আগেই এই ভিড় মিছিলে রূপ নেয়। এ যেন দলে দলে মিছিল নিয়ে রাজনৈতিক কোনো সভায় যোগ দিতে যাওয়ার মতোই ব্যাপার। হাতে দলীয় পতাকা আর দলের নামি-দামিদের পোস্টার-ফেস্টুন। চট্টগ্রামবাসী বিপিএলের দ্বিতীয় পর্বে প্রথম দিনটা উদযাপন করতে পারেনি মোটেও। সাকিবদের কাছে তামিমদের পরাজয় অনেককেই হতাশ করে তুলেছিল। তারপরও গতকাল পুরো চট্টগ্রাম তামিমদের সঙ্গে মাঠের লড়াইয়ে সমানতালে যোগ দিয়েছিল। কানায় কানায় পূর্ণ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে সমর্থকরা সমস্বরে ঘোষণা করছিল, নবী-এনামুলদের একেকটি চার-ছক্কা আর তাসকিনের একেকটি উইকেট শিকারের কথা। রাজশাহী কিংসের হাতে গোনা কয়েকজন সমর্থক ততক্ষণে ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছে গ্যালারিতে। তামিম জানতেন, হাজার হাজার দর্শক সমর্থনপুষ্ট এই চট্টগ্রামেই ভাগ্য ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। ঢাকায় অন্তত এমন হাজারো জনতার সমর্থন পাবেন না তিনি। সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘সেরা ক্রিকেটটা খেল।’ তথ্যটা জানালেন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ নবী। কোচ সালাউদ্দিনও নাকি একই তাগিদ দিয়েছেন। টানা চার ম্যাচ পরাজয়ের পর একটা দারুণ জয়। তামিম ইকবাল কী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন! গতকালের ১৯ রানের জয়টা চিটাগং ভাইকিংসের জন্য ঠিক স্বস্তির নয়। এটা অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মতো ব্যাপার। ৬ ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এখনো ভাইকিংস রয়ে গেছে পঞ্চমে। বাকি ছয় ম্যাচে তামিমদের এমন কিছু করতে হবে যাতে অন্তত সেরা চারে থাকতে পারেন। টস হেরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাওয়ার পরই তামিমরা চোয়ালবদ্ধ ব্যাটিং দৃঢ়তা নিয়ে হামলে পড়েন রাজশাহীর ওপর। শুরুতে তামিমকে বিদায় করে যে স্বস্তি এসেছিল রাজশাহী কিংসে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেনি। ডোয়াইন স্মিথ (৩৪) আর এনামুল হক বিজয় (৫০) ভাইকিংসদের বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে দেন। এনামুল-স্মিথদের এই গতি চিটাগংকে হয়তো ১৫০-১৬০ রান উপহার দিতে পারত। সেক্ষেত্রে জয়ের নিশ্চয়তা আসে কোথায়! ১০ ওভারে ৬৯/৪। চিটাগং কিংসের এ অবস্থায় উইকেটে আসেন আফগান ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী। এরপর থেকে তার ব্যাটে যেন চার-ছক্কার ফুল ফুটতে থাকে। ৬ চার আর ৬ ছক্কায় তিনি মাত্র ৩৭ বলে ৮৭ রানের এক অসাধারণ ইনিংস খেলেন। চিটাগং ভাইকিংস চলতি বিপিএলের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর গড়ে (১৯০)। রানের এ উচ্চতায় ওঠার পথে বাদ সাধতে পারত রাজশাহী। কিংস অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি ১৯তম ওভারে নবীর ক্যাচ মিস করেন। এর ঠিক পরের ৯ বলে নবী আরও ২৭ রান যোগ করেন দলীয় খাতায়! এই রানটাই হারিয়ে দেয় রাজশাহীকে। সংবাদ সম্মেলনে এসে স্যামিট প্যাটেল যেমন বার বার বলছিলেন, ‘১৭০/১৭৫ রানের মধ্যে থাকলেও ম্যাচটা জয় করা সম্ভব হতো।’ বিজয়ী দলের ম্যাচসেরা মোহাম্মদ নবীও সেই একই কথা বলেছেন। ‘এ উইকেটে খুব সহজেই ১৬০/১৭০ করা সম্ভব। ১৭ ওভার পর আমরা সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল, যত বেশি রান করা সম্ভব হয়।’ নবীরা সুযোগটা দারুণভাবেই কাজে লাগিয়েছেন। ১৫ ওভারে তাদের রান ছিল ১১৪/৪। পরবর্তী ৫ ওভারে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে চিটাগং ভাইকিংস সংগ্রহ করে আরও ৭৬ রান (১৫, ৮, ২০, ১৬ ও ১৭)!

নবী-এনামুলের ব্যাটিং ঝড়ের পর বল হাতে আগুন ঝরান চিটাগং ভাইকিংসের তাসকিন আহমেদ। মাত্র ৩১ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ ৫টি উইকেট। ড্যারেন স্যামির গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি শিকার করে আবারও শীর্ষে থাকা মোহাম্মদ শহীদকে (১১ উইকেট) ছুঁয়ে ফেলেন। চিটাগংয়ের বোলিং তোপে রাজশাহীর ইনিংস থমকে যায় ১৭১ রানেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

চিটাগং ভাইকিংস : ১৯০/৫ ২০ ওভার, রাজশাহী কিংস : ১৭১/৯ ২০ ওভার

ফলাফল : চিটাগং ১৯ রানে জয়ী

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ১২২/৫ ২০ ওভার

রংপুর রাইডার্স : ১২৬/১ ২০ ওভার

ফলাফল : রংপুর রাইডার্স ৯ উইকেটে জয়ী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর