বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

অপ্রতিরোধ্য রংপুর রাইডার্স

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

অপ্রতিরোধ্য রংপুর রাইডার্স

ঢাকায় বিপিএলের প্রথম পর্বে সেরা দল ছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। তবে সাকিব আল হাসানরা জয়ের এই ধারা ধরে রাখতে পারেননি চট্টগ্রামে। সাগরিকায় প্রথম ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে হারালেও পরবর্তী দুই ম্যাচে তারা আত্মসমর্পণ করেছে খুলনা টাইটানস আর রাজশাহী কিংসের কাছে। চট্টগ্রামে সাকিবদের কাছ থেকে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কেড়ে নিয়েছেন আফ্রিদি-নাঈমরা। গতকাল দুরন্ত খুলনার বিপক্ষে ৭ উইকেটের দারুণ এক জয়ে রংপুর রাইডার্স বিপিএলের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করল।

শহীদ আফ্রিদির গুরুত্ব রংপুর রাইডার্সে একজন ক্রিকেটারের চেয়েও অনেক বেশি। তিনি নিজে খেলছেন। দলটাকে উৎসাহিত করছেন প্রতিনিয়ত। তরুণদের নিত্য-নতুন ক্রিকেটের পাঠ দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে আফ্রিদি যেন রূপকথার সেই রাজপুত্র যার জাদুর কাঠির জাদুতে হেরে যায় দুরন্ত সব প্রতিপক্ষরা। রংপুর রাইডার্সের কোচ আর ক্রিকেটারদের মুখে আফ্রিদি-বন্দনা চলছেই। আর হবে না-ই বা কেন! গতকালও আফ্রিদি দুটি উইকেট নিয়েছেন। ব্যাট হাতেও হাঁকিয়ে যাচ্ছে বাহারি চার-ছক্কা। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানি এ গ্রেট বল হাতে ১১ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেছেন ৫৪ রান।

খুলনা টাইটানসের দুরন্তপনা ঢাকা ডায়নামাইটস আর বরিশাল বুলসের মতো দল দুটিকেও কুপোকাত করেছিল। তবে রংপুর রাইডার্সের কাছে এসেই কেমন ঝিমিয়ে পড়ল তারা! গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফ্রিদি-আরাফাত-রুবেলের দুরন্ত বোলিংয়ে ১২৫ রানের বেশি তুলতে পারেনি খুলনা টাইটানস। তিনজনেই ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন। তবে ব্যাট হাতে ২০ বলে ২৬ রান করায় ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন আফ্রিদিই। খুলনা টাইটানস নিজেদের ইনিংসে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে। ১৩ রানেই তাদের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে দেন আরাফাত সানি। আবদুল মজিদের পর ফ্লেচারকেও শিকার করেন তিনিই। এরপর নিয়মিত বিরতিতে টুপ টুপ করে উইকেট পড়তে থাকায় দলটা বড় সংগ্রহের পথে হাঁটতে পারেনি। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদেরই দুষলেন। খুলনা টাইটানসের গড়ে তোলা ছোটখাট পাহাড়টা ডিঙাতে খুব বেশি সময় লাগেনি রংপুর রাইডার্সের। এক ওভার বাকি থাকতেই রংপুর রাইডার্স ১২৯ রান করে জয় তুলে নেয়। মোহাম্মদ মিথুন ৪৯ আর মোহাম্মদ শাহজাদ ৩৭ রান করে রংপুরকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।

রংপুর রাইডার্স এ জয়ে নিশ্চিত করল বিপিএলের শীর্ষস্থান। ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছেন আফ্রিদি-নাঈমরা। ১ ম্যাচ বেশি খেলে সমান পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে খুলনা টাইটানসও। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে অবস্থান করছে রংপুরই। এই চট্টগ্রামেই আফ্রিদিরা খুলনার আগে হারিয়েছেন মুশফিকের দুরন্ত বরিশাল বুলস আর মাশরাফির কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে। মিরপুরে ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে হারের পর টানা তিন ম্যাচ জিতল রংপুর রাইডার্স। আরও ৬টা ম্যাচ বাকি রংপুর রাইডার্সের সামনে। শীর্ষে থেকে প্লে-অফ খেলতে হলে জয়ের এ ধারাটা ধরে রাখতে হবে মিরপুরে বিপিএলের তৃতীয় পর্বেও। বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বে রংপুর রাইডার্স ছাড়া পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে প্রতিটা দলই। ঢাকা ডায়নামাইটস, বরিশাল বুলস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান ও রাজশাহী কিংস হেরেছে দুই ম্যাচ করে এবং চিটাগং ভাইকিংস ও খুলনা টাইটানস হেরেছে এক ম্যাচ করে।

খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে গতকাল দারুণ জয়ে উত্ফুল্ল রংপুর কেবল প্লে-অফই নয়, স্বপ্ন দেখছে প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপা জয়ের। তবে এ উৎসবের মধ্যেও বেশ সতর্ক থেকেই এগিয়ে যেতে চায় জাভেদ ওমরের দল। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউর রহমান যেমন বললেন, ‘আমরা শীর্ষে আছি ঠিকই তবে এখনো আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।’ অবশ্য রংপুর রাইডার্স এবার কিছু একটা করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুত। এমনটাই বলে গেলেন জিয়াউর রহমান। ‘আমাদের বোলাররা যেমন ভালো করছে তেমনি ব্যাটসম্যানরাও।’ জিয়াউর রহমানের এ বক্তব্যের প্রমাণ রংপুর রাইডার্স প্রতি ম্যাচেই দিয়ে যাচ্ছে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে রংপুর।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

খুলনা টাইটানস্ : ২০ ওভারে ১২৫/৭ রংপুর রাইডার্স : ১৯ ওভারে ১২৯/৩

ফল: রংপুর ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : শহিদ আফ্রিদি (রংপুর)

চিটাগং ভাইকিংস : ২০ ওভারে ১৮৫/৫

বরিশাল বুলস : ১৮.৪ ওভারে ১০৭/১০

ফল : চিটাগং ৭৮ রানে জয়ী, ম্যাচসেরা : শোয়েব মালিক (চিটাগং)

সর্বশেষ খবর