মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মিস ফিল্ডিং ডুবাল টাইগারদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মিস ফিল্ডিং ডুবাল টাইগারদের

ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে দুই তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম ৬৩ রানের জুটি গড়েন। ব্যবধান কমালেও হার এড়াতে পারেননি —এএফপি

ফারগুসনের আগের বলটায় ছক্কা হাঁকান সাকিব। জিদ করে পরের বলে ফের বাউন্সার মারেন ফারগুসন। চ্যালেঞ্জটাও ভালোভাবে নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। কিন্তু পারেননি গতিময় বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। যা হওয়ার, তাই হলো। ব্যাটের উপরে লেগে সহজ ক্যাচ। টিম সাউদি তালুবন্দী করেন সাকিবের ক্যাচটি। ওই ক্যাচের সঙ্গে সঙ্গেই ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্নটাও তালুবন্দী হলো! শুধু সাকিব নন, সাব্বির রহমান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস-সবাই সাজঘরে ফিরেন ব্ল্যাক ক্যাপস বোলারদের বাউন্সারের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে প্রথমটিতে যে কন্ডিশনের ভয় ছিল সবার, কাল তার ছিটেফোঁটা দেখা মেলেনি। টাইগাররা ৭৭ রানে হেরেছে কিউই বোলারদের বাউন্সারের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ ও বাজে ফিল্ডিং করে। গত দেড়-দুই বছরে এতটা বাজে ফিল্ডিং করতে দেখা যায়নি মাশরাফিবাহিনীকে। হ্যাগলি ওভালে শুধু দুই-তিনটি ক্যাচই ছাড়েনি টাইগাররা, গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ছিল সাধারণমানের। এমনটা করলে নেলসনের পরের দুই ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে বাড়তি চাপে পড়তে হবে, কোনো সন্দেহ নেই।

নিউজিল্যান্ড সফরে কন্ডিশন নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না টিম ম্যানেজমেন্টের। সেখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে যেন ক্রিকেটাররা মানিয়ে নিতে পারেন, সেজন্য সিরিজের বেশ আগেই দেশ ছাড়েন ক্রিকেটাররা। উইকেটের বাউন্স ও মুভমেন্টের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ৯ দিনের ক্যাম্পও করেন সিডনিতে। সেখানে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেন মাশরাফিরা। হ্যাগলি ওভালে নামার আগে ওয়েঙ্গিরিতে একটি প্রস্তুতিমূলক ওয়ানডে খেলেন। কিন্তু কাল প্রথম ওয়ানডেতে দীর্ঘ প্রস্তুতির কোনো ছাপই দেখা যায়নি। বরং চাপে পড়তে দেখা গেছে। নাহলে সহজ সহজ ক্যাচ ছাড়ার পাশাপাশি ওয়ান চান্সে বল ধরতে পারেনি ক্রিকেটাররা। ফলে যা হওয়ার হয়েছে। মাশরাফি, মুস্তাফিজ, তাসকিনদের গতি, বাউন্স ও মুভমেন্টকে আরামে সামলে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩৪১ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ৯ উইকেটে ৩৩৮ রান, ১৯৯০ সালে শারজাহতে অস্ট্রেলেশিয়া কাপে করেছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। 

আবহাওয়া রিপোর্ট বলছিল বৃষ্টি হবে না। কিন্তু আকাশে মেঘ থাকবে। উইকেটে ঘাস না থাকলেও চিরায়িত বাউন্স থাকবেই। তাই টস জেতাটা আরাধ্য হয়েছিল মাশরাফির কাছে। টস ভাগ্যটা দিনের শুরুতে টাইগার অধিনায়কের দিকে হাসে। ফিল্ডিং নেন টাইগার অধিনায়ক। দুই পেসার মাশরাফি ও মুস্তাফিজ শুরুতে চেপে ধরেন কিউই ওপেনারদের। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে আঘাত হানেন মুস্তাফিজ। তখন মনে হয়েছিল ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত যথার্থ। কিন্তু শুরুর সেই যাত্রা শেষ পর্যন্ত থাকেনি। অহেতুক শর্ট বল এবং তাড়াহুড়া করতে যেয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরার পরিবর্তে নিজেরাই চাপে পড়ে যান পাল্টা আঘাতে। ওপেনার টম ল্যাথাম বলের চেয়ে দ্রুত রান করেন। ১১৭ বলে ৭ চার ও ৪ বাউন্ডারিতে খেলেন ১৩৭ রানের ইনিংস। শেষ দিকে কলিন মুনরো ৬১ বলে ১৪২.৬২ স্ট্রাইক রেটে ৮৭ রান করেন। ল্যাথাম ও মুনরোই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় টাইগারদের। এজন্য ঘনঘন শর্ট বোলিং ও বাজে ফিল্ডিং দায়ী। দলের দুই সেরা ফিল্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সহজ দুটি ক্যাচ ছেড়েছেন। তাসকিন গতির ঝড় তুলতে যেয়ে অযথা শর্ট বল করেছেন। সেগুলোকে ল্যাথাম, মুনরো, গাপটিল আছড়ে ফেলেছেন গ্যালারিতে। রেকর্ড ইনিংসে স্বাগতিকরা ছক্কা মেরেছেন ৯টি এবং বাউন্ডারি ২৪টি। ম্যাচ হেরে বাজে ফিল্ডিংকে দুষলেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি, ‘ম্যাচে আমাদের ফিল্ডিং ছিল দৃষ্টিকটূ। ক্যাচ ফেলেছি একাধিক। রান চেক দিতে পারিনি। এক রানের জায়গায় ওরা দুই রান নিয়েছে। দুই রানের জায়গায় তিন রান। বাজে ফিল্ডিংয়ের জন্য নিউজিল্যান্ড ২০ রান বেশি করেছে। আমরা ভালো ফিল্ডিং করলে ৪০ রান কম হতো।’

শুধু বাজে ফিল্ডিং নয়। পেসাররা অতিরিক্ত শর্ট বলও করেছেন। স্কোর কার্ড বলে, পেসাররা হ্যাগলি ওভালের বাউন্সকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেননি। মাশরাফি ১০ ওভারের স্পেলে রান দিয়েছেন ৬১। দলের সেরা পেসার মুস্তাফিজ দীর্ঘদিন পর খেলতে নেমে বেশ নার্ভাস ছিলেন। কাটার মাস্টারের স্পেল ছিল ১০-০-৬২-২। তাসকিন ছিলেন আরও খরুচে। গতির ঝড় তুলতে যেয়ে উইকেটের এদিক সেদিক বল ফেলে সর্বোচ্চ ৩টি ছক্কা খেয়েছেন ডান হাতি পেসার। স্পেলটি ছিল ৯-০-৭০-২। ওভার প্রতি স্ট্রাইক রেট ৭.৭৭! বোলারদের শর্ট বোলিং নিয়ে টাইগার অধিনায়কের অভিমত, ‘আমরা একটু বেশিই শর্ট বল করেছি। এমন কন্ডিশনে শর্ট বল করতেই হবে। কিন্তু সেটা কার্যকর হতে হবে। নিউজিল্যান্ডের বোলাররা পারলেও আমরা পারিনি।’

বাজে ফিল্ডিং ও শর্ট বল যেমন ভুগিয়েছে, তেমনি স্বাগতিক পেসারদের বাউন্সার কিন্তু টাইগার ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছে। ৩৪২ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৪৪.৫ ওভারে ২৬৪ রান তুললেও উইকেটের বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। এটা ঠিক হ্যাগলি ওভালের মতোই উইকেটের আচরণ হবে নেলসনের স্যাকসন ওভারের উইকেটের। যেখানে পরের দুটি ওয়ানডে ২৯ ও ৩১ ডিসেম্বর।

সর্বশেষ খবর