মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা ২০১৬

বোল্টের ‘ট্রিপল ট্রিপল’

আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস

রাশেদুর রহমান

বোল্টের ‘ট্রিপল ট্রিপল’

‘আমি মোহাম্মদ আলি আর পেলের মতো গ্রেট হতে চেয়েছিলাম।’ গত ৯ আগস্ট নিজের শেষ অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার আগে এ কথা বলেছিলেন জ্যামাইকান গতি তারকা উসাইন বোল্ট। রিও অলিম্পিকে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং চার গুনিতক ১০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতে কথা রেখেছেন তিনি। ক্রীড়া জগতের মহাতারকা হিসেবে এখন থেকে মোহাম্মদ আলি আর পেলেদের সঙ্গে উচ্চারিত হবে উসাইন বোল্টের নামও।

বেইজিং অলিম্পিকে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং চার গুনিতক ১০০ মিটার রিলেতে সোনা জিতে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছিলেন উসাইন বোল্ট। স্প্রিন্ট জয়ের পর তার দুই হাত তাক করে থাকা ছবিও বিখ্যাত হয়ে যায় এক সময়। তবে উসাইন বোল্ট তখনো সর্বকালের সেরা হওয়ার পথ থেকে অনেক দূরেই ছিলেন। চার বছর অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকে রাজত্ব করার পর বোল্ট হাজির হন লন্ডন অলিম্পিকে। টানা দুই অলিম্পিকে কী ট্রেবল জিততে পারবেন জ্যামাইকান গতি তারকা! ট্র্যাকে নেমেই এই বিস্ময়মাখা প্রশ্নটার উত্তর দিয়ে দেন বোল্ট। লন্ডন অলিম্পিকেও জয় করেন ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং চার গুনিতক ১০০ মিটার রিলে। সোনার ছেলে উসাইন বোল্ট। ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে যায় এক অনন্য রেকর্ড। যে রেকর্ড কেবলই বোল্টের। কিন্তু সর্বকালের সেরা হওয়ার জন্য, মোহাম্মদ আলি কিংবা পেলে হওয়ার জন্য কী এটাই যথেষ্ট! উসাইন বোল্ট নিজেও জানতেন, আলিদের সারিতে যাওয়ার জন্য এরচেয়েও দারুণ কিছু করে দেখাতে হবে। সেটা কী!

দেখতে দেখতেই কেটে যায় আরও চারটা বছর। আট বছর পরও কী একই আছেন উসাইন বোল্ট। রিও অলিম্পিকেও কী দেখা যাবে সেই বিদ্যুত্ গতি! কিছুটা সংশয় তো ছিলই। বিশেষ করে আসাফা পাওয়েলদের দুরন্ত গতি বোল্ট ভক্তদের কিছুটা দোলাচলেই ফেলে দিয়েছিল। তবে রিও অলিম্পিকেও দেখা গেল সেই বোল্টকেই। স্প্রিন্টের শুরুতে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও শেষটায় ঠিকই জয় হয় বোল্টের। এখানেও তিনি জয় করেন ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট আর চার গুনিতক ১০০ মিটার রিলে। এবার সত্যিই নিজেকে সর্বকালের সেরাদের সারিতে নিয়ে যান উসাইন বোল্ট। যেখানে টানা দুই অলিম্পিকে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট আর চার গুনিতক ১০০ মিটার রিলে জিতেনি কেউ, সেখানে ট্রিপল-ট্রিপল! টানা তিনটি অলিম্পিকে তিনটি করে মোট ৯টি সোনার পদক! উসাইন বোল্ট অমরত্বের পথে সবাইকে ছাড়িয়ে যান। স্পর্শ করেন মোহাম্মদ আলি আর পেলেদের গৌরবকেও। কে জানে, এক সময় হয়তো বোল্টকে তার চেয়েও মহান তারকার খ্যাতি দেওয়া হবে!

টানা তিনটা অলিম্পিকে তিনটি করে মোট ৯টি সোনা জেতার পর উসাইন বোল্ট বললেন, ‘বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছি, আমিই সেরা।’ বোল্টের এ বক্তব্যের সঙ্গে এখন আর কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারবে না। আমেরিকান ডেকাথলনজয়ী অলিম্পিয়ান অ্যাশটন এটন তো বলেই দিয়েছেন, ‘সামনের বছরগুলোতে আমরা এমন হাজারও অ্যাথলেট খুঁজে পাব যারা বলবে, আমি বোল্টের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েছি।’ উসাইন বোল্টের সেই বিদ্যুত্ গতি আর দেখা যাবে না, তবে তার কীর্তি ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফেই লেখা থাকবে।

বছরটা বোল্টময় হলেও শেলি অ্যান ফ্রেজার প্রাইসকেও কেউ ভুলে যায়নি। বেইজিং ও লন্ডন অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট জিতে তিনি এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছিলেন। অবশ্য রিও অলিম্পিকে আর পারেননি তিনি। স্বদেশি অ্যালাইন থম্পসন আর মার্কিনী টোরির কাছে হেরে যান তিনি। তবে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অন্তত ব্রোঞ্জ জয় করে নিজেকে পদক তালিকায় ঠিকই রেখেছেন এ জ্যামাইকান তারকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর