বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বছরটা ভালোই কেটেছে

ফিরে দেখা ২০১৬ - বাংলাদেশের হকি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বছরটা ভালোই কেটেছে

বড় ধরনের সাফল্য আসেনি। তারপরও বছরটা হকির খারাপ যায়নি। অন্যান্য বছরের তুলনায় ২০১৬ হকির ভালোই কেটেছে বলা যায়। নির্বাচনকে ঘিরে কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বে অনিশ্চয়তায় বন্দি ছিল হকি। এবার সব সমস্যা কেটে গেছে। মোহামেডান, মেরিনার্সসহ যে পাঁচটি ক্লাব ঘরোয়া আসর বর্জন করেছিল তারাও মাঠে ফিরেছে। সব দলের অংশগ্রহণে প্রিমিয়ার লিগে প্রাণ ফিরে আসে। ক্লাব কাপে ঊষা ক্রীড়াচক্র চ্যাম্পিয়ন হলেও প্রথমবারের মতো লিগ শিরোপা জিতেছে মেরিনার্স ক্লাব। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। তারপরও কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা লিগের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। বিশেষ করে লিগের শেষ ম্যাচে মেরিনার্স যে কাণ্ড ঘটায় ক্রীড়ামোদীরা তা মেনে নিতে পারেনি। ফেডারেশন এই ক্লাবের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে। দুজন কর্মকর্তার মৃত্যুতে নির্বাহী কমিটিতে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। তা পূরণ করা হয় নির্বাচনে বিরোধী পক্ষের দুজনকে স্থান দিয়ে। এনিয়ে কোনো বিতর্কও উঠেনি।

আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে শক্তিশালী পাকিস্তানকে টপকিয়ে রানার্স আপ হয় বাংলাদেশের যুবারা। মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই আসরে ফাইনালে বাংলাদেশ দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতের কাছে ৪-৫ গোলে হেরে যায়। অথচ গ্রুপ পর্বে লড়াইয়ে ভারতের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। যুবারা যে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। হকি বিশেষজ্ঞদের মতে এদেরকে ভালো সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে হকিতে বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী দলে পরিণত হবে।

হতাশ করেনি জাতীয় দলও। গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল  যে ফেডারেশন দোষী খেলোয়াড়দের নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। পরে তাদের শাস্তি মওকুফও করা হয়। এবার কোনো শৃঙ্খলা ভাঙেনি। দেশের জন্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়রা উজার করে খেলেন। যার প্রমাণ মিলে এইচআইএফ কাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। উপযুক্ত অনুশীলন নিয়ে হকি খেলোয়াড়দের আক্ষেপের শেষ ছিল না। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটে। এইচআইএফ কাপে বাংলাদেশের শিরোপা জয় নতুন নয়। তারপরও এবার প্রশিক্ষণে নতুনত্ব আনা হয়েছে। দেশ ছাড়িয়ে খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে ইউরোপে। জার্মানি, পোলান্ড ও অস্ট্রিয়ায় অনুশীলন ছাড়াও বেশ কটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলে। এতে খেলোয়াড়রা উজ্জীবিত ছিলেন। এইচআইএফ কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। এটা নিঃসন্দেহে বড় প্রাপ্তি। এখানে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে লড়ে বাংলাদেশ নিজেদের শক্তি সম্পর্কে ধারণা পাবে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে হকি ফেডারেশন কিন্তু বসে নেই। মানোন্নয়নে তারা নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ চাচ্ছে হকিতে শক্ত একটা অবস্থানে দাঁড়াতে। পাইপ লাইন থেকে খেলোয়াড় বের করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চেষ্টা করলে অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরিত করা যায় যার বড় প্রমাণ আর্জেন্টিনা। এই দেশের পরিচয় ছিল ফুটবলে খ্যাতির জন্য। দুবার বিশ্বজয় ছাড়া তিনবার রানার্সআপ হয়েছে তারা। হকিতেও তারা উন্নতি করেছে তা দেখিয়ে দিয়েছে এবার অলিম্পিকে সোনা জয় করে। ফাইনালে তারা বেলজিয়ামকে পরাজিত করে। জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়ার দাপট ম্লান করে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। বিশ্ব হকিতে ভারত ও পাকিস্তানের রাজত্ব আগেই শেষ হয়ে গেছে। তারপরও তাদের গুরুত্বসহকারে দেখা হয়।

কারও কারও ধারণা ভারত ও পাকিস্তানের যখন বেহালদশা তখন হকিতে বাংলাদেশ এগুবে কীভাবে? না, এই তুলনা একেবারে বেমানান। উন্নতি করতে হলে অন্যের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। কাজটা নিজেদেরই করতে হবে। আসছে বছরে ঢাকায় শুধু ওয়ার্ল্ড হকি লিগ নয় এশিয়া কাপও হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হয়তো ১৯৮৫ সালের মতো জোয়ার বইবে না, তারপরও এশিয়া কাপ বিশ্ব হকির সাড়া জাগানো টুর্নামেন্ট। হকি ফেডারেশন এই খেলার উন্নতির জন্য শুধু পরিকল্পনা নয়, তা বাস্তবায়ন করবে এটাই ক্রীড়ামোদীদের প্রত্যাশা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর