শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আবারও পুরনো চেহারায়!

বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আবারও পুরনো চেহারায়!

তামিম সাজঘরে ফিরে গেলেও নেলসনে কাল ইমরুল কায়েস চমৎকার ব্যাটিং করেন। ৭৯ বলে তিনি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রান তোলেন —এএফপি

ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ওয়ানডে হারের পর ফেসবুকে এক ক্রিকেটপ্রেমী লিখেছেন, ‘জেতা ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ!’ ৩৪২ রান তাড়া করে ২৬৪ রানে থেমে যাওয়ার পর এই আক্ষেপ। গতকাল স্যাক্সন ওভালে ২৫২ রানের টার্গেটে ৬৭ রানের হারে দুঃখ করে আরেকজন লিখেছেন-‘নিউজিল্যান্ড জিতলো। না, বাংলাদেশ হারলো?’ দুই দুটি স্ট্যাটাসই স্পষ্ট করেছে, ক্রিকেট এখন বাংলাদেশের প্রাণের খেলা, জীবনের স্পন্দন এবং স্বপ্ন। ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন আর প্রিয় দলের হার মেনে নিতে পারেন না। হারের পর ম্যাচের কাটাছেঁড়া করতে থাকেন আরেকটি জয়ের আগ পর্যন্ত। হ্যাগলি ওভাল ও স্যাকসন ওভালে হারের পর সিরিজ হাতছাড়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যন্ডের মাটিতে টানা নবম ম্যাচ হারলো টাইগাররা। আগামীকাল সিরিজের শেষ ওয়ানডে। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোই এখন একমাত্র টার্গেট মাশরাফিদের। সেটা কি পারবেন মাশরাফিরা? দুই দুটি ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যান, বোলাররা যে পারফরম্যান্স করেছেন, এখন স্বপ্ন দেখতে ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক। বিশেষ করে নেলসনে ব্যাটসম্যানরা যে তাড়না নিয়ে ব্যাটিং করেছেন, তাতে দেশের বাইরে বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা একটু বেশিই বৈকি! অহেতুক তাড়াহুড়া ও শটস খেলতে যেয়ে ৭৯ রানে (১০২/১-১৮৪/১০) শেষ ৯ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। এমন ম্যাচ হারের সত্যি কি কোনো ব্যাখ্যা আছে? কালকের ম্যাচ হারের পর পুরনো সেই বাক্যটি আবারও উঠে আসলো আলোচনায়-‘সেই পুরনো চেহারায় বাংলাদেশ!’

হারজিত থাকবেই খেলায়। একসময় বাংলাদেশ মাঠে নামতো হারবে জেনেই। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ, মাশরাফিরা এখন মাঠে নামেন জয়ের তাড়নায়। প্রতিপক্ষ জেনে নয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে খোলসে পুড়ে হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়েন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো সুপার পাওয়ারদের যেভাবে বাক্সবন্দী করে হেসে মাঠ ছেড়েছে, তাতে টাইগারদের পক্ষে বাজি ধরার লোকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে সিডনির ২ কোটি টাকার ক্যাম্প সেই স্বপ্নটাকে নীল আকাশ ছুঁয়েছিল। হ্যাগলি ওভালে সেই স্বপ্নটা প্রথম ধাক্কা খায় মাশরাফি, মুস্তাফিজ, তাসকিন আহমেদদের বোলিংয়ে। ওভার প্রতি প্রায় ৭ রানের ধাক্কায় খেলতে নেমে টাইগার ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস উঠেছিল স্বাগতিক বোলারদের শর্ট বোলিংয়ে। তারপরও স্বপ্নটা মিইয়ে যায়নি। নেলসন পরিচিত ভেন্যু বলে আটঘাট বেঁধে নামেন সবাই। শুরুতে বোলিং করে পরিচিত নিউজিল্যান্ডকে ২৫১ রানে বেঁধে ফেলেন মাশরাফিরা। দারুণ বোলিং করেন মাশরাফি। উইকেট নেন ৩টি। যে উইকেটের হরহামেশা ৩০০ রান তাড়া করে ম্যাচ জিতেছে দলগুলো, সেখানে ২৫২! হেসে খেলে যেতাই উচিত। ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমানের ৭৫ রানের জুটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভাঙার আগে স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছিল ১ উইকেটে ১০৫! তখন জয়ের স্বপ্নটা দিগন্ত ছাড়িয়ে যায়। সাব্বির বোকামি করে রান আউট হওয়ার পরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে টাইগারদের সব দৃঢ়তা। ১৪১ রান পৌঁছাতেই হারিয়ে ফেলে ৭ উইকেট। তখনই বুঝা হয়ে যায় মাশরাফিদের গন্তব্যস্থল। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান যেভাবে উইলিয়ামসনের স্পিনের ফাঁদে পড়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন, তাতে অবাক হতেই হয়। উইলিয়ামসন অকেশনাল স্পিনার। অথচ কাল তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেটে। মেহেদি হাসান মিরাজের মতো ম্যাচ উইনার থাকার পরও তাকে একাদশে কেন নেননি কোচ হাতুরাসিংহে, বিস্মিত করেছে সবাইকে। এছাড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকেও কেন বোলিং করানো হয়নি সেটাও বড় প্রশ্ন। এই মাহমুদুল্লাহই বিপিএলে দুটি ম্যাচে শেষ ওভারে বোলিং করে অবিশ্বাস্য জয় উপহার দিয়েছিলেন দলকে। মাহমুদুল্লাহ ম্যাচের সেরা বলে বোল্ড হয়েছেন। এছাড়া তামিম ইকবাল, মোসাদ্দেক সৈকত, তানভীর হায়দার, নুরুল হাসান সোহানরা যেভাবে উইকেট বিলিয়েছেন, তাতে নিউজিল্যান্ডে বাকি ম্যাচগুলো নিয়ে স্বপ্ন দেখা একটু বেশিই হবে!   জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করার ইতিহাস এই প্রথম নয় বাংলাদেশের। অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ১৭ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে জেতা ম্যাচ হেরেছিল টাইগাররা। তাতে হেরেছিল সিরিজও। টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ১ রানের হার আজীবন পোড়াবে বাংলাদেশকে। স্যাকসন ওভালের গতকালের ম্যাচটিও দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে স্বপ্নালু ক্রিকেটপ্রেমীদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর