শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মেয়েরাই এখন ফুটবলের প্রাণ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মেয়েরাই এখন ফুটবলের প্রাণ

চতুর্থ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল —ফাইল ফটো

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে স্বপ্নের শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবু প্রশংসিত হয়েছেন সাবিনারা। আগের তিন আসরে দুইবার সেমিফাইনাল খেলে। এবার প্রথম ফাইনাল খেলল বাংলার মেয়েরা। অথচ অনেকের সংশয় ছিল সাবিনারা সেমিফাইনালে উঠতে পারবে কিনা? কারণ গ্রুপে ছিল আফগানিস্তান ও ভারত। অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে। প্রথম ম্যাচে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত করে আফগানিস্তানকে। অধিনায়ক সাবিনা খাতুন হ্যাটট্রিকসহ পাঁচ গোল করেন। পরের ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারতের সঙ্গে ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

আগের তিন আসরে ফাইনাল খেলেছিল ভারত ও নেপাল। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটে। ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হয় বাংলাদেশ।  সেমিফাইনালে মালদ্বীপকে পাত্তাই দেয়নি। রীতিমতো ছেলেখেলা খেলেছে। সিফাত জাহান স্বপ্নার হ্যাটট্রিক, সাবিনার ২, নার্গিসের ১ গোলে মালেদের উড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে ভারত ৩-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয়।

তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ফাইনালে ছিল নিঃসন্দেহে ফেবারিট। কিন্তু বাংলাদেশ যে পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছিল তাতে প্রত্যাশা ছিল ইতিহাস বদলে দেওয়ার। তা আর হয়নি। ৩-১ গোলে জিতে ভারতই সাফের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ ছেড়েও কথা বলেনি। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিল। শুরুতে ডিফেন্ডারদের ভুলে পিছিয়ে গেলেও স্বপ্না সমতা ফেরানোয় প্রথমার্ধের ফল ছিল ১-১। প্রত্যাশা ছিল দ্বিতীয়ার্ধে জ্বলে উঠবেন সাবিনারা। আক্রমণ করে চাপেও রেখেছিল ভারতকে। কিন্তু সব আশা হতাশায় পরিণত করেন রেফারি। ৬০ মিনিটে নিজেদের ডি বক্সের ভিতর নার্গিস বৈধভাবে ভারতের বালাদেবিকে ট্রাকেল করলে ভুটানের রেফারি পেমা পেনাল্টির নির্দেশ দেন। এমন সিদ্ধান্তে গ্যালারির দর্শকরাও হতবাক হয়ে যান। কিন্তু কি আর করার আছে, ভুল হলেও রেফারির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। স্পট কিকে গোল খেয়েই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সাবিনারা। ভারত এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও একটি গোল করে টানা চতুর্থবার শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলে।

বিতর্কিত পেনাল্টি নিয়ে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, ‘ভারত অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কিন্তু এক পেনাল্টিই আমাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে। তানা হলে খেলার ফল অন্য রকম হতে পারতো। যাক রানার্সআপও কমপ্রাপ্তি নয়। পুরুষরা যেখানে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটা এখন তাদের স্বপ্নে পরিণত হয়েছে, সেখানে মেয়েরা শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও বিতর্কিত রেফারিংয়ে হেরেছে। মেয়েরা ফুটবলে যে এগিয়ে যাচ্ছে তা প্রমাণও মিলছে বার বার। ২০১৫ সালে এএফসি আঞ্চলিক অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে বাংলাদেশের কিশোরীরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গত বছর ঢাকায় এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে চূড়ান্তপর্ব অনুষ্ঠিত হবে।

ফুটবলে পুরুষদের সঙ্গে মেয়েদের তুলনা করা ঠিক হবে না। কিন্তু জাতীয় দলের ব্যর্থতা দেশবাসীকে হতবাক করে দিচ্ছে। সেখানে মেয়েরাই আশার আলো জাগিয়ে রেখেছে। পুরুষ ফুটবলে তো বিদেশ থেকে ঘন ঘন কোচ আনা হচ্ছে। লাভ হচ্ছে না। পারফরম্যান্সের কোনো উন্নতি ঘটছে না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়েরা যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। দেশি কোচকে খাটো করা হচ্ছে না। কেননা ছোটনই মেয়েদের তৈরি করছেন। তবে উন্নতমানের কোচ ও বাইরে যদি বেশি করে ম্যাচ খেলা সেই সঙ্গে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে সাফ কেন আরও বড় ধরনের ট্রফি জেতাটা অসম্ভবের কিছু হবে না। সময়টা এখন মেয়েদের, মেয়েরাই এখন দেশের ফুটবলের প্রাণ তা বাফুফেকে কাজে লাগাতে হবে। যে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে নীরব থাকলে বেশি দূর এগুনো যাবে না।

সর্বশেষ খবর