শিরোনাম
শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিদ্দিকুরকে ছাপিয়ে সজীব-দুলাল

মেজবাহ্-উল-হক

সিদ্দিকুরকে ছাপিয়ে সজীব-দুলাল

বাংলাদেশের গলফ মানেই সিদ্দিকুর রহমান! আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একের পর এক সাফল্য দেখিয়ে বাংলাদেশের গলফকে যেন একাই ব্র্যান্ডিং করেছেন এই গলফার। সোনার ছেলে সিদ্দিকুর রহমান ২০১০ সালে ব্রুনাই ওপেন জিতে হৈচৈ ফেলে দেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো গলফার জেতেন এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা।

আজকের দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যে সাফল্য তার ভিত্তি যেমন ১৯৯৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়; তেমনি সিদ্দিকুরের ব্রুনাই ওপেন জয় গলফ দুনিয়ায় বাংলাদেশকে নতুনভাবে উপস্থাপন করে।

বছর তিনেক পর এশিয়ান ট্যুরের দ্বিতীয় শিরোপা জেতেন সিদ্দিকুর রহমান। ২০১৩ সালে ভারতের দিল্লিতে হিরো-ইন্ডিয়ান ওপেন জয়ের পর আবারও আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দৃঢ় মানসিকতার সিদ্দিকুর বিশ্বের সেরা সেরা গলফারকে পেছনে ফেলে এশিয়ান ট্যুরের অর্ডার অব মেরিটে তৃতীয় স্থানে উঠে আসেন।

এরপর গলফ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন দেশের সেরা এই গলফার। ২০১৬ সালে একটুর জন্য ইউরোপিয়ান ট্যুরের শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যায়। তারপর মরিশাস ওপেনে রানার-আপ হয়ে দেশের জন্য অনন্য গৌরব বয়ে আনেন। অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান সিদ্দিকুর। প্রথম বাংলাদেশি অ্যাথলেট হিসেবে সরাসরি ব্রাজিল অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি।

বাংলাদেশের গলফ বলতে শুধুই সিদ্দিকুরময়! কিন্তু ঘরের কোর্সে এই সিদ্দিকুর সেরা নন! তাকে ছাপিয়ে গেছেন সজীব আলী ও দুলাল হোসেন নামে দুই স্থানীয় গলফার।

বাংলাদেশের স্থানীয় গলফ টুর্নামেন্টে আয়ের ওপর ভিত্তি করে ‘বাংলাদেশ প্রফেশনাল গলফার’স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএ)’ যে ‘অর্ডার অব মেরিট’ করেছে সেখানে সিদ্দিকুরের অবস্থান তিন নম্বরে। তবে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে মোট নয়টি গলফ টুর্নামেন্ট হয়েছে, তার মধ্যে সিদ্দিকুর অংশ নিয়েছেন মাত্র দুটিতে।

২০১৬ সালে বাংলাদেশের টুর্নামেন্ট থেকে সর্বোচ্চ ৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫০ টাকা উপার্জন করে সবার ওপরে রয়েছেন সজীব আলী। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুলাল হোসেনের আয় ৮ লাখ ৬৮ হাজার ১৫০ টাকা। বাংলাদেশের দুই টুর্নামেন্ট থেকে সিদ্দিকুরের আয় ৬ লাখ ৮০ হাজার। তবে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলে সিদ্দিকুর আয় করেন মোট ১ কোটি ৫২ লাখ ৩১ হাজার ১২০ টাকা (এশিয়ান ট্যুর অনুসারে ১,৯০৩৮৯ ডলার)। মোট আয় হিসাব করলে সিদ্দিকুরের সঙ্গে তুলনাই চলে না বাংলাদেশের অন্য গলফারদের। স্থানীয় টুর্নামেন্টের ভিত্তিতে মেরিট অব অর্ডারে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন মোহাম্মদ নাজীম। তার আয় ৫ লাখ ৫১ হাজার ১০০ টাকা। পঞ্চম স্থানে থাকা জামাল হোসেন মোল্লা আয় করেছেন ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২০০ টাকা। ষষ্ঠ স্থানে থাকা বাদল হোসেন পেয়েছেন ৪ লাখ ২০ হাজার ২৫৪ টাকা। দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের দুই আসরের বাংলাদেশের সেরা গলফার সাখাওয়াত হোসেন সোহেল রয়েছেন সপ্তম স্থানে। তার আয় ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩৩ টাকা। এ ছাড়া অষ্টম স্থানে রয়েছেন জাকিরুজ্জামান জাকির ও লিটন হায়দার। বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের গত আসরে চমক দেখানো গলফার আবদুল মতিন রয়েছেন দশম স্থানে।

সজীব আলী ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নয়টি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে একটি শিরোপা জেতেন। হোসাফ ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তিনটি টুর্নামেন্টে রানার-আপ হয়েছেন। একটি টুর্নামেন্টে তৃতীয় ও দুটি করে টুর্নামেন্টে পঞ্চম ও ষষ্ঠ হয়েছেন।

দেশসেরা গলফার সিদ্দিকুরকে ছাড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সজীব বলেন, ‘এটা আমার কাছে খুবই ভালো লাগার বিষয়। আমাকে ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করবে। তবে এটা ঠিক যে, পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে সিদ্দিকুর ভাই-ই সেরা।’

অর্ডার অব মেরিটে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও গত বছর সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতেছেন দুলাল হোসেন। তিনি নয়টি টুর্নামেন্টের মধ্যে চারটিতেই হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। বছরের দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট রানার নিটল ওপেনের চ্যাম্পিয়ন। পরের টুর্নামেন্ট বিপিজিএ ওপেনেও সেরা হন দুলাল। এ ছাড়া ষষ্ঠ সামিত ওপেন ও সপ্তম সামিত বিপিজিএ ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া রানার-আপ হয়েছেন ইউসিবিএল প্রফেশনাল গলফ টুর্নামেন্টে।

সিদ্দিকুরকে ছাপিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে দুলালের ভাষ্য, ‘এটা আমার জন্য বড় পাওয়া। যদিও সিদ্দিকুর ভাই গত বছর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বেশি খেলতে পারেননি। তার পরও তাকে টপকে বাংলাদেশের র্যাংকিং দ্বিতীয় স্থানে থাকতে পারা আমার জন্য অনেক বড় ঘটনা। এটা আমাকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করতে তুলছে।’

কয়েক দিন পরই দেশের মাটিতে হতে যাচ্ছে বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন। ১ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় এ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন দুলাল, ‘আমার বিশ্বাস আছে, এবারের এশিয়ান ট্যুরে আমি অনেক ভালো করব।’

সিদ্দিকুর স্থানীয় নয়টি টুর্নামেন্টের মধ্যে মাত্র দুটিতে অংশ নেন। তার মধ্যে বিটিআই ওপেনে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার নিটল ওপেনে হয়েছেন তৃতীয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে দেশের মাটিতে অন্য টুর্নামেন্টগুলো খেলতে পারেননি তিনি। এই অর্ডার অব মেরিট সম্পর্কে বিপিজিএ’র সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জি এম কামরুল ইসলাম (অব.) বলেন, ‘আসলে পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে সিদ্দিকুরই আমাদের এখনো এক নম্বর গলফার। কিন্তু তিনি এবার স্থানীয় বেশি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। যে কারণে স্থানীয় টুর্নামেন্টে তার আয়ও কম হয়েছে। তাই আয়ের দিক দিয়ে তিনি ৩ নম্বরে নেমে গেছেন।’

সর্বশেষ খবর