সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

গলফারে মুখরিত কুর্মিটোলা

বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেন ২০১৭

মেজবাহ্-উল-হক

গলফারে মুখরিত কুর্মিটোলা

বেলা ১২টা। কুর্মিটোলা গলফ কোর্সের ফ্রন্ট-নাইন হোলে নিবিড়ভাবে পাটিং করছেন চিরাগ কুমার। পাশেই আরেক কোলিন জোসি। সাংবাদিকদের দেখে ভারতীয় দুই তারকা গলফারের যেন মনোসংযোগ ঘটল। ঘুরে তাকালেন চিরাগ কুমার! মুখে ট্রেডমার্ক হাসি। বাংলা জানেন? এমন প্রশ্নে বাংলাতেই বললেন, না! হিন্দি? রসিকতার সুরে এমন প্রশ্ন শুনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কোলিন জোসিও হাসলেন! চেরাগ ইংলিশে বললেন, ‘আমাকে ইংলিশ অথবা হিন্দিতে প্রশ্ন করতে পারেন? আমি পাঞ্জাবিও জানি।’ তারপর নিজের মুগ্ধতার কথা জানালেন চিরাগ।

কোলিন জোসির কণ্ঠে কিছুটা আক্ষেপ ঝরল, ‘একটুর জন্য ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। শেষ দিকে এসে কী যে হয়েছিল। গোলমাল পেকে গেল।’ বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের প্রথম আসরে পারের চেয়ে ১২ শট কম খেলে রানার আপ হয়েছিলেন তিনি। ১৪ শট কম খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সিঙ্গাপুরের মারদান মামত।

 চিরাগের আক্ষেপ নেই। বরং বাংলাদেশে এসে তিনি দারুণ উপভোগ করছেন। এখানকার কোর্সও তার মনে ধরেছে, ‘এখানকার কোর্স দারুণ। আমার ভালো লেগেছে।’ টার্গেট কি শিরোপা? ‘সবাই তো শিরোপার জন্যই খেলে। আমার চেষ্টা থাকবে যাতে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে পারি।’

ফ্রন্ট-নাইনের ২নং হোলে গিয়ে দেখা হয় চীনের তরুণ গলফার অউ ইয়াং জেংয়ের সঙ্গে। লাজুক ছেলে। মিডিয়াকর্মীদের দেখে তার ভিতর কেমন যেন জড়তা কাজ করছিল। তাই কিনা পাটিংয়ে খুব কাছে থেকেও বল হোলে ফেলতে পারলেন না। ইয়াং বাংলাদেশে এসেছেন শিরোপার জন্য নয়, তার অভিজ্ঞতার ঝুলিটা বড় করতে। বললেন, ‘আমি এর আগে কখনো এশিয়ান ট্যুরের টুর্নামেন্টে অংশ নেইনি। এটাই প্রথম। তবে বাংলাদেশে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। এখানকার কন্ডিশনটা আমার সঙ্গে মনে হয় মানিয়ে গেছে। আমার লক্ষ্য থাকবে যতটা সম্ভব উপভোগ করার।’ বিদেশি গলফাররা যখন ফ্রন্ট-নাইনে প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত তখন ব্যাক-নাইন হোলে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছিলেন বাংলাদেশের গলফাররা। কেউ বা ড্রাইভিং রেঞ্জে এক নাগারে সুইং করে চলেছেন।

দেখা হতেই তারকা গলফার জামাল হোসেন মোল্লা বললেন, ‘দোয়া করবেন, আগের আসরে খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েও শিরোপা জিততে পারিনি। যদিও সপ্তম স্থানে থেকে শেষ করেছি। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামর্থ্য আমার ছিল। কিন্তু কেন যেন পাটিং ভালো হয়নি। সে কারণে এবার গত একমাস সাভার গলফ কোর্সে পাটিং করেছি। এখন আমি আত্মবিশ্বাসী।’

গলফে শিরোপা জিততে নাকি ৮০ ভাগ কৌশলের সঙ্গে ২০ ভাগ ভাগ্যের ছোঁয়া লাগে! সে কারণেই জামালের কণ্ঠে অন্য সুরও শোনা গেল, ‘আমার একটাই চাওয়া, যদি এবার আমি শিরোপা জিততে নাও পারি যেন বাংলাদেশের কোনো গলফারই এবারের শিরোপা জেতেন। আগের দুই আসরে আমরা পারিনি। এবার কিছু একটা করে দেখানোর সময় এসেছে।’

দুলালের কণ্ঠেও জোরালো আত্মবিশ্বাস, ‘আমার প্রস্তুতি অনেক ভালো। সুইং, পাটিংও ভালো হচ্ছে। মনে হয় ভালো কিছুই হবে। এখন দেখা যাক, আমি কতটা ভালো করতে পারি। তবে এবারের আসর নিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি।’ প্রথম দুই আসরে স্থানীয়দের মধ্যে ভালো করেছেন সাখাওয়াত হোসেন সোহেল। ২০১৫ সালে ১৯তম, ২০১৬ সালে ষষ্ঠ হয়েছেন। চাপকে জয় করতে পেরেছিলেন বলেই ভালো করেছেন। তবে এবার তিনি আরও ভালো করতে চান। চ্যাম্পিয়ন হওয়াই তার লক্ষ্য, ‘আমার প্রস্তুতি ভালো। কিছুদিন আগেই আমি থাইল্যান্ডে এশিয়ান ট্যুরের কোয়ালিফাইং স্কুলে ভালো করে এসেছি। তাই আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। আমার লক্ষ্য কেবল শিরোপার দিকে। যদি নিজের সেরাটা দিতে পারি আশা করছি আমার স্বপ্ন পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।’

স্থানীয় গলফারদের মধ্যে সেরা দশে রয়েছেন লিটন হাওলাদার। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্তত ১০-১২ গলফার রয়েছেন, যাদের শিরোপা জয়ের সামর্থ্য আছে। আমি নিজেকে তাদের মধ্যেই একজন বলে দাবি করি। ভাগ্য যদি সহায় থাকে শিরোপা আমিও জিততে পারি।’ ২০১৫ বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন গলফার দিল মোহাম্মদ। যেখানে পেশাদার গলফারও নাকাল সেখানে অ্যামেচার গলফার হয়ে ‘কাট’ পেয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ওই আসরে সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে যৌথভাবে ৩৮তম হয়েছিলেন। সেই দিল মোহাম্মদ এখন পেশাদার গলফার। তিনিও স্বপ্ন দেখছেন, ‘আমার চেষ্টা থাকবে নিজের সেরাটা খেলার। আর সেরাটা খেলতে পারলে অনেক কিছুই সম্ভব।’ এবারের আসরে শিরোপার অন্যতম দাবিদার সজীব আলী ও মোহাম্মদ নাজিম। তাদের চোখে-মুখেও শিরোপার স্বপ্ন। গতকাল দেখা গেল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরে নিতে ব্যস্ত তারা। দুপুরের দিকে কিছুটা ফাঁকা মনে হলেও বিকালে দেখা গেল কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে রীতিমতো গলফারদের মিলনমেলা। বিদেশি গলফারদের অধিকাংশই চলে এসেছেন। বাকিরা আজকের মধ্যেই হয়তো চলে আসবেন। কাল বাদে পরশুই যে শুরু হচ্ছে মাঠের লড়াই! 

সর্বশেষ খবর