রানগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের উইকেট হচ্ছে ব্যাটিং স্বর্গ! যেখানে প্রথম ম্যাচে রাজত্ব করেছেন দুই বন্ধু তামিম-সাকিব! কিন্তু ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ যতটা ভালো করেছিল ততটা প্রত্যাশা ছিল না খোদ টাইগার দলপতির। মাশরাফির আশা ছিল, ২৮০ কিংবা ২৯০ রান হবে! আর সেখানে কিনা হয়ে যায় ৩২৪ রান। এমন একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের বোলাররাও ছড়ি ঘুরিয়েছেন!
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ড কি চাইবে, এ ম্যাচেও রাজত্ব করুক তামিম-সাকিবরা? মোটেও না। নিশ্চয়ই আজকের উইকেট ভিন্ন রকম হবে! কারণ এই ম্যাচটি তাদের জন্য ‘ডু অর ডাই’। হারলেই সিরিজ হাতছাড়া। তাই হয়তো ডাম্বুলায় আজ সবুজ ঘাসের উইকেট বানিয়ে টাইগারদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করবে লঙ্কাররা! তাদের পরিকল্পনা থেকেও কিছুটা আঁচ করা যায়।
হঠাৎ দুই পেসারকে দলে নেওয়া প্রসঙ্গে গুরুসিনহা বলেন, ‘উইকেটে ঘাস দেখে মনে হয়েছে একাদশে অতিরিক্ত একজন পেসার নেওয়া দরকার। তাই কুলাসেকারা ও প্রদীপকে নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া লাকমলের ফিটনেস নিয়েও সংশয় আছে।’
ম্যাচের দিন উইকেট কেমন হবে— তা সফরকারী দলের পক্ষে আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়! তাই মাশরাফি সব রকম প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছেন। টাইগার দলপতি বিশ্বাস করেন, কিছুটা ঘাস থাকলেও উইকেট ব্যাটিং সহায়কই হবে। তাই এই ম্যাচেও ব্যাটসম্যানদের দিকেই তাকিয়ে থাকবেন তিনি। ব্যাটসম্যানরা রান বেশি করলে যে কোনো ম্যাচেই জয় পাওয়া সহজ হয়ে যায়। প্রথম ম্যাচটাই তার বড় উদাহরণ!
বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আগে ভাবনা ছিল এমন— ৫০ কিংবা ৬০ রানই অনেক বড় স্কোর! কিন্তু এখন সেই ধারণা পাল্টে গেছে। যে ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরি করেন তার ওপর দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। কেননা হাফ সেঞ্চুরি করার পর একজন ব্যাটসম্যান যত সহজে পরের ৫০ রান করতে পারবেন, সেটা সম্ভব নয় নতুন করে উইকেটে নামা নতুন কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষে। নতুন ব্যাটসম্যানকে উইকেটে গিয়ে সেট হতেই অনেক সময় লাগে।
আগের ম্যাচে তামিম ইকবালের ১২৭ ইনিংস থেকেই বোঝা যায়— ড্যাসিং ওপেনার কতটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন! ওই ইনিংসটাই বাংলাদেশের স্কোরকে বড় করেছে। তামিম একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং করার কারণে শেষ দিকে ঝড়ো গতিতে রান করতে পেরেছেন সাকিব। তবে হাফ সেঞ্চুরি করার পর সাব্বির রহমানের আউট হওয়াটা দলের জন্য ছিল বিপজ্জনক!
মিডিয়াকে মাশরাফি বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের উচিত কিভাবে ৫০-৬০ রানের স্কোরকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করা। সেই দলটি বড় দল, যে দলের ব্যাটসম্যানরা এই কাজটি করতে পারেন! আগের ম্যাচে সাব্বির সেঞ্চুরি মিস করেছে কিন্তু তামিম ঠিকই দারুণ একটা সেঞ্চুরি আদায় করে নিয়েছে। যে ইনিংসটি ম্যাচ জয়ে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এই কাজটিই করতে হবে আমাদের ব্যাটসম্যানদের। ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। ফিনিশিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়— যা বড় স্কোর করতে সহযোগিতা করে।’
শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ সব শেষ টেস্ট ম্যাচে জিতেছে। তারপর প্রথম ওয়ানডেতেও স্বাগতিকদের উড়িয়ে দিয়েছে। লঙ্কানদের মাটিতে ভালো করার পেছনে নিউজিল্যান্ড সফরের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে টাইগার দলপতি। যদিও নিউজিল্যান্ডে কোনো ম্যাচেই জয় পায়নি বাংলাদেশ। মাশরাফি বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে আমাদের উন্নতিটা হচ্ছে ধীরে ধীরে। যেমন নিউজিল্যান্ড সফরটা আমাদের জন্য খুবই কঠিন ছিল। তবে ওই সফরের অভিজ্ঞতাই শ্রীলঙ্কায় কাজে লাগছে।’
আজ জিতলেই ইতিহাস গড়ে ফেলবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম সিরিজ— তাই বাড়তি সতর্ক মাশরাফি। যদি সত্যি সত্যি পেসারদের উইকেট বানায় লঙ্কানরা, সেজন্যও আলাদা পরিকল্পনা আছে তার। মাশরাফি বলেন, ‘আমার মনে হয়, উইকেট ব্যাটিং সহায়কই হবে। তবে উপমহাদেশের উইকেট পেস সহায়ক করতে গেলে পিচে অনেক বেশি ঘাস রাখতে হয়। উইকেট কেমন সেটা আগামীকালই (আজ) বোঝা যাবে।’
সকালে উইকেট দেখেই একাদশ সাজাবেন মাশরাফি। তাই প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও আজকের ম্যাচে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। মাশরাফি বলেন, ‘অনেকবার আমরা উইনিং কম্বিনেশন ভেঙেছি। ২০১৫ সালেও উইনিং কম্বিনেশন ভেঙেছিলাম। তাই উইকেট দেখেই সিদ্ধান্ত নেব।’