শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

যে রেকর্ড শুধুই ব্রাজিলের

রাশেদুর রহমান

যে রেকর্ড শুধুই ব্রাজিলের

ফুটবল দুনিয়ায় ব্রাজিলের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। চারদিকে এই যে ফুটবলের জয়গান। এর অনেকটাই ব্রাজিলের জন্য। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের জন্য। এক সময় ব্রাজিলের ‘পঞ্চপাণ্ডব’ ফুটবল দুনিয়া শাসন করত। সে সময় পেলে-গারিঞ্চারা কী দুরন্ত ফুটবলই না খেলেছেন। এরপরও জিকো, সক্রেটিসদের মতো ফুটবলাররা ব্রাজিলে খেলেছেন। যুগে যুগে কেউ না কেউ ঠিকই ব্রাজিলের ফুটবলকে সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে গেছেন। রোনাল্ডো, রোনালদিনহোরা তো নতুন শতাব্দীর শুরুতে ব্রাজিলের সেই পুরনো রূপ তুলে ধরেছেন। আর নেইমারের মধ্যে ব্রাজিলিয়ানরা খুঁজে পাচ্ছে হারানো অতীতকেই।

ব্রাজিল কেবল শৈল্পিক ফুটবলই খেলে না। জয় করেছে ফুটবলের প্রায় সব শিরোপাই। বিশ্বকাপে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের দারুণ একটা রেকর্ড আছে। যা অন্য কেউ কখনো স্পর্শও করতে পারবে না! ফিফার আয়োজিত গত বিশটি বিশ্বকাপেই অংশ নেওয়া একমাত্র দল ব্রাজিল। এমনকি একুশতম বিশ্বকাপেও স্থান নিশ্চিত করে নিয়েছে সিলেকাওরা। গত বিশটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে তারা মোট ১০৪টি ম্যাচ খেলে ৭০টিতে জয় পেয়েছে। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ জয়ও ব্রাজিলেরই। বাকি ৩৪টি ম্যাচের মধ্যে ১৭টিতে হেরেছে। ড্র করেছে ১৭টিতে। ব্রাজিল চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করেছে ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে। ব্রাজিলের পরই অবস্থান করছে জার্মানি ও ইতালি। দুই দলই চারটি করে বিশ্বকাপ জয় করেছে। জার্মানি বিশ্বকাপ জিতেছে ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে। ইতালি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলেছে ১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৮২ ও ২০০৬ সালে। একটা জায়গায় অবশ্য জার্মানি সবার চেয়ে এগিয়ে আছে। তারাই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে (১০৬টি)। অবশ্য জয়ের দিক থেকে এখনো ব্রাজিলের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছে জার্মানরা। ১০৬ ম্যাচের মধ্যে ৬৬টি জিতেছে তারা। হেরেছে ২০টিতে। ড্র করেছে ২০টি। ইতালি অবশ্য এই তালিকায় বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছে। তারা ১৮টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে মাত্র ৮৩টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে জয়ের সংখ্যা ৪৫টি। ব্রাজিল, জার্মানি ও ইতালির পরই অবস্থান করছে আর্জেন্টিনা। তারা ১৬টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে (১৯৭৮ ও ১৯৮৬)। এর মধ্যে ৭৭ ম্যাচ খেলে ৪২টি জয় পেয়েছে আলবেসিলেস্তরা। হেরেছে ২১টিতে। ড্র করেছে ১৪টিতে। বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলগুলোর মধ্যে এরপরই আছে স্পেন। লা রোজা ফুরিয়ারা ১৪টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৫৯টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ২৯টি ম্যাচ জয় করেছে। হেরেছে ১৮টিতে। ড্র করেছে ১২টিতে। স্প্যানিশরা ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এরপরই অবস্থান করছে ১৯৬৬ সালের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। তারা ১৪টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ৬২ ম্যাচ খেলে জিতেছে ২৬টি। হেরেছে ১৬টি। ড্র করেছে ২০টি। ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ১৪টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ৫৯ ম্যাচ খেলে ২৮টিতে জয় পেয়েছে। ১৯টি ম্যাচে হেরেছে। ড্র করেছে ১২টিতে। উরুগুয়ে দুইবার চ্যাম্পিয়ন হলেও (১৯৩০ ও ১৯৫০) চ্যাম্পিয়ন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম বিশ্বকাপ খেলেছে (১২টি)। এর মধ্যে তারা ৫১ ম্যাচ খেলে ২০টিতে জয় পেয়েছে। ১৯টিতে হেরেছে। ড্র করেছে ১২টিতে। বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরাজয় আর্জেন্টিনারই। তারা মোট ২১টি ম্যাচ হেরেছে বিশ্বকাপে।

আরও একটি বিশ্বকাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে রাশিয়া। এরই মধ্যে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পাড়ি দিয়েছে ব্রাজিল। তবে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার জন্য চূড়ান্তপর্ব নিশ্চিত করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। ১৯৭০ সালের পর আর কখনোই বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েনি আলবেসিলেস্তরা। বিশ্বকাপ থেকে এবার বাদ পড়তে পারে নেদারল্যান্ডসও। বাছাইপর্বে তাদের অবস্থান অনেকটা নিচের দিকে। বিশ্বকাপে একমাত্র তারাই তিনবার ফাইনাল খেলেও কোনো শিরোপা জিততে পারেনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে এবার ব্রাজিল যাবে ফেবারিটের তকমা নিয়ে। এরই মধ্যে তারা ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছে। দলটার প্রাণবন্ত ফুটবল মনে করিয়ে দিচ্ছে পুরনো ব্রাজিলকে। নেইমারের নেতৃত্বে এবার দারুণ কিছুই হয়তো করে দেখাবে সিলেকাওরা। তবে বিশ্বকাপে ফেবারিটের তকমা নিয়ে খেলতে যাবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানিও। তারা এরই মধ্যে বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্বের পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

সর্বশেষ খবর