শিরোনাম
সোমবার, ৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

এত গোল তবু হতাশা

জাতীয় হকি প্রতিযোগিতা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এত গোল তবু হতাশা

‘হকিতে এক সেকেন্ডেরও নেই ভরসা। পিছিয়ে থাকা দল সেকেন্ডেই ২ গোল করে জিতে যেতে পারে। এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এবার জাতীয় প্রতিযোগিতায় যা ঘটছে তাকে কি স্বাভাবিক ঘটনা বলা যায়।’ গোলের পর গোল, যা নোট করতে অ্যাম্পায়ারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। নৌবাহিনী তিন ম্যাচে ১০১ ও সেনাবাহিনী ৯০ গোল করেছে। গোল আর হ্যাটট্রিকের ছড়াছড়ি! তাহলে কি হকি মানের উন্নয়ন ঘটেছে। কিছুদিন আগে ঢাকায় ওয়ার্ল্ড হকি লিগের রাউন্ড টু আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যাশা ছিল স্বাগতিক দল হিসেবে জিমি-চয়নরা ফাইনাল খেলবেন। কিন্তু সেমিফাইনালই যেতে পারেনি। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা পারফরম্যান্স তুলে ধরতে না পারায় দলের বিপর্যয় ঘটেছে।

আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে গোল দিতে ব্যর্থ। কিন্তু জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রায় একই খেলোয়াড়রা গোল পাচ্ছেন। তাহলে কি অল্পদিনের মধ্যে তারা নিজেদের ভুল-ত্রুটি শোধরাতে পেরেছেন? জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ দেশের হকির সবচেয়ে মর্যাদাকর আসর। এখানে পারফরম্যান্স শো করা মানে হকির জন্য সুসংবাদ। এত গোলের ছড়াছড়ি তাহলে কি হকির জন্য কোনো সুখবরের আভাস দিচ্ছে। নৌবাহিনী ৩ খেলায় ১০১ গোল করেছে যা শুধু দেশ নয়, বিশ্ব হকির নতুন রেকর্ডই বলা যায়। সেনাবাহিনী বা কম কিসের? ৯০ গোল করেছে। এখনও টুর্নামেন্ট চলছে। শেষ পর্যন্ত দুই দলের গোল সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার বিষয়। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বড় দলগুলোর এমন পারফরম্যান্স দেশের হকির কোনো শুভ বার্তা বয়ে আনছে কি? বিশেষ করে সামনে অক্টোবরে ঢাকায় এশিয়া কাপ। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোই এ আসরে অংশ নেবে। এর প্রভাব কি সেখানে পড়বে? এ নিয়ে গতকাল জাতীয় দলের সাবেক দুই নির্ভরযোগ্য তারকা মুসা মিঞা ও আবদুল্লাহ পিরুর প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয়। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন মুসা। তিনি বলেন, ‘গোল করাটা অবশ্যই কৃতিত্বের ব্যাপার। হ্যাটট্রিকও গৌরবের। তারপরও আমি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে গোলের ছড়াছড়ি দেখে খুশি হতে পারছি না। আগে আপনাকে দেখতে হবে কোন মানের দলের বিপক্ষে এই গোল উৎসব। আলোচনাতো নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীকে নিয়েই। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে তারা শক্তিশালী দল গড়েছে। কিন্তু যাদের গোল বন্যায় ভাসিয়েছে তাদের শক্তি কেমন? দেখেন প্রতিপক্ষ যদি একেবারে দুর্বল হয় সেখানে কি বড় জয়ে তৃপ্তি পাওয়া যাবে? দুই বছর পর জাতীয় হকি মাঠে গড়িয়েছে এজন্য ফেডারেশন ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু এবার এমনো দল জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলছে তাদেরকে পাড়ার দলের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। মুসা বলেন, ম্যাচ যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হয় তাহলে কি মানের বিচার করা যায়। বড় তারকা নিয়ে বড় দল প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ম্যাচে জয় পাচ্ছে বা গোল উৎসব করছে। এরা যখন আবার শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলবে তখনতো সেই গতি পাবে না। সুতরাং ১০১ বা ৯০ যতই গোল হোক না কেন এটা জাতীয় দলের কোনো উপকারে আসবে না বরং চাপ আরও বাড়বে।’

জাতীয় দলের আরেক জনপ্রিয় খেলোয়াড় পিরু বলেন, ‘জাতীয় প্রতিযোগিতা মাঠে গড়িয়েছে এতে আমি খুশি। কিন্তু প্রতিযোগিতার যাচাই-বাছাই করে দলের সংখ্যা ঠিক করা উচিত ছিল। বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য দলের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ কি বলেন? আলোচনায় এসেছে গোলের ছড়াছড়ি। কিন্তু তারকানির্ভর দল কাদের বিপক্ষে সেই উৎসব করছে সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত। কোনোমতে হাতে স্টিক ধরছে এমন দলও খেলছে। এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ম্যাচে যতই গোল হোক না কেন এতে হকির উন্নয়নে কাজে আসবে কি? বরং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে আরও বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সুতরাং ন্যাশনালশিপ যেন হাস্যকর আসরে পরিণত না হয় সেদিকে ভবিষ্যতে ফেডারেশনকে গুরুত্ব দিতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর