শনিবার, ২০ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

টাইব্রেকারে শেখ জামালের জয়

শেখ জামাল ৪ (০) ১ (০) শেখ রাসেল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

টাইব্রেকারে শেখ জামালের জয়

শেখ রাসেল ও শেখ জামাল ফুটবলারদের বল দখলের লড়াই —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাংলাদেশের ফুটবলে দুই জনপ্রিয় দল আবাহনী ও মোহামেডান। সত্তর, আশি ও নব্বই দশক দেশের ফুটবল বলতেই ছিল দুই দলের আধিপত্য। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিবেচনায় দুই দলের ধারে-কাছে ছিল না অন্য কোনো ক্লাব। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই দলের লড়াই এখন রূপ নিয়েছে সে াতহীন নদীতে। আবাহনী-মোহামেডান ডার্বিকে ছাড়িয়ে এখন জায়গা নিয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। বসুন্ধরা গ্রুপ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের ফুটবলে জোয়ার এনেছে দুই ক্লাব। এখন দেশের ফুটবলের দুই পরাশক্তি শেখ রাসেল ও শেখ জামাল। পার্শ্ববর্তী কলকাতায় যেমন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ডার্বি, ইংল্যান্ডে ম্যানচেস্টার ডার্বি, স্পেনে মাদ্রিদ ডার্বি, তেমনি ঢাকার ফুটবলে এখন আলোচিত ‘ডার্বি’ শেখ রাসেল-শেখ জামাল ম্যাচ। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল দেশের ফুটবলের দুই জায়ান্ট। ফেডারেশন কাপের ‘বি’ গ্রুপে শীর্ষস্থান পেতে মর্যাদার লড়াইয়ে নেমেছিল দুই দল। দুই ফুটবল পরাশক্তির ম্যাচটি নির্ধারিত ৯০ মিনিট গোলশূন্য শেষ হয়। ফলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণে বাইলজের ১৬.৩ ধারা অনুযায়ী টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচটি। পেনাল্টি শুট আউটে শেখ জামাল ৪-১ গোলে শেখ রাসেলকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়। শেখ জামালের পক্ষে টাইব্রেকারে গোল করেন নাইজেরিয়ার রাফায়েল, আলাউদ্দিন, জাহেদ পারভেজ ও গাম্বিয়ার মোমোদো বাহ। শেখ রাসেলের একমাত্র গোলটি করেন অরূপ কুমার। মিস করেন এলিটা বেঞ্জামিন ও খালেকুর জামান। ২৪ মে প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে শেখ জামালের প্রতিপক্ষ গ্রুপ ‘সি’ রানার্সআপ মোহামেডান এবং ২৫ মে আরেক কোয়ার্টার ফাইনালে শেখ রাসেলের প্রতিপক্ষ ‘সি’-এর চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনী।

পুরান ঢাকার দল ফরাশগঞ্জকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছে দুই দল। পুরান ঢাকার দলটির বিপক্ষে দুই দলের জয়ের ব্যবধান ৩-০। তাই গতকাল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইটি ছিল মর্যাদার, ছিল ইতিহাস রচনারও। দুই দলের পয়েন্ট ও গোল পার্থক্য সমান হওয়ায় ম্যাচটির দিকে নজর ছিল ফুটবলপ্রেমীদের। নির্ধারিত ৯০ মিনিট যদি খেলা ড্র হয়, তাহলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন নির্ধারিত হবে বাইলজের ১৬.৩ ধারা অনুযায়ী টাইব্রেকারে। তাই বাড়তি নজর ছিল ম্যাচটি ঘিরে। এমন সমীকরণের ম্যাচে দুই দল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে। বিশেষ করে শেখ রাসেল ছিল অনেক গতিশীল এবং গোছানো। ৩৪ মিনিটে একটি গোছানো আক্রমণ থেকে সুযোগ সৃষ্টি করে শেখ রাসেল। মধ্যমাঠ থেকে ফজলে রাব্বির বাড়ানো বল ধরে দলের গাম্বিয়ান স্ট্রাইকার দাওদা সিসে ইনসাইড-আউট সাইড ডজে প্রতিপক্ষের রক্ষণব্যূহে ঢুকে বাঁ পায়ে মাটি কামড়ানো শট নেন। কিন্তু বলটি পরাস্ত করতে পারেনি শেখ জামালের গোলরক্ষক সামিউল ইসলামকে। প্রথমার্ধেই উল্লেখ করার মতো ওই একটি আক্রমণ ছিল। অবশ্য ৪২ মিনিটে আরও একবার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল শেখ রাসেল। ডি বক্সের মাথা থেকে নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার এলিটা বেঞ্জামিন ডান পায়ে শট নেন। কিন্তু শেখ জামালের গোলরক্ষককে পরাস্ত করার মতো বলে গতি ছিল না। তাই প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে।

দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য দুই দলই মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে। আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণে খেলা জমে ওঠে। দুই দলই বেশ কয়েকবার আক্রমণ করে প্রতিপক্ষের গোলব্যূহে। কিন্তু গোলের দেখা পায়নি শেষ পর্যন্ত দুই দল। গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধের খেলা দেখে আনন্দ পেয়েছেন মাঠে উপস্থিত হাজার দুয়েক দর্শক। উপভোগ করেছেন আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ম্যাচ। এর মধ্যে ৫৮ মিনিটে জামালের মোমোদোর বাড়ানো বলে সোহেল মিয়া পা ছোঁয়ালেও বল ঢুকেনি জালে। ৬৩ মিনিটে বক্সের কাছে ফ্রি কিক পায় শেখ রাসেল। মিডফিল্ডার শাহেদুল আলম শাহেদের শট রক্ষণ দেয়াল টপকালেও জামালের গোলরক্ষক সামিউল সহজেই লুফে নেন। ৬৮ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে আরও একটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন  শেখ রাসেলের ফুটবলাররা। দুই অর্ধে গোল না হওয়ায় খেলা বাইলজ অনুযায়ী গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে ৪-১ গোলে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় শেখ জামাল।

সর্বশেষ খবর