বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

যত বিতর্ক কাউন্সিলরশিপ ঘিরেই

ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

যত বিতর্ক কাউন্সিলরশিপ ঘিরেই

নিরপেক্ষ ও যোগ্য সংগঠকদের নিয়ে ফেডারেশন পরিচালনার জন্য ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওবায়দুল কাদের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ১৯৯৮ সালে ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে ফেডারেশনগুলো পরিচালনা হওয়ায় বিতর্কের শেষ ছিল না। যোগ্যদের বদলে কে কোন রাজনীতির আদর্শে বিশ্বাসী তাতে গুরুত্ব দেওয়া হতো। অনিয়মের শেষ ছিল না। অভিজ্ঞ ক্রীড়া সংগঠকদের দাবি ছিল নির্বাচনের মাধ্যমে ফেডারেশনের কমিটি গড়া হোক। এতে আর বিতর্ক থাকবে না। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গন কি এখন স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতার মধ্যে চলছে? নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলেও অনিয়ম কি দূর হয়েছে? বন্ধ হয়েছে কি দলীয়করণ?

ক্রীড়াঙ্গনের চাকা সচল রাখতে ওবায়দুল কাদের নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এ জন্য তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশের খেলাধুলা পরিচালিত হবে এটাই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু সেই প্রত্যাশা কি বাস্তবায়ন হচ্ছে? অপ্রিয় হলেও সত্য নির্বাচন হওয়ার পরও ক্রীড়াঙ্গন বিতর্ক মুক্ত নয়। বরং আগের অ্যাডহক কমিটির চেয়ে এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ক্রীড়া পরিষদের। এক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ। ঘুরে ফিরে অদক্ষ ও বিতর্ক ব্যক্তিরাই কমিটিতে প্রাধান্য পাচ্ছেন।

কথা হচ্ছে কেন এই বেহালদশা? নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক উঠবে কেন? আসলে এর জন্য দায়ী ফেডারেশনই। ছোট ফেডারেশনের কথা বাদই দিলাম। ক্রিকেট ও ফুটবলের মতো বড় ফেডারেশনে যা হচ্ছে তা সত্যিই বিস্ময়কর। নির্বাচন এলেই নাকি ক্রীড়াঙ্গনে টাকা উড়ে। বড় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে যারা প্রার্থী হন বিজয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করেন। জোট সরকার আমলে ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন ঘিরে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে। নির্বাচনে হারার পর পরিচিত দুই প্রার্থী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রকাশ্যে তারা দুই কর্মকর্তার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেন। কারণ বিজয় নিশ্চিত করতে তারা এ দুই প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে প্রচুর অর্থ দেন। তারা দুই প্রার্থীকে কথা দেন অধিকাংশ ভোটার তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জিততে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু হেরে যাওয়ার পর দুই প্রার্থী তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন।

শুধু ক্রিকেট কেন, এমন হাল অনেক ফেডারেশনেই। গত বছর ফুটবলের নির্বাচন ঘিরে কতই না নাটক হয়েছে। ফুটবল পরিচালনায় ফান্ডের অভাব থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থীরা নাকি মুড়ির মতো টাকা ছিটিয়েছেন। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর এক প্রার্থী স্বীকারও করেছিলেন বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন অথচ টাকা নিয়েও তার সঙ্গে বেঈমানী করেছেন অনেকেই।

ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। সেখানে বড় বা ছোট ফেডারেশন বলে কথা নেই। তবে নির্বাচনে বড় অনিয়ম বা বিতর্কটা হচ্ছে কাউন্সিলরশিপ ঘিরেই। কাউন্সিলর মানেই প্রার্থী বা ভোটার হয়ে যাওয়া। ক্লাব বা জেলাগুলোতে কিসের ভিত্তিতে কাউন্সিলরশিপ দেওয়া হয় তা অজানাই থেকে গেছে। কাউন্সিলর কারা হবেন যাদের খেলাধুলার জ্ঞান আছে। ক্লাব বা জেলাগুলোতে তাদেরইতো কাউন্সিলরশিপ পাওয়ার কথা। ক্রীড়াঙ্গনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা কি মানা হচ্ছে। কাউন্সিলরশিপ ঠিক করে ক্লাব বা জেলা সংস্থাগুলো। তারা কি এখানে যোগ্যতা ও স্বচ্ছতাকে প্রাধান্য দেয়।

জেলার কথা বাদই দিলাম। ফুটবল ও ক্রিকেটে ঢাকার ক্লাবগুলোর কাউন্সিলরশিপ নিয়ে যা হচ্ছে তা সত্যিই হাস্যকর। জড়িত তো দূরের কথা কখনো যার ক্লাবে পা পড়েনি তিনিই কিনা সেই ক্লাবের কাউন্সিলর হয়ে যাচ্ছেন। হয়তো কেউ কেউ এজন্য ক্লাবকে সামান্য অনুদান দিচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভাব খাটানো হয়। যেখানে প্রকৃত ক্লাব সংগঠকদের কিছুই করার থাকে না।

আর জেলাগুলোয় তো আরও করুণ অবস্থা। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার পরও কাউন্সিলরশিপ পাচ্ছেন।

 খেলাধুলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন লোক নির্বাচিত হয়ে ফেডারেশনে বিতর্ক ছড়াচ্ছেন। তাইতো খেলোয়াড়রা ক্ষুব্ধ হয়ে খেলা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় ক্রীড়া পরিষদের নীরবতা কি মানায়? কাউন্সিলরশিপ তো তারাই যাচাই-বাছাই করেন। নির্বাচনে বিতর্ক এড়াতে কাউন্সিলরশিপে অভিজ্ঞ সংগঠকদের মূল্যায়ন করা কি হবে না। তাদের হাতে নাম জমা পড়বে আর অনুমোদন দিয়ে দেবে এই রেওয়াজ কী ভাঙা যায় না?

সর্বশেষ খবর