বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বৈষম্যের শিকার রেফারিরা

পেশাদার লিগে ম্যাচ ফি ২ হাজার টাকা!

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বৈষম্যের শিকার রেফারিরা

ফুটবলারের পাশাপাশি এক সময়ে তারকা রেফারির সংখ্যাও কম ছিল না। ননী বসাক, মাসুদুর রহমান, জেড আলম, মুনীর হোসেন, দলিল খান, আবদুল আজিজরা ছিলেন ৬০ থেকে ৮০ দশক পর্যন্ত ঢাকার মাঠে জনপ্রিয় রেফারি। পরবর্তীতে আর আলম, রফিকুল ইসলাম, নাজির হোসেন, মনসুর আজাদরাও হুইসেল বাজিয়ে দর্শকদের নজর কেড়েছেন। শুধু ঘরোয়া ফুটবল বললে ভুল হবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেও মুনীর হোসেনরা খ্যাতি কুড়িয়েছেন। ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশের রেফারিদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার রেকর্ড থাকলেও এখন তা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সাফ চ্যাম্পিয়ন ছাড়া বড় কোনো টুর্নামেন্টে এখন ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পান না বাংলাদেশের রেফারিরা।

বাংলাদেশে ফুটবলে পেশাদার লিগের যাত্রা ১০ বছর হতে চললো। বাফুফের প্রতিশ্রুতি ছিল ক্যাটাগরি ভাগ করে প্রফেশনাল রেফারি তৈরি করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ দেয়নি। সত্যি বলতে কি রেফারিদের নিয়ে বাফুফের কোনো মাথাব্যথা নেই। যত্ন বা কোর্সের উদ্যোগ না নেওয়ায় মাঠে রেফারিদের মান খুবই হতাশাজনক। পেশাদার লিগে প্রায় প্রতিটি ম্যাচে দলগুলো বিতর্কিত রেফারিংয়ের শিকার হচ্ছে। এগুলো ভুল না পক্ষপাতিত্ব তা বোঝা যাচ্ছে না। ফুটবলে রেফারি একটা বড় ফ্যাক্টর। ঘরোয়া আসরে ভুল বাঁশি বাজার কারণে এর প্রভাব আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ওপর পড়ছে। সাবেক ফিফা ব্যাজধারী রেফারি মনসুুর আজাদ মূলত ৮০ দশকের শেষ দিকে রেফারিংয়ে আসেন। খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বড় বড় ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব মূলত তিনিই পেতেন। তিনি বলেন, মানুষ মাত্র ভুল করে। মাঠে রেফারিদের ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আন্তর্জাতিক ফুটবলেও এ নিয়ে বিতর্ক আছে।  ৭০ বা ৮০ দশকে রেফারির কোনো ভুল সিদ্ধান্তে মাঠে লঙ্কাকাণ্ড বেধে যেত। ভুল হতে পারে কিন্তু রেফারি কারও পক্ষ নিয়ে বাঁশি বাজিয়েছে তা আমি কখনো বিশ্বাস করব না।  মনসুর ও সাবেক আরেক ফিফা ব্যাজধারী রেফারি রফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ফুটবলপ্রেমীদের চোখে রেফারিদের শুধু ভুলটাই ধরা পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের রেফারিরা কতটা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তার কি কেউ খবর রেখেছেন? ক্রিকেট এমনকি হকির অ্যাম্পাায়ারদের ফেডারেশন ক্যাটাগরি তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু ফুটবলের পেশাদারিত্বের যুগেও তা হয়নি। নেই কোনো ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। তাহলে দেশে মানসম্পন্ন রেফারি তৈরি হবে কিভাবে?

অনেকে ভাবেন রেফারিরা মাঠে নামলে অনেক টাকা পান। বর্তমান যুগে রেফারিরা ম্যাচ ফি যা পান তা শুনলে অনেকে হয়তো অবাকই হবেন।

ঘরোয়া ফুটবলের বড় আকর্ষণ পেশাদার লিগে রেফারিরা পান ২ হাজার টাকা। সহকারী রেফারি ১ হাজার ৮০০ ও ৪র্থ রেফারিরা পান ১ হাজার ৫০০ টাকা। ঢাকার বাইরে পেশাদার লিগ পরিচালনায় থাকা খাওয়ার জন্য দেওয়া হয় প্রায় ৭ হাজার টাকা। ফেডারেশন কাপে দেওয়া হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা ম্যাচ ফি। অন্য লিগের কথাতো বাদই দিলাম। দুই সাবেক রেফারিই বলেন, বর্তমান বাজারে এই ম্যাচ ফি কী সম্মানজনক? একজন রেফারি বছরে কয়টা ম্যাচ পান।

রফিক আক্ষেপ করে বলেন, এত কম টাকা তাও আবার রেফারীদের ম্যাচ ফি বাফুফে বছরের পর বছর বাকি রাখছে। এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে? রফিক ও আজাদ বলেন, ক্রিকেট অ্যাম্পায়ারদের ক্যাটাগরি ভাগ করে সম্মানজনক বেতন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রিমিয়ার লিগের জন্য ম্যাচ ফি প্রায় ৭ হাজার টাকা। কথায় কথায় রেফারিদের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু দুর্দশা নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেন না। তাই দেশে এখন রেফারি সংকট চলছে। আসবে কেন বলেন, এই ম্যাচ ফি দিয়ে তাদের কি হয়। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে হয়তো সামনে রেফারিই খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর