শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাড়ছে ফেডারেশন ডুবছে খেলা

একি করছে ক্রীড়া পরিষদ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাড়ছে ফেডারেশন ডুবছে খেলা

স্বাধীনতার পর দেশে সরকার স্বীকৃত ফেডারেশনের সংখ্যা ছিল হাতগোনা বড় জোর ৭ কিংবা ৮। ওই সময় তো ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ছিল না। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত জাতীয় নিয়ন্ত্রণ বোর্ডই ছিল ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক সংস্থা। এখনো ক্রীড়াপরিষদ আছে, কিন্তু মূল দায়িত্ব পালন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। ১৯৭৯ সালেই আলাদাভাবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই থেকে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে অভিভাবক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীই। স্বাধীনতার পর শিক্ষামন্ত্রীই ছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান। আলাদা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও ক্রীড়াঙ্গনের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ফেডারেশনের অনুমোদন, বাজেট তৈরি, অনুদান, অবকাঠামো নির্মাণ সবকিছুই ক্রীড়া পরিষদের ওপর নির্ভর করে। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীই আবার এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।

যেখানে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আছে সেখানে আবার আলাদাভাবে ক্রীড়া পরিষদের দরকার আছে কি? এই প্রশ্নটি এখন নয়, অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। ক্রীড়াঙ্গনের তদারকির জন্যই ১৯৭৯ সালে আলাদাভাবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহলে ক্রীড়া পরিষদের প্রয়োজনটা কতটুকু? ক্রীড়াঙ্গনের এত কাজ যে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। সাদেক হোসেন খোকা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ক্রীড়া পরিষদ বিলুপ্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চ মহলের অনুমতি না পাওয়ায় সম্ভব হয়নি। ক্রীড়াঙ্গনের যদি উপকারে আসে তাহলে তো ক্রীড়া পরিষদ থাকতেই পারে? প্রশ্ন উঠেছে ক্রীড়া পরিষদ কতটা স্বার্থক। দেশে এখন ক্রীড়া ফেডারেশনের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। বাংলাদেশ খেলাধুলায় কি এমন উন্নত দেশ যে এতগুলো ফেডারেশনের প্রয়োজন? অনেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এসেছেন আর গেছেন কিন্তু ফেডারেশন বৃদ্ধির প্রয়োজন নিয়ে কেউ ভাবেননি। ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি দেশের তিন জনপ্রিয় খেলা। ক্রিকেট নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশ এখন অন্যতম শক্তিশালী দল। কিন্তু বাংলাদেশে তো আরও কটি খেলায় এগিয়ে যাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা ছিল। ১৯৮৫ সালে সাফ গেমসে শাহ আলম দ্রুততম মানব হয়ে আভাস দিয়েছিলেন অ্যাথলেটিকসে বাংলাদেশের পক্ষে সুনাম কুড়ানো সম্ভব। ১৯৯৩ সালেও বিমল তরফদার দ্রুততম মানব। ১৯৯০ সালে সাফ সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে মোশারফ হোসেন একাই পাঁচটি সোনা জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। ১৯৯০ কমনওয়েলথ গেমস থেকে বাংলাদেশ সাফল্যের পতাকা উড়ায়। আতিক ও নিনির এই সাফল্য দেশ জুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। ২০০২ সালে সোনা জেতেন শুটার আসিফ। অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার ও শুটিং ঘিরে প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়ার মতো। দাবায় উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে নিয়াজ মোর্শেদ প্রমাণ দিয়েছিলেন দাবার চালে বাংলাদেশও কম যাবে না। পরবর্তীতে আরও চারজন গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছেন।

কুস্তি, বক্সিং, ভারোত্তোলনেও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু উপযুক্ত ট্রেনিং ও সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এগিয়ে যাওয়ার বদলে এসব সম্ভাবনাময় খেলা মরতে বসেছে। কিছু বললেই ফেডারেশনের কর্মকর্তারা বলেন, করব কি ফান্ড তো নেই। কথা হচ্ছে ফান্ডের সংকট পড়বে কেন? ১৯৭৫ সালে মারদেকা কাপ খেলতে ফুটবলাররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি সেসব খেলাকে গুরুত্ব দেব যেখানে দেশের সুনাম বাড়বে। বঙ্গবন্ধুর সেই কথা কি কেউ মনে রেখেছেন। সমানে ফেডারেশন বাড়ানো হচ্ছে। যেসব খেলা সম্পর্কে কারও ধারণা নেই সেসবও ফেডারেশনের স্বীকৃতি পাচ্ছে। এতে করে অনুদানের মোটা অঙ্ক অপচয় হচ্ছে। ফুটবল, ক্রিকেট ও হকিতো এমনিই প্রাধান্য পাবে। কিন্তু অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, শুটিং, বক্সিং, কাবাডি, কুস্তি, অ্যারচারি ও দাবায় উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকার পরও কেন এসব খেলোয়াড়ের দিকে আলাদাভাবে নজর দেওয়া হবে না? ব্যাঙের ছাতার মতো ফেডারেশনের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ হচ্ছে কি? সম্ভাবনাময় খেলার নজর না দেওয়ায় এতটা বেহাল দশা যে সাউথ এশিয়ান গেমসে সোনা জেতাটা ভাগ্যে পরিণত হয়েছে। যুব ও উপক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছাড়া ফেডারেশন স্বীকৃতির অনুমতি মিলে না। তারা যখন স্বাক্ষর করেন তখন কি একটুও ভাবেন না দেশের খেলাধুলায় লাভ না ক্ষতি হচ্ছে। দেখা মিলছে না আতিক, নিনি, আসিফ, সাবরিনাদের মতো শুটারের। শাহ আলম ও বিমল তরফদার আর কি সৃষ্টি হবে। সাঁতারে আরেক মোশাররফ হোসেনের কখনো দেখা মিলবে কি? শিলা, মাবিয়া, শাকিলরা নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বিদেশের মাটিতে লাল সবুজের পতাকা উড়াচ্ছেন। যুব বিশ্বকাপ অ্যাথলেটিকসে কিশোর জহির রায়হান সেমিতে উঠে চমক দেখিয়েছেন। দাবায় আছেন অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়। এদের দিকে নজর দেওয়াটা কি ক্রীড়া পরিষদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। ফেডারেশন বৃদ্ধি ও অবকাঠামো নির্মাণ বা সংস্কার করে লাভটা কি? কেউ বলে লাভ না থাকলে জেনেশুনেও ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ খেলাধুলাকে প্রাধান্য দিচ্ছে না কেন? খেলাধুলার উন্নয়নের কথা ভেবে ২০ তলা টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে কি ক্রীড়াবিদদের কোনো উপকারে এসেছে? দুর্নীতিমুক্ত করতে ওবায়দুল কাদের ক্রীড়া পরিষদ ভবনের রং সাদা করেন। কিন্তু কর্মকর্তাদের মন কি আসলেও সাদা হয়েছে?

সর্বশেষ খবর