সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

নাসিরের মনজুড়ে শুধুই ক্রিকেট

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নাসিরের মনজুড়ে শুধুই ক্রিকেট

আড়ালে ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকেই বলেন, নাসির হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ক্রিকেটার! বিষয়টি যেমন সত্যিকার অর্থে সত্যি নয়। আবার সত্যিও। কিভাবে? বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নাসিরের মতো কোনো ক্রিকেটারকে নিয়ে এতটা সরব হয়নি ফেসবুক। ফেসবুকের জনপ্রিয় স্লোগান- ‘নাসির কেন দলে নেই’ কিংবা ‘নাসিরকে দলে চাই’। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, নাসির নিজে ফেসবুক নিয়ে খুব সরব নন। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ সামনে রেখে ১০ জুলাই থেকে চলছে কন্ডিশনিং ক্যাম্প। সেখানে ২৯ ক্রিকেটারের একজন নাসির। গতকাল ক্যাম্প চলাকালীণ অবস্থায় মিডিয়ার মুখোমুখিতে ফেসবুক, পত্রিকা, সমালোচনা, বিতর্ক- এসব বিষয়ে কথা বলেন দেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের অন্যতম নাসির হোসেন। মিডিয়ার মুখোমুখিতে ১৭ টেস্টে ৯৭১ রান ও ৫৯ ওয়ানডেতে ১২৬২ রান ও ৩১ টি-২০ ম্যাচে ৩২০ রান করা নাসির স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, ফেসবুক নিয়ে তিনি সরব নন। পত্রিকা পড়েন না নিয়মিত এবং সমালোচনা কিংবা বিতর্ক নিয়ে মাথা ঘামান না। মনজুড়ে শুধুই ক্রিকেট এবং ক্রিকেটই তার ধ্যানজ্ঞান। জাতীয় দলে ফিরে নিজের অবস্থান শক্ত করাই এখন মূল পরিকল্পনা।  

২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর আগমন নাসিরের। এসেই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে দলের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেন। কিন্তু সময়ের চোরাস্রোতে দলের চাপ সামাল দিতে না পেরে একসময় ব্রাত্য হয়ে উঠেন তিনি। অনেকেই অবশ্য বলে থাকেন, চণ্ডিকা হাতুরাসিংহে কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর নাসিরের ক্রিকেটভাগ্যটা পাথরচাপা পড়েছে। এজন্য অবশ্য তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকেও অনেকে দায়ী করেন। ফলে দলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। অবশ্য পারফরম্যান্সও যে আহামরি ছিল, সেরকমটা নয়। ৫৯ ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি একটি এবং হাফসেঞ্চুরি ৬টি। সর্বশেষ হাফসেঞ্চুরি করেছেন ৩৫ ওয়ানডে আগে, ২০১৩ সালের ৮ মে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ১৭ টেস্টে সেঞ্চুরি একটি এবং হাফসেঞ্চুরি একটি। জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেন ডাবলিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ। ৪৭ রানে ২ উইকেট নিলেও ব্যাট করতে পারেননি নাসির। ঘরের মাটিতে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেন গত বছরের ১৬ অক্টোবর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সর্বশেষ টেস্ট খেলেন ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এরপর আর সুযোগ পাননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে আশা জাগিয়েছেন জাতীয় দলে ফেরার। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ দিয়েই ফিরতে চাইছেন দলে, ‘চেষ্টা করছি জাতীয় দলে ফেরার। এই কন্ডিশনিং ক্যাম্প দিয়ে নিজের ফিটনেস বাড়িয়ে ফিরতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই থাকবে।’

জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর নাসিরকে ‘দ্য ফিনিশার’ বলা হয়। তিনিও চেষ্টা করছিলেন নামের প্রতিদান রাখতে। কিন্তু মাঠের বাইরের বিতর্কগুলো এতটাই আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলছিল তাকে, শেষ পর্যন্ত দল থেকে ছিটকে পড়েন। যদিও ফিরতে চেষ্টার কমতি নেই তার। তারপরও পারফরম্যান্সগুলো আড়ালে পড়ে গেছে সমালোচনার জন্য, ‘যাদের নাম হয়, তাদের বদনামও হয়। এটাই সত্যি। আপনি আমাকে এক চোখে দেখবেন। আরেকজন অন্য চোখে দেখবে। আমার চোখ দিয়েও তো আমি সবাইকে এক চোখে দেখতে পারব না।’ সমালোচনাগুলো সবসময়ই আলোচনায় ছিল। তাই বলে জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি। বরং দলে সুযোগ না পাওয়ায় জনপ্রিয়তার গ্রাফ উপরেই উঠেছে। আর নাসিরও মনে করেন, জনপ্রিয়তা আসে সমালোচনার পথ ধরেই। তবে সমালোচনা নিয়ে তিনি বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন। কানেও নেন না। এমনকি পত্রিকাও পড়েন না, ‘সত্যি বলতে ফেসবুক আমি তেমন অনুসরণ করি না। পত্রিকাও পড়ি না। এসব জায়গায় শুধু ব্যক্তিগত খবর। আপনি যখন খেলাধুলা করেন, তখন এসব সংবাদ আপনার মাথায় থাকে না।’

বদনাম, সমালোচনা কিংবা জনপ্রিয়তা- সবই এখন নাসিরের সঙ্গে লেপ্টে আছে। এসব নিয়ে ভাবতে নারাজ দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। নাসির চাইছেন, জাতীয় দলে ফিরতে এবং নিজের জায়গাটা আবার পোক্ত করতে। 

সর্বশেষ খবর