বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুটবলে বিপ্লব ঘটাতে চায় চীন

রাশেদুর রহমান

ফুটবলে বিপ্লব ঘটাতে চায় চীন

ইতিহাস বলে, খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে চীনের হান রাজবংশের আমলে ফুটবলের প্রাথমিক ধারণা গড়ে উঠেছিল। সে সময় খেলাটার নাম ছিল ‘চুজু’। চীনের পার্শ্ববর্তী রাজ্য কোরিয়া আর জাপানেও খেলাটার প্রচলন ছিল। গোলাকৃতি চামড়ার থলের মধ্যে পাখির পালক পুরে দিয়ে সিল করা হতো। তারপর পায়ে খেলা হতো এটা। মূলত সেনাবাহিনীর এক্সারসাইজের জন্যই এই খেলা ব্যবহার হতো। ফুটবলের প্রাথমিক ধারণা চীনের ‘চুজু’ থেকেই এসেছে বলে অনেকে মনে করেন এখন। যদি তাই হয়, চীনকে ফুটবলের জনক বলা যায়!

কিন্তু ফুটবল ইতিহাসে চীনের বড় করুণ দশা। নিজেদের একমাত্র বিশ্বকাপ তারা খেলেছে ২০০২ সালে। সেবার তারা গ্রুপপর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছিল। ‘চুজু’র উত্তরাধিকার নিয়ে ফুটবল অনেকদূর এগিয়ে গেলেও চীন পড়ে আছে বহু পিছনে। অন্তত উনিশ শতক পর্যন্ত তেমনটাই ছিল। বিশ শতকের শেষার্ধে তারা ফুটবলের প্রতি মোটামুটি মনোযোগী হয়। এএফসি এশিয়ান কাপে দুইবার রানার্সআপ হয় চীন (১৯৮৪ ও ২০০৪)। এছাড়াও সেমিফাইনাল খেলে বেশ কয়েকবার। এতকিছুর পরও ফুটবল বিশ্বে পরাশক্তিদের সঙ্গে তুলনা করতে চীনের এখনো বহু দেরি। এমনকি জাপান আর ইরানের সঙ্গেও তুলনা করা চলে না তাদের। তবে চীনের ফুটবল বুলেট গতিতেই এগিয়ে চলেছে।

২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিককে কেন্দ্র করে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিল চীন। সেই অলিম্পিকে গ্রুপপর্ব পাড়ি দিতে না পারলেও চীনারা এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছিল। একবিংশ শতকের শুরু থেকেই ফুটবলকে আমূল বদলে দেয় তারা। অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়। এক যুগের মধ্যে চীনজুড়ে ৫০ হাজার ফুটবল স্কুল গড়ে উঠে। পুরনো স্টেডিয়ামগুলোর সংস্কার হয়। নতুন নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়। ফুটবলে স্পন্সরশিপ বেড়ে যায়। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হয় চীনা সুপার লিগ। পেশাদার এই ফুটবল লিগে ইউরোপ আর ল্যাটিন আমেরিকান ফুটবলাররা দল বেঁধে ছুটে আসেন। এখানে খেলে গেছেন দিদিয়ের দ্রগবা আর নিকোলাস আনেলকার মতো তারকারা। এখনো খেলছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা কার্লোস তেভেজ, ইজেকুয়েল লেভেজ্জি, ব্রাজিলের অস্কার, পলিনহো, হাল্ক, পর্তুগালের রিকার্ডো আর আইভরি কোস্টের গারভিনহোরা। এর মধ্যে আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা কার্লোস তেভেজকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বেতন দিচ্ছে সাংহাই গ্রীনল্যান্ড শেনহুয়া। এখানে তার বেতন সপ্তাহে ৬ লাখ ৩৪ হাজার পাউন্ড। মেসি আর রোনালদোর চেয়েও অনেক বেশি তেভেজের বেতন। প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করায় চারদিক থেকেই ভালো মানের ফুটবলাররা ছুটে যাচ্ছেন চীনা লিগের দিকে। আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলারদের সঙ্গে খেলে খেলে নিজেদের উন্নতিটা ভালোই করছেন চীনা ফুটবলাররা। চীনা সুপার লিগ শুরু হওয়ার পর ১৩ বছর কেটে গেছে। এখনো চীনের সাফল্য বলতে গেলে তেমন কিছুই নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা ফুটবলের ইউরোপীয় আর ল্যাটিনীয় কৌশল রপ্ত করছে। জাপান যেমন ১৯৭০ আর ১৯৮০’র দশকে ফুটবলে মন দিয়ে এর ফলটা পেতে শুরু করেছে দুই দশক পর। চীনেরও হয়ত তেমনই সময় লাগবে। কিন্তু তারা এগিয়ে চলেছে। ৫০ হাজার ফুটবল স্কুলের মধ্যে বেড়ে উঠা তরুণ ফুটবলাররাই একদিন চীনকে ফুটবল বিশ্বে এক মহাশক্তি রূপে উপস্থাপন করবে হয়ত।

সর্বশেষ খবর