শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

পাঁচ তারকার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার

পাঁচ তারকার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার

মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ —বাংলাদেশের ক্রিকেটে ধূমকেতুর মতো তাদের আগমন। কিন্তু শুকতারার মতো এখনো জ্বল জ্বল করে জ্বলছেন। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করতে এই পাঁচ ক্রিকেটার রেখেছেন অসামান্য ভূমিকা। তাদের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে লিখেছেন— মেজবাহ্-উল-হক

মাশরাফি বিন মর্তুজা

বাংলাদেশ দলের বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র মাশরাফি। নড়াইল এক্সপ্রেস প্রথম জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান ২০০১ সালের ৯ জুলাই। কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তার। একই বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম রঙিন পোশাকে খেলতে নামেন মাশরাফি। টি-২০ অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালের নভেম্বরে। তবে বর্তমানে মাশরাফি কেবল মাত্র ওয়ানডে ম্যাচ খেলছেন। টি-২০ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিয়েছেন। আর টেস্ট খেলছেন না।

১৬ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ম্যাশ এ পর্যন্ত ১৭৯টি ওয়ানডে খেলেছেন। শিকার করেছেন ২৩২ উইকেট। মাশরাফির সেরা বোলিং ফিগার ৬/২৬, ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিরুদ্ধে নাইরোবিতে। ব্যাট হাতে একটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। ২০০৬ সালে ঢাকায় স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।

৩৬ টেস্টে মাশরাফি নিয়েছেন ৭৯ উইকেট। ব্যাট হাতে তিনটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে। ৫৪ টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৫৩ উইকেট নিয়েছেন।

অধিনায়ক হিসেবেও দারুণ সফল মাশরাফি। তিনি টেস্টে মাত্র এক ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৯ সালের ওই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ৪৩ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ২৬ ম্যাচ জয়। টি-২০তে মাশরাফির নেতৃত্বে ২৮ ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ১০টি। টেস্ট ও টি-২০ ছাড়লেও এখনো ওয়ানডের অধিনায়ক মাশরাফি। তার নেতৃত্বেই ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং চলতি বছরে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। টাইগার ক্রিকেটের অন্যতম রূপকার তিনি।  দীর্ঘ ১৬ বছর থেকে বাংলাদেশ দলকে নিরলসভাবে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন।

 

সাকিব আল হাসান

বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। আইসিসির অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে এক সঙ্গে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটের শীর্ষ স্থান দখল করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

সাকিব ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে নাম লেখান। ২০০৬ সালের ৬ আগষ্ট হারাতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন তিনি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০০৭ সালের মে মাসে। চট্টগ্রামে ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক হয় তার। টি-২০তে অভিষেক ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে।

সাকিবের ক্রিকেট ক্যারিয়ার বর্নাঢ্য। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী তিনি। দলে একাই যেন দুই ক্রিকেটারের ভূমিকা পালন করেন। সাকিব দলে থাকলে পুরো দলই যেন মানসিকভাবে চাঙ্গা হয়ে যায়।

এ পর্যন্ত ১৭৭টি ওয়ানডে খেলেছেন সাকিব। ৩৪.৮৪ গড়ে করেছেন ৪৯৮৩ রান।  ৭টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ৩৪টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। উইকেট নিয়েছেন ২২৪টি।

 ৪৯ টেস্টে সাকিব ৪০.৯২ গড়ে করেছেন ৩৪৭৯ রান। ৫টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ২১টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। একটি ডাবল সেঞ্চুরিও রয়েছে তার। চলতি বছর ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২১৭ রানের ইনিংস খেলেছেন। ওই ম্যাচে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের ঐতিহাসিক জুটি গড়েছিলেন। উইকেট নিয়েছেন ১৭৬টি। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে ৭ উইকেট নিয়েছেন।

৫৯ টি-২০তে করেছেন ১২০৮ রান। সেঞ্চুরি নেই, তবে হাফ সেঞ্চুরি ৬টি।  উইকেট নিয়েছেন ৭০টি। টেস্টে ৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে একটি জয় এনে দিয়েছেন। সাকিবের সময় ৫০ ওয়ানডেতে টাইগাররা জয় পেয়েছে ২৩টি।  তার নেতৃত্বে চার টি-২০ ম্যাচ খেলে কোনো জয় পায়নি বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও টি-২০ দলের অধিনায়ক হয়েছেন সাকিব। তারপর এখন পর্যন্ত কোনো টি-২০ ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ।

 

মুশফিকুর রহিম

জাতীয় দলের ব্যাটিং নিউক্লিয়াস। তাকে ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ডও বলা হয়। মুশফিকের টেস্ট অভিষেক হয় ঐতিহাসিক ক্রিকেট ভেন্যু ইংল্যান্ডের লর্ডসে। ২০০৫ সালের ২৬ মে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে সাদা পোশাকে প্রথম খেলতে নামে মুশফিক।

ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালের ৬ আগষ্ট হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। একই বছরের নভেম্বরে ওই জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধেই খুলনায় টি-২০ অভিষেক।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মুশফিক উইকেটের পেছনে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ৫৪ টেস্টের ক্যারিয়ারে মুশফিক ৩৫.৪৮ গড়ে করেছেন ৩২৬৫ রান। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ২০১৩ সালের মার্চে গলেতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই কীর্তি গড়েছিলেন মুশফিক। সব মিলে টেস্টে তার ৫টি সেঞ্চুরি, তবে ১৭টি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছেন তার।

১৭৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মুশি ৩২.১০ গড়ে করেছেন ৪৩৯৮ রান। ৪টি হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ২৬টি হাফ সেঞ্চুরি। ৫৯ টি-২০তে করেছেন ৭২৬ রান। টি-২০তে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার।

মুশি অধিনায়ক হিসেবেও সাফল্য দেখিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ৩০ টেস্টে ৬টি জয় এবং ১৫টি ড্র করেছে বাংলাদেশ। ৩৭ ওয়ানডের মধ্যে জয় ১১টি এবং ২৩ টি-২০ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে ৮টি জয় এনে দিয়েছেন তিনি।  এখন শুধু টেস্টে জাতীয় দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মুশফিক।

 

তামিম ইকবাল

বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। ব্যাটিংয়ের প্রায় সব রেকর্ডই তার দখলে। টেস্ট ও ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক তিনি। টি-২০র বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ন তামিম।

ড্যাসিং ওপেনারের ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে। একই বছরের সেপ্টেম্বরে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিরুদ্ধে টি-২০ অভিষেক। তামিমের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডানেডিনে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি।

তামিম ১৭৩ ওয়ানডেতে ৩৪.৩৮ গড়ে করেছেন ৫৭৪৩ রান। ৯টি সেঞ্চুরির সঙ্গে রয়েছে ৩৮টি হাফ সেঞ্চুরি। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক তিনি। সবচেয়ে বড় স্কোরটিও এসেছে তামিমের ব্যাট থেকেই। ২০০৯ সালের ১৬ আগষ্ট বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ১৫৪ রানের ইনিংস খেলেছেন এই ওপেনার।

৪৯ টেস্টে ৩৯.৫৩ গড়ে করেছেন ৩৬৭৭ রান। ৮ সেঞ্চুরির সঙ্গে ২২টি হাফ সেঞ্চুরি। একটি ডাবল সেঞ্চুরিও রয়েছে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে খুলনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২০৬ রানের ইনিংস খেলেন।

৫৬ টি-২০তে তামিমের রান ১২০২। গত বিশ্বকাপে ধর্মশালায় ওমানের বিরুদ্ধে অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। এছাড়া চারটি হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে তার।

 

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ

একদিন আগেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার ১০ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। টেস্টে অভিষেক হয়েছে আরও বছর দুয়েক পড়ে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম খেলেন। টি-২০তে অভিষেক হয় ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে নাইরোবিতে কেনিয়ার বিরুদ্ধে।

এখনো তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটই চালিয়ে যাচ্ছেন মাহমুদুল্লাহ। বোলার হিসেবে জাতীয় দলে অভিষেক হলেও ময়মনসিংহের এই ক্রিকেটার এখন অন্যতম ব্যাটিং ভরসা।

১৪৫ ওয়ানডেতে মাহমুদুল্লাহ ৭০ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৩৪.৬৭ গড়ে করেছেন ৪১৪৮ রান। তিনটি সেঞ্চুরি ও ১৭টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে তার। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে ছিলেন তিনি।

৩৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩০.১৫ গড়ে করেছেন ১৮০৯ রান। সেঞ্চুরি একটি, তবে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ১৩টি। উইকেট নিয়েছেন ৩৯টি। ৫৮ টি-২০তে রিয়াদ মোট ৮১০ রান করেছেন, উইকেট নিয়েছেন ২২টি।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই অগ্রযাত্রায় বড় অবদান এই পাঁচ ক্রিকেটারের। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে এখনো তারা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। মহাকালের ফাঁদে আটকা পড়ে হয়তো তাদের সবাইকেই অবসর নিতে হবে—কিন্তু বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন ক্রিকেটাতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর নাম।

সর্বশেষ খবর